অনলাইনপড়াশোনা
অনলাইন পড়াশোনা
সৌজন্যে : Anandabazar Patrika

দেশে অতিমারীর প্রভাবে বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আজ সর্বত্রই অনলাইনের মাধ্যমে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই অনলাইন ক্লাসের মধ্যে দিয়েই চলছে পড়াশোনা। বাড়িতে বসেই ভার্চুয়াল ভাবেই ক্লাস করছে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু যে সব নবাগত ছাত্রছাত্রী যারা এই প্রথম স্কুলের গন্ডিতে পা বাড়াচ্ছে তারাও আজ ভার্চুয়াল ভাবে অভিভাবকদের ফোন অথবা কম্পিউটারের সাহায্যে পড়াশোনা করছে। নির্দিষ্ট সময়ে যন্ত্রের সামনে বসে ক্লাস করছে নিয়মিত।

কিন্তু তারা সেই ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো কোথাও হারিয়ে ফেলছে অনলাইনের যুগে। মুখোমুখি বসে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা আর ভার্চুয়ালি পড়াশোনার মধ্যে বিস্তর ফারাক। এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। ছাত্রছাত্রীদের সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও এই ভার্চুয়াল পদ্ধতি অনেকটা বেদনাদায়ক বটে। কিন্তু যতদিন না পর্যন্ত দেশের এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হচ্ছে ততদিন আমাদের এই অনলাইন ক্লাসই ভরসা।এই অনলাইন পড়াশোনার জন্য শিশুদের যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো একটু দেখা যাক-

১.বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও নিয়মিত উপস্থিতি :

school 1
সৌজন্যে: Bangla

এই সময়ের নবাগত স্কুল পড়ুয়ারা যারা প্রথম থেকেই দেখছে বাড়িতে বসেই অনলাইন ক্লাস করছে তারা অনেক কিছু অনুভবকে উপলব্ধি করতে পারছে না। শৈশববেলায় প্রথম স্কুলের গন্ডিতে পা দিলে যে অনুভব আমাদের সকলের হয়েছে সেই আনন্দ অনুভবকে কোথাও তারা মিস করে যাচ্ছে। ছোটবেলায় বাড়ি ছেড়ে প্রথম মা বা বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার একটা যে আনন্দ,উত্তেজনা ,ভয় থাকে তা তারা অনুভব করতে পারছে না।

প্রত্যেক দিন ভালো না লাগলেও মা বা বাবা জোর করে স্কুলের গেটের সামনে নামিয়ে দেওয়ার যে একটা অনুভূতি সেটাই আলাদা। তারপর বিদ্যালয়ে সবার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ, শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে প্রথম আলাপ তাদের ভালোবাসা স্নেহ তারা উপলব্ধি করতে করতে পারছে না অনলাইনের যুগে। শুধু ছাত্রছাত্রী নয় শিক্ষক শিক্ষিকারাও ছোট্ট ছোট্ট খুঁদে শিশুদের সামনাসামনি দেখতে পাচ্ছে বলে তারাও খুবই দুঃখিত।

২.মুখোমুখি বসে পড়াশোনা :

highschoolclass2
সৌজন্যে : Home Don Bosko High School

শিক্ষক – শিক্ষিকাদের সামনাসামনি বসে চোখেচোখ রেখে পড়াশোনার মজাটাই আলাদা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে স্বস্নেহে যত্নসহকারে ছোটো ছোটো শিশুদের বুঝিয়ে ধরে ধরে পড়ানোর মজাটাই আলাদা যা এই অনলাইনের মধ্যে হয়না। অনলাইন যুগে সব কিছু হলেও অনেক জিনিস অধরা থেকেই যাই। ভার্চুয়াল ভাবে পড়াশোনার মধ্যে শিক্ষক শিক্ষিকারাও বুঝে উঠতে পারছে না তারা সত্যি সত্যি বিষয় গুলো বুঝছে কী না?

বাড়িতে বসে পড়াশোনা আর নিয়মমাফিক ক্লাসে সবার সাথে বসে পড়াশোনা একেবারে আলাদা। ক্লাসে বসে পড়াশোনা করলে অনেক সময় বিভিন্ন মজার ছলে শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়ার ফলে তাদের মনোযোগ তৈরী হয়। কিন্তু অনেক সময়ই শিশুদের বাড়িতে বসে ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু মা বাবার বকুনির ভয়ে তারা করছে। আর সেই বিরক্তি ভাব নিয়ে তারা কতটা শিখতে পারছে সেটাও একটা প্রশ্নের মুখোমুখি আমাদের ফেলে দেয় ?

৩.মেলামেশার ক্ষমতার অভাব :

images?q=tbn:ANd9GcR81LMiFYHxy oEYLYW3NXKnHOhmx MYd7qjQ&usqp=CAU
সৌজন্যে: Bangla Hunt

শিশুরা বাড়িতে থেকে থেকে বাড়ির পরিবেশের সাথে অভ্যস্থ উঠছে ফলে তারা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেলামেশা করা এবং নিজের বন্ধুবান্ধব তৈরী করতে অক্ষম হয়ে পড়ছে। বাইরে কারুর সাথে মেলামেশা করতে পারছে না। তার ফলে মেলামেশার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। স্কুলের এই সময়ে নতুন নতুন বন্ধুত্ব শুরু হয়। তাদের সাথে খেলাধুলা ,মজা , আনন্দ এসব থেকে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে।

৪.সংস্কৃতি :

সৌজন্যে: youtube

স্কুলে পঠন পাঠনের সাথে সাথে আমরা কিছু আলাদা সংষ্কৃতিও শিখি। যেমন স্কুলের প্রবেশ করার পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা তারপর স্কুলের প্রোগ্রামে নানা বিষয় উপস্থাপনা করা যেমন নাচ,গান,আবৃত্তি,ড্রয়িং ইত্যাদি। এই সব বিষয় থেকে শিশুরা বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এবং তাদের একটি ক্ষতিও হচ্ছে বলা যেতে পারে।

৫.খেলাধুলা :

সৌজন্যে : Medium

স্কুল জীবনে ছাত্রছাত্রীদের কাছে খেলাধুলা একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়। খেলাধুলার মধ্যে শিশুদের মন ও শরীর দুইই ভালো থাকে। অনেকে বাড়িতে খেলাধুলা করছে কিন্তু এই স্কুল জীবনে সমস্ত বন্ধুদের সাথে নিয়মিত মাঠে খেলাধুলার মজাই একটা অন্যরকমের মজার বিষয়। তাই অনলাইনে পড়াশোনার ফলে এটাও একটা বড়ো ক্ষতি।

আমরা জানি না এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে আমরা কবে মুক্তি পাবো। আর কত দিন এইভাবে অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা করতে হবে আমাদের। তবুও আশা রাখা যাই খুব তাড়াতাড়ি আমাদের পরিবেশ ঠিক হয়ে যাবে এবং আমরা বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারবো।