“যখন জীবন দ্রুত এগিয়ে চলছিল, তখনই বিরতির বোতামটি টিপতে হল,” সামান্থা রুথ প্রভুর শোতে রানা দগ্গুবাটি তথা বাহুবালীর ভল্লালদেবের এই উক্তিটি কিছুদিন আগেই ঝড় তুলেছিল স্যোসাল মিডিয়ায়। রানা র অনুরাগীদের মধ্যেও দেখা গিয়েছিল শোকের ছাপ ! তাহলে, কি হয়েছে রানা দগ্গুবাটির ? তিনি কি অসুস্থ্য ? এখন কেমন আছেন তিনি ? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুজতে রানা র 36 ম জন্মদিন উপলক্ষে অবশ্যই পড়ুন আজকের বিশেষ প্রচ্ছদটি।
রানা দগ্গুবাটি, দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের অসামান্য একজন অভিনেতা, যার অভিনয়ের সুখ্যাতি আগে শুধুমাত্র দক্ষিণের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও, বাহুবালী মুক্তি পাওয়ার পর এখন সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছেই তিনি একজন পরিচিত মুখ। তামিল, তেলেগু এবং হিন্দী চলচ্চিত্রে অভিনয় করা ছারাও তিনি একজন প্রযোজক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, ভিজ্যুয়াল এফেক্টস কো-অর্ডিনেটর এবং একজন ব্যবসয়ী উদ্যোক্তা। রানা, তামিলনাড়ুর চেন্নাই এ তেলুগু চলচ্চিত্র প্রযোজক ডি সুরেশ বাবুর সন্তান হিসেবে 1984 সালের 14 ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহও ছিলেন তেলেগু চলচ্চিত্রের একজন স্বনামধন্য প্রযোজক ডি রামানাডু। এছারাও রানা দক্ষিণের সুপারস্টার ভেঙ্কটেশ এবং নাগার্জুনার পরিবারেরও আত্তিয়ো।
রানা, হায়দরাবাদের সেন্ট মেরি কলেজে পড়াশোনা শেষ করে 2005 সাল থেকে চল্লচিত্র জগতে পা রাখেন তবে শুরুতে তিনি অভিনয় দিয়ে কিন্তু কেরিয়ার শুরু করেননি। তিনি শুরুতে ভিজ্যুয়াল এফেক্টসের ওপরে কাজ করতেন। জ্যুয়াল এফেক্টস প্রযোজক হিসাবে রানা 2006 সালে তেলুগু চলচ্চিত্র সৈনিকুডুর জন্য সেরা ভিজ্যুয়াল এফেক্টসের শ্রেনীতে রাজ্য নন্দী পুরষ্কার পুরষ্কিত হন। এরপর 2006 সালে, তিনি সহ-প্রযোজক হিসেবে ‘বোমলতা – আ বেলি ফুল অফ ড্রিম্স’ (Bommalata- A Belly Full of Dreams) জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারের সম্মানে ভূষিত হন।
2010 সালে রানা প্রথম অভিনেতা হিসেবে জনসমক্ষে আবির্ভুত হন, তার প্রথম তেলেগু ছবি শেখর কাম্মুলা পরিচালিত ‘লিডার’ দর্শকদের কাছে বিশেষ ভাবে প্রশংসা পেয়েছিল। তেলেগু ছারাও 2011 সালে, রানা বলিউডে রোহন সিপ্পি পরিচালিত ‘দম মারো দম’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ডেব্যিউ করেন এবং ছবিতে তার বিপরিতে অভিনয় করেন বাঙালী তনয়া বিপাশা বাসু। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি সমীক্ষায় সেরা 20 জন “সর্বাধিক কাঙ্ক্ষিত পুরুষ 2011” র তালিকাতে রানা র নাম নথীভুক্ত করা হয়। এছারাও 2012 সালে, টাইমস অফ ইন্ডিয়া পরিচালিত জরিপে তাকে ভারতের দশমতম কাম্য ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত করাও হয়েছিল।
2013 সালে, তিনি দুটি বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয় শুরু করেন, এই সালটি থেকেই রানা র অভিনয় জীবনের সুবর্নময় ভবিষ্যতের সূচনা হয়। রানা, গুণশেখরের ‘রুদ্রমাদেবী’ এবং রাজামৌলির ‘বাহুবলি’ ছবিতে বিশেষ মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন। 2015 সালে ‘বাহুবলী: দ্য বিগনিং’ ছবিটি মুক্তির পর ভাল্লালদেব নামক খলনায়ক চরিত্রটির জন্য সমালোচকদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব প্রশংসা লাভ করেন। প্রভাসের পাশাপাশি এই বাহুবলী ছবিটির জন্যই রানা বিশ্বদরবারে পরিচিতি পান। 2015 সালে ‘বাহুবলী: দ্য বিগনিং’ ছবিটি সেই বছরের ভারতের সর্বাধিক উপার্জনকারী চলচ্চিত্র হিসেবে গন্য হয়। এছারা ‘বাহুবলী- দ্য কনক্লুশন’ ছবিটিও, 1000 কোটি টাকার ও বেশী ব্যবসা করে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে নথীভুক্ত হয়। এরপর 2017 সালে, রানা অভিনিত ‘দ্য গাজী অ্যাটাক’ ছবিটি মুক্তি পায় এবং বক্স অফিসে সাফ্যলতা লাভ করে।
বাহুবলি 2-এর মুক্তির পরে রানা আরও একটি তেলুগু রাজনৈতিক থ্রিলার ছবিতে অভিনয় করেন যার নাম ছিল ‘নেনে রাজু নেনে মন্ত্রি’, এই ছবিতে তার বিপরিতে ছিলন ‘মগাধীরা’ খ্যাত অভিনেত্রী কাজল আগরওয়াল। এই ছবিটির জন্যও রানা সমালোচকদের প্রশংসার এত্তিয়ারে আসেন। বড় পর্দা ছারাও তিনি ‘স্যোসাল’ নামে একটি ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেন এবং একটি তেলুগু টেলিভিশন টক-শো, ‘নং 1 ইয়ারি’ তে তাকে সঞ্চালকের ভূমিকায় দেখা যায়। এইসব ব্যতীত রানা ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার’ ছবিটির তেলুগু সংস্করণে থানোস চরিত্রের ডাবিং এ নিজের ভয়েস দেন।
