নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবার তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শপথগ্রহণের পরই নবান্নে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে করোনা মোকাবিলায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবনে শপথ নিয়েই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই তাঁর প্রথম লক্ষ্য। তাই শপথের কয়েক ঘন্টা পরই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে একগুচ্ছ বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পর একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন তিনি।
এদিন মমতা ঘোষণা করেন, আগামীকাল থেকে লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ একসঙ্গে গাদাগাদি করে এত লোক আসার ফলেই রাজ্যে হু হু করে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব শাখায় একাধিক রেলকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যার জেরে কমেছিল ট্রেনের সংখ্যা। শেষমেশ এবার পুরোপুরি বন্ধ করা হল লোকাল ট্রেন পরিষেবা।
পাশাপাশি মেট্রো-সহ অন্যান্য পাবলিক সরকারি ও বেসরকারি যানবাহন কমিয়ে ৫০ শতাংশ করে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে বর্তমানে ৮৭ হাজার বেড রয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্যে আরও তিন হাজার বেড বাড়িয়ে ৯০ হাজার করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিদিন ২ লক্ষ ভ্যাকসিন দিচ্ছি। দ্বিতীয় ডোজকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে রাজ্যে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি অফিসগুলিতে ৫০ শতাংশ হাজিরার নির্দেশ আগেই জারি হয়েছে। শপিং মল, স্পা, জিম, বার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। সমস্ত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ থাকবে। ৫০ জনকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান বা কোনও অনুষ্ঠান করা যাবে। তবে এইজন্য আগে অনুমতি নিতে হবে। এবার ভার্চুয়ালি রবীন্দ্র জয়ন্তী করা হবে। উল্লেখ্য, সময় বদলে সকাল ৭টা থেকে ১০টা ও বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকবে। সম্পূর্ণ লকডাউন না করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা।
করোনার ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বিষয়ে মমতা জানান, “আমরা যেখানে দেড় কোটি ভ্যাকসিন চেয়েছি, সেখানে মাত্র কয়েক লক্ষ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অক্সিজেন নিয়ে অন্যান্য রাজ্য চলে যাচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিগুলোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সেখান থেকেই আপাতত অক্সিজেন আনছি।” এদিকে অনেক সময়ই রাজ্যে করোনা রোগীর দেহ পড়ে থাকছে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এর জন্য সরকার দায়ী নয়। আরটি পিসিআর টেস্টের রিপোর্ট আসতে ৭২ ঘণ্টা লাগে। তাই অনেক সময় দেহ নিয়ে যাওয়া যায় না। আমরা ঠিক করেছি অ্যান্টিজেন টেস্ট করে নেব, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যায়। তারপর সৎকারের ব্যবস্থা করব।”
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী আছে সেই নির্দেশিকায়?
১. বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যের সমস্ত লোকাল ট্রেন বন্ধ
২. মেট্রো ও সরকারি পরিবহণে ৫০ শতাংশ যাত্রী
৩. দূরপাল্লার বাস ও ট্রেনেও কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক
৪. বিমান যাতায়াতে কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক, পজিটিভ হলেই সোজা কোয়ারেন্টাইন
৫. সরকারি ও বেসরকারি দফতরে ৫০ শতাংশ হাজিরা
৬. সকাল ৭-১০ টা আর বিকেল ৫-৭ টা খোলা থাকবে বাজার-দোকান
৭. গয়নার দোকান খোলা থাকবে ১২-৩ টা
৮. ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে সকাল ১০-২ টা
৯. ৫০ জনের বেশি জমায়েত নয় কোথাও, সেই ক্ষেত্রেও আলাদা অনুমতি লাগবে
১০. রাজ্যে সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সমাবেশ বর্তমানে বন্ধ