বাংলা চলচ্চিত্র জগতে মহানায়িকা একজনই..
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের মহা নায়িকা একজনই, তিনি হলেন সুচিত্রা সেন। এ ব্যাপারে আজ আর দ্বিমত নেই আপামর বাংলা সিনেমা প্রেমীদের মধ্যে। সুচিত্রা সেন তাঁর অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে আজও থেকে গিয়েছেন সকলের মনের মণিকোঠায়। থেকে যাবেন চিরকালই। তাঁরই মেয়ে মুনমুন সেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের জুটির কথাও নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সুচিত্রা সেন শুধু ভাল অভিনেত্রী ছিলেন তাই নয়, তাঁর ব্যক্তিত্বও ছিল সকলের থেকে আলাদা। মায়ের গড়ে তোলা এই পথে কতটা ছাপ ফেলতে পেরেছেন সুচিত্রা সেনের মেয়ে মুনমুন সেন?
বস্তুত, বাংলা চলচ্চিত্র জগতে মায়ের দেখানো পথেই হেঁটেছেন মুনমুন সেনও। সৌন্দর্যের দিক থেকেও যৌবনে মায়ের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে ছিলেন না তিনি। এমনকি শুধু মাত্র টলিউড নয়, মুনমুন সেনের পরিচিতি গড়ে উঠেছে আরব সাগরের পাড়েও। বরং মুনমুন সেন অভিনীত হিন্দি সিনেমার সংখ্যা বাংলার চেয়ে বেশি। কাজ করেছেন তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং মারাঠি ছবিতেও। কিন্তু, মুম্বাই হোক কিংবা কলকাতা, মুনমুন সেনের জনপ্রিয়তা সুচিত্রা সেনের ধারেকাছে পৌঁছোয় নি কখনোই।
মুনমুন সেনের সাফল্য:
১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হয় মুনমুন সেনের অভিনয় জীবন। বিয়ে করে, মা হওয়ার পর অভিনয় জীবনে পদার্পণ করেছিলেন তিনি। তাঁর প্রথম ছবির নাম ‘অন্দর বাহার’। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে মুনমুন সেনের পুরস্কারের সংখ্যা হাতে গোনা। ১৯৮৭ সালে ‘সিরিভেন্নেলা’ নামক তেলেগু সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি অন্ধ্র প্রদেশের “নন্দী সেরা সহ-অভিনেত্রী পুরস্কার” পান। এছাড়া তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে রয়েছে কালকেন্দ স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড, ভারত নির্মাণ পুরস্কার এবং কালাকার পুরস্কার। মুনমুন সেনের মোট অভিনীত সিনেমার সংখ্যা ৬০। এছাড়াও ৪০ টি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করতে দেখা যায় সুচিত্রা কন্যাকে।
মায়ের মতো সাফল্য না পাওয়ার কিছু কারণ:
সুচিত্রা সেনের মতো সাফল্য না পেলেও মুনমুন সেনের অভিনয় জীবনকে একেবারে ব্যর্থ বলে দেগে দেওয়া ঠিক হবে না। তবে রূপ, গুন আর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মায়ের পথে হাঁটতে না পারার কিছু কারণ অনুসন্ধান করাই যায়।
১) বলিউড ঝোঁক:
মুনমুন সেন নিজের কেরিয়ারে প্রায় ৩০টিরও বেশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন। আর তাঁর অভিনীত বাংলা ছবির সংখ্যা মাত্র ১৮। এছাড়া অন্যান্য ভাষার আরো ৫টি ছবি তিনি করেছেন। অনেকের মতে, শুধু মাত্র বাংলাতেই যদি মুনমুন সেনের মূল ফোকাস থাকত, তাহলে হয়তো সুচিত্রা সেনের সাফল্যকে ছুঁতে পারতেন তিনিও।
২) কেরিয়ার প্রাধান্য:
বাকিদের মতো মুনমুন সেন প্রথম থেকেই অভিনয়কে নিজের জীবনের লক্ষ্য বলে গ্রহণ করেননি। অ্যাকাডেমিক জগতে ছিল তাঁর ফোকাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে তিনি স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত পড়েন। বিয়ে করে দাম্পত্য জীবনে থিতু হওয়ার পরেই অভিনয়ের কথা ভাবেন মুনমুন সেন।
৩) অভিনয় দক্ষতা:
অভিনয়ে যথেষ্ট পারদর্শী হলেও মুনমুন সেনের প্রতিভা কখনোই সুচিত্রা সেনের সমান ছিল না। নিজেই একথা বারবার স্বীকার করে নিয়েছেন অভিনেত্রী।
৪) মডেলিং ও বিতর্ক:
অভিনয় জীবনে আসার আগে এবং পরে মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুচিত্রা কন্যা মুনমুন সেন। একাধিক বিজ্ঞাপন কিংবা বিতর্কিত চরিত্রে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এই বিষয়টি তাঁর কেরিয়ারের বিপক্ষে গেছে বলে মনে করেছেন অনেকেই।
৫) চরিত্র নির্বাচন:
এছাড়া মুনমুন সেনের বিভিন্ন সিনেমার স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী চরিত্র নির্বাচনও তাঁর সাফল্যকে অনেকাংশে প্রভাবিত করেছিল বলে মনে করা হয়। কাহিনীপটের জন্যও ব্যর্থ হয়েছে একাধিক ছবি।