আমাদের ভারতীয় শাস্ত্র মতে বিবাহ অনুষ্ঠানে পাত্র-পাত্রীর রাশিফল ও কুষ্টি বিচার অতীব জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত বিষয়। শিক্ষার আধুনিকতার বিচার্যে আমরা অনেকেই এটিকে যুক্তিগ্রাহ্য হিসাবে বিবেচনা করিনা। তবে জ্যোতিঃশাস্ত্র অনেকাংশেই বৈঞ্জানিক ভিত্তি সাপেক্ষ ও গণিত শাস্ত্র নির্ভর।
যুক্তি গ্রাহ্যতাঃ–
শিক্ষার নিরিখে বিচার করলে বলাবাহুল্য যে মানুষ চেনার ও মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকা একান্ত প্রয়োজন। মানুষের ব্যবহার, আচরণ, স্বভাব হল সবার প্রধান। তবে আমরা মানি আর নাই মানি ভাগ্য অবশ্যই অনেক কিছুকেই নিয়ন্ত্রন করে,যেখানে এটা অবশ্য স্মরণীয় “জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে”। জীবন-কে প্রতি পদে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হয় আনেক বিবেচনা করে উপযুক্ত পথ নির্বাচন ও নির্বাহ করতে হয়, বিবাহ ও জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়;বিচক্ষনতা সেখানে প্রতি পদে কাম্য। বুদ্ধিদীপ্ত পরিচয়ের ছাপ রেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সেখানে জীবন সঙ্গী নির্বাচন ক্ষেত্রে তাকে সামনা-সামনি দেখে ও তার সাথে মিশে তাকে বুঝে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা যেমন রয়েছে এই জ্যোতিঃশাস্ত্র রাশিফল দেখে কিছুটা এই কাজটিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পথপ্রদর্শন করে, যাতে এই দুরূহ কাজটি কিছুটা ত্বরান্বিত হয় ও সুবিধা হয় বিবেচনার ক্ষেত্রে।
রাশিফলে বিচার্য বিষয়ঃ-
রাশিফল নির্ণয় হয় জন্ম তারিখ, জন্ম সময় ও জন্ম স্থানের ভিত্তি-তে। আর এগুলিই কুষ্টি নির্মাণ ও বিচার এর মূল। রাশিফল মানুষের চরিত্রের রূপরেখা ও সম্পূর্ণ জীবনের চিত্রলেখ সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারনা দিয়ে থাকে। যা বিবাহ রেখার উপর ও অনেকাংশেই নির্ভরশীল। আর বিবাহ তো এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা জীবনের সব কিছুর সাথেই (সম্পর্কের মধ্যে বোঝাপড়া, স্থায়িত্ব, উন্নতি, ভবিষ্যত, উত্তর প্রজন্ম) অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর এই সমস্ত ক্ষেত্রই বিবাহত্তর জীবনে একে অপরের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা সম্পর্কে কিছুটা আভাস পাওয়া জায়,এটাই জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে থাকে।
রাশিফল মিলিয়ে বিবাহ লাভদায়ক যে ৫ কারনেঃ-
আগেই মনে রাখার বিষয় যে লগ্ন অর্থাৎ জন্ম সময়ের মেরু নক্ষত্র ও গুণ সর্ব প্রধান যা রাশিফলের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। গুণ আমরা জানি ৮টি গুণের ৩৬টি সমগ্র সাংখ্যমান রয়েছে;- ৮ গুণ ও সাংখ্যমান নিম্নরূপ—-
বর্ণ (০১), বশ্য (০২), তারা (০৩), যনি (০৪), মৈত্রী (০৫), গণ (০৬), ভাকূত (০৭), নদী (০৮)। এই প্রতিটি গুণের ক্রমাঙ্কমান থেকে কার কত ক্রমাঙ্ক প্রাপ্ত হয় ও বিবাহের সপ্তম ঘর নির্ভর করে সব কিছুর নির্ধারণ হয়। মূলত জ্যোতিষ মতে ১৮ ক্রমাঙ্কমানের নিচে হলে সে বিবাহে সম্মতি দেওয়া হয়না।
এবার লাভদায়ক ৫টি কারন সম্পর্কে আলোচনায় আলোকপাত করা যাক;—–
১) বৈবাহিক সামঞ্জস্য
অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, বিবাহত্তর জীবনে দুটি সম্পূর্ণ অজানা মানুষ ভিন্ন চরিত্র সম্বলিত হয়ে থাকে তারা একসূত্রে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। তাই তাদের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য, স্বভাব, বোঝাপড়ার ক্ষমতা কিরূপ তার নির্ধারণ একান্ত প্রয়োজন একটি সুখী স্থায়ি বৈবাহিক জীবনে উভয়ের-ই এই গুণগুলি বিদ্যমান হওয়া প্রয়োজন। কারন এই গুন বৈশিষ্ট গুলিই সম্পর্কের স্থায়িত্ব প্রদানে সহায়ক।
২) মানসিক ও শারীরিক সামঞ্জস্য –
বৈবাহিক জীবনে স্বামি-স্ত্রীর মধ্যে মানসিক ও শারীরিক সামঞ্জস্য থাকা একান্ত প্রয়োজন। উভয়ের প্রতি উভয়ের আকর্ষণ ও আগ্রহ একটা সম্পর্কের মজবুতি ও স্থায়িত্বের মূল আর এর নির্ণয় গুণ ও রাশিফলের নিরিখে করা হয়ে থাকে।
৩) মানিয়ে চলার সক্ষমতা –
জীবনের প্রতিটি চলার পথে ওঠা পড়া, কঠিন পরিস্থিতি সব কিছুই আসতে থাকে আর তাকে মানিয়ে চলা উভয়েরই প্রয়োজন, এবং উভয়কে উভয়ের সাথে থাকা ও পাশে থাকার মানসিক প্রস্তুতি ভীষণ প্রয়োজন একটা সম্পর্কের প্রধান বিষয় এতি,যা রাশিফলের দ্বারা কিছুটা বোঝা যায়।
৪) অর্থনৈতিক উন্নতি ও পারিবারিক সামঞ্জস্য –
পাত্র ও পাত্রি-ই কেবল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়না এতে ২টি পরিবারও আবদ্ধ হয় সারাজীবনের জন্য। এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নতি ও খ্যাতি সবটাই উভয়েরই মিল থাকা দরকার, রাশির বিচারে এই সবকিছুই একটা সামগ্রিক ধারনা পাওয়া যায়।
৫) শিশু ভাগ্য –
একটা পরিবার ও সম্পর্কের বাঁধন তৈরী হয় একটা শিশুর আগমনে। আর তার বিচার নদী নামক গুণের ক্রমাঙ্ক দ্বারা নির্ধারণ হয়।
সুতরাং এই ৫টি কারন বিচার করলে আমরা রাশিফল মিলিয়ে বিবাহের উপযুক্ততা ও লাভদায়কতা বুঝতে অসুবিধা বোধ করিনা। মনে রাখার মধ্যে ১২ টি রাশির মধ্যে যে যার চরিত্র ধর্ম অনুযায়ী কোন রাশির সাথে কোন রাশির বিবাহ সুখক্র তা মিলিয়ে দেখা হয়। অনেক সময় মংগ্ল/কুজা দোষ ও কালসর্প দোষ কাটিয়ে বা রাশির অমিল থাকলে তার প্রতিকার দিয়েও বিবাহ হয়ে থাকে। তাই সেই মতান্তরের মতভেদ এ না গিয়ে জ্যোতিষ পরামর্শ নিয়ে কাজ ক্রাই শ্রেয়।