মেথি আমরা সবাই চিনি। মেথিকে মসলা, খাদ্য, পথ্য —তিনভাবেই ব্যবহার করা যায় । এর স্বাদ তেতো ধরনের। কিন্তু এতেই রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার আশ্চর্য এক ক্ষমতা। যাঁরা নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের বার্ধক্যের গতি অত্যন্ত ধীর হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এর বহুবিধ ব্যবহার হয়। মশলা হিসাবেও এটি প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। মেথি থেকে ষ্টেরয়েডের উপাদান তৈরি হয়। মেথি বীজ কৃত্রিম ম্যাপাল সিরাপ, আইসক্রিম, ক্যান্ডি, পানীয়, শ্যাম্পু, সাবান এবং প্রসাধনীগুলিতেও ব্যবহৃত হয়।
মেথির পুষ্টি
মেথিতে প্রচুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে এবং এগুলি এটিকে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট তৈরি করতে সহায়তা করে ।
এর মধ্যে কয়েকটি পুষ্টির মধ্যে রয়েছে:
- কোলিন
- ইনসিটল
- বায়োটিন
- ভিটামিন এ
- বি ভিটামিন
- ভিটামিন ডি
- দ্রবণীয় এবং দ্রবণীয় ফাইবার
- লোহা
উপকারিতা
লোকেরা শত শত বা সম্ভাব্য কয়েক হাজার বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের মেথির ব্যবহার করে বিস্তৃত শর্তগুলির চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করে আসছে যেমন:
- হজম সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য , ক্ষুধা হ্রাস এবং গ্যাস্ট্রাইটিস সহ
- স্তন দুধ উত্পাদন এবং প্রবাহ
- ডায়াবেটিস
- কম টেস্টোস্টেরন বা কামনা
- বেদনাদায়ক ঋতুস্রাব
- মেনোপজ
- বাত
- উচ্চ রক্তচাপ
- স্থূলত্ব
- শ্বাসকষ্ট
- ফোঁড়া
- কম ব্যায়াম কর্মক্ষমতা
- আলসার
- কাঁটা ঘা
- পেশী ব্যথা
- মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা
- প্রসব বেদনা
মেথির রিপোর্টিত সমস্ত স্বাস্থ্য সুবিধাগুলির মধ্যে কেবলমাত্র কয়েকটি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা যথেষ্ট সমর্থন পেয়েছেন।
এই সুবিধাগুলির মধ্যে কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে মেথি কাজে লাগতে পারে:
১. ওজন কমাতে:
প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে জন্ম নেয় মেথি। এগুলো চিবিয়ে গিলে খাওয়া যায় এবং পাকস্থলীর ফাঁকা স্থান এরা পূর্ণ করে। এতে ওজন কমানোর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। খুব বেশি নয়, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সামান্য মেথি চিবিয়ে খান। এতেই স্পষ্ট বুঝবেন উপকার পাচ্ছেন। স্থূলতা কমাতে প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো জল পান করতে পারেন। দুটি আলাদা গ্লাসে জল নিয়ে প্রতিটিতে এক টেবিল চামচ মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। এই জল পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
২. জ্বর ও খুসখুসে গলার জন্য:
লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এক টেবিল চামচ মেথি চিবিয়ে খেলে জ্বর থেকে মুক্তি মেলে। আবার এতে রয়েছে মুসিলেজ নামের এক ধরনের যৌগ, যা গলার খুসখুসে ভাব দূর করে। নারীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়েও এর উপকারিতা রয়েছে। মেথিতে রয়েছে সাইটো-ইস্ট্রোজেন, যা নারীদেহে প্রোলাকটিন নামের হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়। এই হরমোন নারীদেহকে সুগঠিত করে। এ ছাড়া ঋতুকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয় মেথি।
৩. চুল পড়া রোধে:
স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেয় মেথি। চুল পড়া রোধে বহুকাল ধরে মেথির কদর চলে আসছে। এটি খেতেও পারেন, বা বেটে মাথায় দিতে পারেন। বিস্ময়কর উপকারিতা মিলবে। মেথি বাটা সারা রাত নারকেল তেলের মধ্যে চুবিয়ে রেখে সকালে চুলে মাখুন। ঘণ্টাখানেক পর স্নান করে ফেলুন।
৪. হজমের সহায়তায়:
বুকে বা পেটের ওপরের দিকে এসিডের প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয় মেথি। সেই সঙ্গে বদহজমের সমস্যায় ওষুধের মতো কাজ করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ সবই দেহের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে বের করে দেয়। উপকার পেতে স্রেফ জলতে মেথি ভিজিয়ে রেখে খেলেই হবে। জলটাও খেতে ভুলবেন না।
৫. রক্তে গ্লুকোজ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
দেহে গ্লুকোজের মাত্রা দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মেথি। এর অ্যামাইনো এসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন ক্ষরণে সহায়তা করে। এতে দেহে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬. উজ্জ্বল ত্বকের জন্য:
রূপচর্চায়ও মেথিকে শীর্ষে রাখা যায়। সারা দেহে বয়ে বেড়ানো নানা ক্ষতিকর উপাদান চেহারায় বলিরেখা ফেলে দেয়। এ ছাড়া চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল সৃষ্টিতেও ওস্তাদ এগুলো। মেথি দেহের সব অপ্রয়োজনীয় উপাদান ঝেঁটিয়ে বিদায় করে।
৭. খুশকি দূর করতে:
বিশেষ ধরনের চুলে প্রচুর খুশকির উত্পাত ঘটে। মাথার শুষ্ক ও মৃত ত্বক থেকে খুশকি হয়। গোটা রাত জলতে মেথি ভিজিয়ে রেখে তা বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এতে ইচ্ছে হলে দই মেশাতে পারেন। এরপর এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগান। মিনিট তিরিশেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি চলে যাবে।
৮. সন্তান জন্মদানকে কিছুটা সহজ করতে:
জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণের যন্ত্রণা কমাতে মেথির অবদানের কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অতিরিক্ত খাওয়া হলে গর্ভপাত বা অপরিণত শিশুর জন্মদানের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
৯. ব্যাথা মোচনে
গতানুগতিক ওষুধের ব্যবস্থায় ব্যথা উপশমের জন্য মেথি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গবেষকরা মনে করেন যে ভেষজটিতে অ্যালকালয়েড নামক যৌগগুলি সংবেদনশীল রিসেপ্টরগুলিকে ব্লক করতে সহায়তা করে যা মস্তিষ্ককে ব্যথা বুঝতে দেয়।
২০১৪ সালের একটি গবেষণায় , বেদনাদায়ক পিরিয়ডযুক্ত ৫১ জন মহিলা পর পর ২ মাস ধরে পিরিয়ডের প্রথম ৩ দিনের জন্য দিনে তিনবার মেথির বীজ গুঁড়ো ক্যাপসুল নেন। তারা কয়েক মাসের মধ্যে ব্যথা সংক্ষিপ্ত স্থিতি এবং কম লক্ষণগুলির অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
তবে মেথি অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন উষ্ণ প্রকৃতির লোকের জন্য ক্ষতিকর। মেথি বেশী মাত্রায় সেবন নিষেধ। মেথি দৈনিক ৫ থেকে ১০গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়।