রাজস্থানের বার্ড ফ্লু পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর দিকে এগিয়ে চলেছে। সে রাজ্যে একের পর এক পাখি বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো রাজ্যের প্রতিটা অঞ্চলে বার্ড ফ্লু দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ছড়িয়ে-পড়া আটকাতে নানা রকম ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সবকিছুই ব্যর্থ হয়েছে এখনো পর্যন্ত। একেই করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে মানুষজন দিশেহারা, সেই সময়ে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ বলতে গেলে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে।

গত বুধবার ঝালোয়ার জেলায় প্রায় ১০০ টির বেশি পাখি বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তারমধ্যে অনেকগুলি ময়ূরও ছিল। আর‌ও ৫০ টি কাক ও ময়ূর বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হলেও তাদের সুস্থ করে তোলার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আজ সকালে নাগৌর জেলার মাকরানা অঞ্চলের কাল‌ওয়া গ্রামে ৫০ টিরও বেশি পাখির মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়। দ্রুত স্থানীয় বনদপ্তরে খবর দেওয়া হলে সেখানকার কর্মী এবং চিকিৎসকরা এসে মৃত পাখিগুলির মৃতদেহ পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ আগেই রাজস্থান প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে এই পাখিগুলিও বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছে। এবারেও অনেকগুলি ময়ূরের মৃত্যু হয়েছে!

রাজস্থান,
রাজস্থানে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে এই কাকগুলি

আজকের ঘটনা সামনে আসার পরেই আতঙ্কের মাত্র কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত রাজস্থানের মানুষরা এবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ভয় পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বার্ড ফ্লু যেহেতু পাখির দেহ থেকে খুব দ্রুত মানুষের দেহে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এই মুহূর্তে প্রত্যেককেই সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। বিশেষ করে শীতকালে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে, এমনকি নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

রাজস্থানের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে সেই রাজ্যের সরকার ওপর ওপর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বার্ড ফ্লু সংক্রমণ রোধ করতে ততটাও সচেষ্ট নয়। তাদের অভিযোগ রাজ্যজুড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও এখনো পোল্ট্রি মালিকদের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি করা হয়নি রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ঘটনা হল এর আগে পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে দেখা গিয়েছে বার্ড ফ্লুয়ের ফলে পোলট্রিগুলিতে মড়ক লাগে। এক্ষেত্রে আগে থেকে সতর্ক না হলে পোল্ট্রিগুলি থেকেই সাধারণ মানুষের দেহে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রসঙ্গত গত মাসে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একাধিক রাজ্যে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ঘটেছিল। সেইসঙ্গে অসমে সোয়াইন ফ্লু মারাত্মক আকার ধারণ করে। যদিও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। কিন্তু এই শীতের ভরা মরসুমে রাজস্থানে বার্ড ফ্লুর বাড়বাড়ন্তের ঘটনা যথেষ্ট চিন্তায় ফেলে দিয়েছে দেশের মানুষকে। কারণ শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত ঘটার সম্ভাবনা এমনিতেই বিশেষজ্ঞরা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে আবার যদি একটি মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে সে ক্ষেত্রে গোটা পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। যদিও ভরসার কথা হল আজ থেকে দেশে করোনা ভ্যাকসিনের ড্রাই রান শুরু হয়ে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এর ফলে করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।