নিজস্ব সংবাদদাতা- তৃণমূলে কি শেষ হতে চলেছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যায়। প্রশ্নটা উঠছে কারণ ১৭ জানুয়ারি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন বন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় অন্তর্ঘাত করে দলের মনোনীত জেলা পরিষদ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন!
গত শনিবার, ১৬ জানুয়ারি দুপুর তিনটের সময় ফেসবুক লাইভে এসে নির্দিষ্ট কারোর নাম না নিয়েই হাওড়ার যুব নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন ইচ্ছাকৃতভাবে দলের অভ্যন্তরে কিছু মানুষ তাকে কাজ করতে বাধা দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে দাবি করেন তিনি তৃণমূল স্তরের কর্মীদের কোনোদিন অসম্মান করেননি। “সাধারণ কর্মীরা একটু সম্মান প্রত্যাশা করে। এর বাইরে তাদের আর কিছু চাওয়ার নেই”, মন্ত্রীর এই মন্তব্যকেই গতকাল হাতিয়ার করেছেন কল্যাণ।
রাজীবের উদ্দেশ্যে তীব্র কটাক্ষ করে সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “ও বলছে দলীয় কর্মীদের সম্মান করে। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডোমজুড় থেকে কল্যান ঘোষকে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী করেছিলেন। প্রথম থেকেই রাজীব এই প্রার্থীকে মেনে নিতে চায়নি। ওকে অনেক বোঝানো হয়েছিল, কিন্তু হুমকি দিয়ে বলেছিল দলের সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করবে। পরে যখন জানতে পারে দলনেত্রী নিজেই চান কল্যান ঘোষ ডোমজুড়ের জেলা পরিষদ আসন থেকে প্রার্থী হোক, তখন আর কিছু বলেনি। তবে ভোটের সময় দায়িত্ব নিয়ে কল্যান ঘোষের হার নিশ্চিত করে। অথচ ওটা আমাদের নিশ্চিত আসন ছিল। সেই ও কিনা বলছে দলীয় কর্মীদের সম্মান করে? মুখে যত বড় বড় কথা!”
কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহল মোটামুটি নিশ্চিত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে আর দলে ধরে রাখা যাবে না তা বুঝে গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই আগাম তার বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছে, যাতে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই রাজীবকে কোণঠাসা করে ফেলা যায়। তবে তৃণমূলের একাংশ এখনো সবকিছু মিটমাট করার পক্ষে। তাদের বক্তব্য এইভাবে যদি একের পর এক নেতা দল ছাড়তে থাকে, তাতে দলীয় কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়তে পারে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রবণতায় বাঁধ দেওয়া জরুরি।
তৃণমূলে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীদের বক্তব্য এই আইনজীবী নেতা দায়িত্ব নিয়ে দলটাকে শেষ করে দেবে! এই প্রসঙ্গে তারা শুভেন্দু অধিকারীর উদাহরণ সামনে আনছেন। শুভেন্দুর সঙ্গে দলের দূরত্ব বৃদ্ধি পেলেও তিনি দলে থেকে যাবেন বলেই অনেকে মনে করছিল। কিন্তু কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটূক্তির পর শুভেন্দু দল ছাড়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেকের অভিমত। এবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিরুদ্ধে তিনি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনলেন! অবশ্য অতীতেও দলীয় নেতা-কর্মীদের কটুক্তি করার একাধিক নজির রয়েছে কল্যাণ বাবুর। যা নিয়ে অতীতে তৃণমূলে কম জল-ঘোলা হয়নি।