এবার আসা যাক রানা র ব্যক্তিগত জীবনের কথায়। চলতি বছরেই রানা তার বান্ধবী মিহিকা বাজাজের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের আগে দক্ষিণী অভিনেত্রী ত্রীশা র নামের সাথে বহুবার রানা র নাম শোনা গেছে এবং একাধিক বার তাদের একসাথেও দেখা যায়। তবে বাহুবলী মুক্তি পাওয়ার পর রানা জানান ত্রীশা র সাথে সম্পর্ক বিচ্ছদের কথা। পরবর্তী সময়ে তিনি তার স্যোসাল মিডিয়ায় মিহিকার সাথে তার বিবাহের খবর জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রত্যেকটি রিচ্যুয়ালের ছবি তিনি তার স্যোসাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।
নব দম্পতির প্রানোচ্ছাস হাসি মুখের ছবি গুলি প্রত্যেক রানা অনুরাগীদের মনে খুশির জোয়ার আনে কিন্তু কখন যেকি খবর আসে তা কেও বলতেপারেনা। বিবাহের বেশকিছুদিন পরে রানা সামান্থা র একটি টক সো ‘স্যাম জ্যাম’ এ জানান তিনি গুরুতর ভাবে অসুস্থ। রানা বলেন,
When life was on fast forward, there came a pause button… there was BP (blood pressure), calcification around your heart and you have failed kidneys… It would have been a 70 percent chance of stroke or a hemorrhage and 30 percent chance of death”.
Rana Daggubati
এর আগেও 2016 সালে রানা জানিয়ে ছিলেন যে তিনি তার ডান চোখে অন্ধ, এবং তার বাম চোখটিও প্রতিস্থাপনকারী চোখ। হায়দরাবাদের এল ভি ভি প্রসাদ হাসপাতালে তার চোখের সার্জারি করা হয়েছিল। রানা র ডান চোখের উপর আরেকটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল যখন তার 14 বছর বয়স ছিল কিন্তু সেই সময়ে তার চোখের সার্জারিটি ব্যর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে অভিনব মেডিক্যাল প্রযুক্তির মাধ্যমে তার চোখের সমস্যার কিছুটা উপসম ঘটে। গত বছর, রানা তার স্যোসাল মিডিয়ায় তার একটি ছবি পোস্ট করেন যেই ছবিটিতে তাকে প্রচন্ড রুগ্ন দেখাচ্ছিল এবং সেই ছবিই তার ভক্তদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। তবে সেই সময় রানা তার অনুরাগীদের চিন্তা না করার কথা বলেন এবং তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো গুজবে কান না দিতে বলেন।
এক ভক্ত তার ছবিতে কমেন্ট করে বলেন, “You look so thin or it just me”, রানা তখন সেই ব্যক্তিকে উত্তরে লেখেন যে “Can’t look like a monster all the time.” আসলে সেই সময়িতে রানা তার আসন্ন ছবি ‘হাতির মেরে সাথি’ তে চরিত্রের উদেশ্যে ব্যাপকভাবে শারীরিক রূপান্তর ঘটান। তবে শারীরিক রূপান্তর ই আজ তাকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ করে তুলেছে। তার হার্টের পাশে ক্যালশিফিকেশন হওয়ার দরুন কিডনী ফেল হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে এবং 70 শতাংশ চান্স তার স্ট্রোক হওয়ার এবং 30 শতাংশ চান্স তার ব্রেন হেমোরেজ হওয়ার। কথাটি বলার সময় রানা র চোখের জল দেখে সমস্ত দর্শকই তথা হোস্ট সামান্থাও মর্মাহত হয়ে পরেন।
রানা র মুখ থেকে সরাসরি কথাটি শোনার পর থেকেই ভক্তদের মধ্যে শোকের ছায়া ঘনীভূত হয়েছে। 2020 সালে এমনিতেই আমরা বহু গুনী অভিনেতাদের হারিয়েছি এবং কখনই আমরা চাইনা রানা দগ্গুবাটি র মত এমন একজন গুনী অভিনেতাকে হারাতে। তাই তার 36 তম জন্মতিথীতে আমরা সবাই তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। প্রত্যেক ভক্তরাই তাদের প্রিয় ভল্লালদেব কে আরও অনেক ছবিতেই দেখতে চায়।
সবশেষে এটুকুই যে আমরা সবাই আশা রাখি উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে রানা দ্রুত সুস্থ হয়ে যান এবং আবার তার সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক সিনেমা প্রেমী মানুষের মনোরঞ্জনে কাজে যোগ দেন।
বাংলাখবরের তরফ থেকেও রানা দগ্গুবাটি কে রইলো জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা !
আজকের প্রচ্ছদটি কেমন লাগলো অবশ্যই লিখে যানান আমদের।
আরও পড়ুন:
ভারতবর্ষ -এর 10 টি ঐতিহ্যবাহী চার্চগুলি কোথায় অবস্থিত এবং তাদের ইতিহাস সম্বন্ধে জানেন কি ?