নিজস্ব সংবাদদাতা- ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ অবস্থা আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্প বিরোধী নেতাদের। মার্কিন সংসদ ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হাঙ্গামার পর আমেরিকার সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির একাংশ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এমনকি তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পক্ষে বিপজ্জনক বলেও ঘোষণা করেন তারা। এক্ষেত্রে নব নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের দল অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট পার্টির সঙ্গে তারা একযোগে ট্রাম্প বিরোধিতায় মুখর হয়ে ওঠেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তরফ থেকে মার্কিন সংসদের নিম্ন কক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বার ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর যখন ভোটাভুটি হয় তখন দেখা যায় সমস্ত ডেমোক্র্যাট সদস্যদের পাশাপাশি দশজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির একাংশ চাইছেন ট্রাম্পকে ইম্পিচ করা হোক। নিয়ম অনুযায়ী হাউজের এই সিদ্ধান্ত উচ্চকক্ষ সেনেটে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার ভোটাভুটির মাধ্যমে ঠিক হবে আদৌ ট্রাম্পকে ইম্পিচ করা সম্ভব হল কিনা।
১০০ সদস্যের সেনেটে এই ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাব পাশ করাতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৬৭ জন সেনেটর যদি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন তবেই ট্রাম্পকে ইম্পিচমেন্ট করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না এই প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি।
সেনেটের আসন বিন্যাস অনুযায়ী বর্তমানে ৫০ জন ডেমোক্র্যাট এবং ৫০ জন রিপাবলিকান সদস্য আছে। অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ মানে কমপক্ষে ১৭ জন রিপাবলিকান সেনেটরের সমর্থন জোগাড় করতে হবে ডেমোক্র্যাট শিবিরকে।
সে দেশের রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের মত সেনেটের রিপাবলিকান সদস্যদের অনেকেই যেহেতু ট্রাম্পের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ তাই তারা ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতেই পারেন। কিন্তু রিপাবলিকান শিবিরের অভ্যন্তরে কান পাতলে বোঝা যাবে হিসাব এত সহজ সরল নয়! ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হলেও তারা শেষ পর্যন্ত এই ধনকুবের প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতির বিরোধিতা করার সাহস দেখাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলেও তিনি প্রায় সাত কোটি মার্কিন ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন। এই বিষয়টাই চিন্তায় রেখেছে রিপাবলিকান পার্টির অভিজ্ঞ সেনেটরদের। কারণ তারা যদি ট্রাম্পের ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, সেক্ষেত্রে আক্রমনাত্মক রাজনীতি করায় অভ্যস্ত ট্রাম্প তাদের বিরোধিতায় প্রবল সোচ্চার হয়ে উঠতে পারেন। এমনিতেই সাধারণ রিপাবলিকান সমর্থকদের বেশিরভাগই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্ধভক্ত। এই ট্রাম্প ভক্তরা বিশ্বাস করে জোর করে তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরাজিত করা হয়েছে।
ট্রাম্প সমর্থকরা যদি সংঘবদ্ধভাবে তাদের বিরোধিতা করতে শুরু করে তবে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচিত আইনসভার সদস্যদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ খাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়াবে। ট্রাম্প যদি পছন্দমতো প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিরোধিতা করেন, সেক্ষেত্রে ট্রাম্প বিরোধী এই রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের পরবর্তীকালে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং সেনেটের নির্বাচনে জয়লাভ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে বলে আমেরিকার রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের মত।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ট্রাম্পকে অপছন্দ না করলেও রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়ম মেনে এই রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা ২০২২ সালে আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়লাভ করে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং সেনেটের দখল ফিরে পেতে চান। এর পাশাপাশি ২০২৪ সালের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হোয়াইট হাউসের দখল ফিরে পেতেও চায় রিপাবলিকানরা। এক্ষেত্রে ট্রাম্পই হতে পারে তাদের প্রধান হাতিয়ার। কারণ গত চার বছরের শাসনকালে দলের তার বিরোধী শিবিরের সমস্ত নেতাদের কোণঠাসা করে ফেলেছেন এই সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্পের জনপ্রিয়তাই এখন একমাত্র পুঁজি রিপাবলিকান শিবিরের।
এক্ষেত্রে ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সেনেটর মার্কো রুবিওর কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি বরাবরই ট্রাম্প বিরোধী হিসাবে পরিচিত। ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর দলের অভ্যন্তরে ট্রাম্প বিরোধিতার সুর সপ্তমে নিয়ে যান। কিন্তু কয়েকদিন পরেই বুঝতে পারেন সাধারণ রিপাবলিকান সর্মথকরা তার এই ট্রাম্প বিরোধিতা পছন্দ করছে না। এদিকে তলে তলে সদ্য প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি নিজের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্পকে ২০২২ সালে দেশের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ফ্লোরিডার সেনেট আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করানোর ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রমাদ গোনেন মার্কো রুবিও। নিজের আসন ধরে রাখতে বাধ্য হন ট্রাম্পের হয়ে কথা বলতে। ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়াকে ‘হাস্যকর নাটক’ এবং ‘সময়ের অপচয়’ বলে চিহ্নিত করেছেন দীর্ঘ দিনের এই রিপাবলিকান সেনেটর।
অতএব ট্রাম্পের গল্প ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’!