শিখ গুরু বাবা রাম সিং-য়ের মৃত্যু সম্প্রতি কৃষক আন্দোলনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পাঞ্জাব হরিয়ানা সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে অসংখ্য কৃষক নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য পারি দিয়েছেন দিল্লির উদ্দেশ্যে। অন্নদাতা কৃষকদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই। বলা বাহুল্য, আন্দোলনকারী কৃষকরা অধিকাংশই শিখ ধর্মাবলম্বী।
দিল্লির কৃষক আন্দোলন আজ ২২ দিনে পড়ল। শীতের শুরুতে দিল্লির কনকনে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই সীমান্ত এলাকায় ঠায় বসে আছেন লক্ষ লক্ষ কৃষক। দাবি একটাই, কৃষি আইনের প্রত্যাহার। এই কদিনে কৃষকদের সমর্থনে সুর চড়িয়েছেন অনেকেই। সরকারের তরফ থেকেও দফায় দফায় আলোচনায় বসা হয়েছে কৃষকদের সঙ্গে। কিন্তু সমস্যার সমাধান সূত্র মেলেনি এখনও। এমতাবস্থায় হঠাৎই এক মর্মান্তিক খবরে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় গতকালের সকাল। শিখ গুরু বাবা রাম সিং বিক্ষোভ স্থলে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই শিখ গুরুর পরিচয়, আত্মহত্যার কারণ এবং মর্মান্তিক ঘটনার যাবতীয় খুঁটিনাটি।
শিখ গুরু রাম সিং কে?
সন্ত বাবা রাম সিং মূলত একজন ধর্ম প্রচারক। তিনি হরিয়ানার কারনালের বাসিন্দা। ৬৫ বছর বয়সী এই গুরু দীর্ঘদিন ধরেই শিখ সম্প্রদায়ের মাঝে ধর্মপ্রচার করে আসছেন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা জুড়ে তাঁর বহু ভক্ত সমর্থক রয়েছেন। শুধু তাই নয়, ওই দুই রাজ্যের বাইরেও শিখ সমাজে তাঁর জনপ্রিয়তার কথা শোনা যায়। এখানেই শেষ নয়, বহু শিখ ধর্ম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বাবা রাম সিং। তিনি হরিয়ানা এসজিপিসি বা শিখ গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি (SGPC)-র অন্যতম সদস্যও ছিলেন।
শিখ গুরু রাম সিং আত্মহত্যা করলেন কেন?
শিখ গুরু রাম সিং নিজের বৈধ পিস্তল দিয়েই গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তেমনটাই জানা গেছে সূত্রের খবরে। দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমান্তে তিনি আত্মহত্যা করেন। তাঁর আত্মহত্যার কারণ হিসেবে যা জানা গেছে, তা কিন্তু রীতিমতো উদ্বেগজনক। কৃষকদের দুরবস্থা আর সহ্য করতে পারেন নি তিনি। পাঞ্জাব হরিয়ানার শিখ কৃষকরা যেভাবে দিনের পর দিন ঘর বাড়ি ছেড়ে দিল্লির রাস্তায় পড়ে আছেন, অথচ তাঁদের কথা শুনছেন না, এই পরিস্থিতি উদ্বিগ্ন ও হতাশ করে তুলেছিল গুরু রাম সিংকে। সে কারণেই নিজের প্রাণ দিয়েছেন তিনি। মৃত্যুর আগে একটি সুইসাইড নোটও লিখেছেন শিখ গুরু রাম সিং। যদিও এই চিঠির সত্যতা যাচাইয়ের কাজ এখনও চলছে।
https://www.banglakhabor.in/wp-admin/post.php?post=9457&action=edit
শিখ গুরু রাম সিংয়ের সুইসাইড নোট:
শিখ গুরু রাম সিংয়ের সুইসাইড নোটটি পাওয়া গিয়েছে তাঁর মৃতদেহের পাশেই। এটি পাঞ্জাবি ভাষায় হাতে লেখা একটি চিঠি। এই চিঠি অনুযায়ী কৃষকদের “যন্ত্রণা” সহ্য করতে না পেরে তিনি নিজের উপর গুলি চালিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। শেষ চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “আমি দেখলাম নিজেদের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য কৃষকরা রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের অবস্থা সংকটজনক। সরকার তাঁদের প্রতি সুবিচার করছেন না, এটা দেখে আমি খুবই ব্যথিত এবং আশাহত। এটা একটা অপরাধ। এভাবে পীড়ন করা যেমন পাপ, পীড়ন সহ্য করাও তেমন পাপ।
কৃষকদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে, তাঁদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে কেউ কিছুই করছে না। অনেকে আবার নিজেদের পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সরকারের এই পীড়নের প্রতিবাদ জানিয়ে এই অধম আত্মবলিদান করছে। এটাই কৃষকদের সমর্থনে আমার নিবেদন।”
শিখ গুরু রাম সিংয়ের আত্মহত্যার প্রভাব:
শিখ গুরু রাম সিংয়ের এই মৃত্যুতে কার্যত শোকস্তব্ধ পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শিখ সম্প্রদায়। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সহ অন্যান্য সরকার বিরোধী নেতারা তো বটেই, পাঞ্জাব হরিয়ানার শিখ সম্প্রদায়ের অনেকেও মৃত শিখ গুরুর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। তাঁর এই আত্মবলিদানকে যে কোনোভাবেই বিফলে যেতে দেবেন না, সে কথা জানিয়েছেন দিল্লি সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষকরা। শিখ গুরুর এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু নিঃসন্দেহে কৃষক আন্দোলনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কৃষি সংক্রান্ত কেন্দ্র সরকারের তিনটি বিল পাশ হয় পার্লামেন্টে। সরকারের তরফ থেকে এই আইনের মাধ্যমে কৃষকদের উন্নয়নের দাবি করা হলেও বিরোধী দল গুলি প্রথম থেকেই ছিল এই আইনের বিপক্ষে। তাঁদের দাবি এই আইন আদতে প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদেরই সাহায্য করবে, কৃষকদের নয়। এই আইনের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা।কৃষকদের এই দীর্ঘকালীন আন্দোলনের ইতিহাসে শিখ গুরু রাম সিংয়ের আত্মবলিদান অমর হয়ে থাকবে।