ছোট থেকেই শুনে এসেছি ও দেখে এসেছি যে কোন শুভ অনুষ্ঠানে শাঁখ বাজানোর রীতি। মা দিদাদের দেখতাম জোরে ফুঁ দিয়ে শাঁখ বাজাতে কিন্তু নিজেরা করলে বিফলে যেতাম। কিন্তু সময়ের সাথে মানুষ সবই আয়ত্ত করতে পারে। শাঁখ বাজানো টাও অনেকটা সেই রকম। কিন্তু কোনদিন ভেবেছেন যে কোন শুভ অনুষ্ঠান ছাড়া আমরা প্রতিদিন ঠাকুর আসনে কেন শঙ্খ ফুঁয়াই?   এই শঙ্খ বাজানোর পেছনে কিছু কারন আছে। নানার ধর্মীয় গ্রন্থে ও পুরান যুগে শঙ্খ বাজানোর বর্ননা রয়েছে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে  শ্রী কৃষ্ণের দ্বারা ধ্বনিত শঙ্খের আওয়াজের সাথে যুদ্ধের দামাদা বাজত , আবার মা দুর্গা অসুরবধের আগে শঙ্খের ধ্বনি বাজিয়ে শুভ মুহুর্তকে আহ্বান জানিয়েছলেন।  ধর্মীয় আচার ছাড়াও এর পেছনে কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে।  শঙ্খের থেকে যে উৎপন্ন কম্পন যে তরঙ্গের সৃষ্টি করে তা বাতাসে মিশ্রিত সকল জীবাণু , ব্যক্টেরিয়া ধ্বংস করে।  শঙ্খ বাজান আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনই আমাদের বাড়ির অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করে শুভ শক্তির আহ্বানের জন্য শঙ্খ বাজানো গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজ আলোচনা করব শঙ্খ বাজালে কি কি ভালো জিনিষ হয়।

শঙ্খের ধ্বনিত শব্দে উপকারী ৫ বিষয়

রোগ সারতে শাঁখে ফুঃ

রোগ সারাতে শঙ্খ বাজান অত্যন্ত উপকারী। শঙ্খ বাজালে স্বাস্থ্যলাভ হয়। কারএ যদি কোথা বলতে সমস্যা হয় বা কোথা বলার সময় আটকে যায় বা  কোথা বলতে জিভের আড়ষ্ট ভাব আসে তা হলে রোজ ২ ঘণ্টা শঙ্খ বাজানো উচিত। এর ফলে কোথা বলার সকল সমস্যার সমাধান হয়। শাঁখ বাজানোর ফলে ফুসফুসে সংক্রমিত সকল রোগের নির্মূল হয় কারন শাঁখ বাজানোর সময় যা বায়ুর প্রয়োজন হয় তা ফুস্ফুস থেকে আশার ফলে সেই অংশের রোগের নিরাময় হয়।  এছাড়া প্লীহা, ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগ শঙ্খ ধ্বনির সাহায্যে সেরে যায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে, মস্তিষ্কের সুষমাকান্ড সুস্থ থাকে।  শঙ্খনাদের ফলে সুপ্ত ভূমিও জেগে ওঠে। ভূমি জাগৃত হওয়ার ফলে মানুষের শরীরের সকল রোগ এবং কষ্ট কমে যায়। 

শঙ্খের ধ্বনিতে জীবানুনাশঃ

গবেষকদের গবেষণা অনুযায়ী, শঙ্খ বাজালে তার দ্বারা তরঙ্গের সৃষ্টি হয় । আর শাঁক বাজানোর সময় সারা ঘরে সেই তরঙ্গের আওয়াজ ছড়িয়ে পরে,
সেই তরঙ্গ বাতাসে মিশ্রিত সকল ব্যক্টেরিয়া, জীবানু, ভাইরাস এই সকল বিষয়কে  ধ্বংস করে দেয়, ফলে পরিবেশ মুক্ত হয়। বাস্তু অনুযায়ী, যত দূর শঙ্খধ্বনি পৌঁছয়, তত দূরের বায়ু শুদ্ধ হয়ে যায়।

অশুভ শক্তির বিনাশে কার্যকারি শঙ্খ ধ্বনিঃ

অনেকেই এই ধারনায় বিশ্বাসী যে তাঁদের পরিবারে কোন অশুভ ছায়া রয়েছে, বা অশুভ শক্তির বাস রয়েছে, বা বাস্তুর সঠিক দিশা না মানায় বাড়িতে বাস্তুর অশুভ প্রভাব করতে শঙ্খের ধ্বনি বিশেষ ভূমিকা পালন করে, কারন সেই তীব্র আওয়াজে সকল অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে, ও বাড়িতে সুখ, শান্তি, শৃঙ্খলা, সমৃদ্ধি বাড়িয়ে তোলে। বাড়িতে শুভ শক্তির আগমন ঘটে।

শরীরে অবস্থিত সকল পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ

শাঁক বাজানোর সময় ইউরিনারি ট্রাক্ট, ব্লাডার, তলপেট, বুক এবং ঘাড়ের পেশির সঞ্চারন-প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সার্বিকভাবে দেহের কর্মক্ষমতা বাড়ে, পেশী সতেজ হয়, শারীরিক জোর বৃদ্ধি পায় , তেমনি শরীরের  কোন অংশে কোনও রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। এছাড়া শঙ্খে জোড়ে ফুঁ দেওয়ার ফলে মুখের পেশীর পাশাপাশি পা পর্যন্ত প্রতিটি পেশীর সচলতা বাড়ে। চোখ, নাক ও কানের পেশীতে রক্ত সরবরাহ সঠিক মাত্রায় হয়। একদিকে যেমন দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি শ্রবণর ক্ষমতার উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না। এছাড়াও  দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে গিয়ে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতার উন্নতি ঘটে।



শরীরের প্রতিটি চক্র উজ্জীবিত হয়ে ওঠেঃ

শাঁক বাজানোর সময় শরীরের ভিতরে যে কম্পন সৃষ্টি হয় তাতে মানব দেহের সাতটি চক্রের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও রোগই শরীরের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। একাধিক প্রাচীন গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়, আমাদের ভাল বা মন্দ থাকার সঙ্গে এই সাতটি চক্রের নিবিড় যোগ রয়েছে। তাই  প্রতিটি চক্রের মধ্যে ভারসাম্য থাকাটা একান্ত প্রয়োজন।  আর এই ভারসম্য বজায় রাখার মূল উপায় হল নিয়মিত দিবা-রাত্রি শাঁক বাজানো। প্রসঙ্গত, আমাদের শরীরের অন্দরে থাকা সাতটি চক্র হল যথাক্রমে, মূলধারা, সোয়াধিস্টান, মানিপুরখ, অনাহত, বিশুদ্ধি, অজনা, সহস্ররা এবং ব্রহ্মারন্দ্র। আর এই প্রতিটি চক্র শাঁখের ধ্বনিতে তার নিজস্ব ভারসম্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়।