সেই ২০০৬ সাল থেকে বাঙালি বিনোদনের অন্যতম ধারক ও বাহক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে মীরাক্কেল। জি বাংলার এই রিয়েলিটি শো-এর জনপ্রিয়তা বরাবরই আকাশচুম্বী। সঞ্চালক মীর আফসার আলির কমেডি গত ১৪ বছর ধরে বাঙালি ড্রইংরুমের সান্ধ্যসঙ্গী। কিন্তু এহেন মীরাক্কেল এবছর সময়ের আগেই উঠে এসেছে শিরোনামে। জড়িয়েছে অনভিপ্রেত বিতর্কে।
করোনা ভাইরাসের আবহে কঠিন সময়ে ভালো থাকার ভ্যাকসিন’ নিয়ে দীর্ঘ চার বছরের অন্তরালের পর মীরাক্কেল প্রত্যাবর্তন করেছে টিভি পর্দায়। কামব্যাক নিয়ে দারুণ উৎসাহী ছিলেন অনুরাগীরা। কিন্তু তবু অনেকের মতে, কোথাও যেন তাল কেটে গেছে মীরাক্কেলের। সঞ্চালকের ভূমিকায় মীর থাকলেও এবার মীরাক্কেলের চিরাচরিত বিচারকমণ্ডলী পুরোদস্তুর বদলে গিয়েছে। আগে যেখানে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, রজতাভ দত্তদের মতো অভিজ্ঞ শিল্পীদের হাতে বিচারের ভার ছিল, সেখানে মীরাক্কেল Season 10′- এ বিচারকের আসনে লেগেছে নতুন প্রজন্মের হাওয়া। নতুন বিচারক হিসেবে এসেছেন অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, বিশ্বনাথ বসু, টলি সুন্দরী সায়ন্তিকা এবং পাওলি দাম। আছেন সোহম এবং রুদ্রনীলও। ঠিক কী কারণে চিরাচরিত ট্রাডিশন থেকে সরতে হল মীরাক্কেলকে? আসুন জেনে নেওয়া যাক ২০২০ সালের মীরাক্কেলে বিচারক বদলের কারণ।
মীরাক্কেলে শ্রীলেখা মিত্র:
এ বছরের মীরাক্কেলে বিচারক বদল নিয়ে প্রথম বোমাটা ফাটান শ্রীলেখা মিত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি জানান “সত্যি কথা বলার” কারণে মীরাক্কেল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। আর তার পরেই শুরু হয় বিতর্ক।
মীরাক্কেলের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে শ্রীলেখা মিত্রের নাম। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রজতাভ দত্তের সঙ্গে এই শোয়ের বিচারকের আসনে রবাবরই দেখা মিলেছে টলিউডের এই নায়িকাকে। কিন্তু মীরাক্কেল শুরু হওয়ার আগেই ফেসবুকে তিনি লেখেন, “সবচেয়ে জনপ্রিয় কমেডি শো শুরু হতে চলেছে আমাকে ছাড়া। সত্যি কথা বলবার এই মূল্যটাই দিতে হয় আমাকে, ব্র্যান্ডের প্রতি একনিষ্ঠ থাকা কিংবা সিস্টেমের সব অংশগুলোতে তেল না দেওয়ার (আপনারা বুঝে নিন) চরম মূল্য। ধন্যবাদ সংশ্লিষ্ট চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে। আপনি ঠিক বলেছেন মহিলা, আমি নিজের খামতি গুলোকে মেনে নিচ্ছি। আমাকে যাঁরা অপছন্দ করেন তাঁরা পার্টি করতে পারেন।”
কী বলেছিলেন শ্রীলেখা?
বলা বাহুল্য, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চেপে রাখার কোনো চেষ্টাই করেননি অভিনেত্রী। কিন্তু ঠিক কী বলেছিলেন শ্রীলেখা যার কোপ পড়ল মীরাক্কেলে? টলিউডের অন্দর ঘাটলে উত্তর খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হয় না। বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর বলিউডের অভ্যন্তরে স্বজনপোষণ নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তার আঁচ লেগেছিল টলিউডেও। টলিউডের স্বজনপোষণ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন শ্রীলেখা মিত্র। “প্রকাশ্যে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, “ঋতু-বুম্বার প্রেম ছিল বলে নায়িকার চরিত্রে কাজ পাই নি।” এই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরেই মীরাক্কেলের বিচারক আসন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁকে, এমনটাই মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
মীরাক্কেলে রজতাভ দত্ত:
মীরাক্কেলের অপর জনপ্রিয় বিচারক হিসেবে বরাবরের জন্য আসন পাকা ছিল রজতাভ দত্তের। কিন্তু এবছর তাঁকেও দেখা যাচ্ছে না জি বাংলার পর্দায়। এক্ষেত্রেও কি কাজ করছে বিতর্ক?
না। রজতাভ দত্তের কোনো মন্তব্যে অসন্তুষ্ট নয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক্ষেত্রেও দানা বেঁধেছে বিতর্ক। জানা গেছে, রজতাভ দত্তের মীরাক্কেল থেকে অপসারণের পিছনে কাজ করছে বাংলা টেলিভিশন জগতের দুই সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেলের রেষারেষি। জি বাংলা এবং স্টার জলসা।
টেলিপাড়ায় দুই জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের মধ্যে টিআরপি এবং কন্টেটের লড়াই চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়। এই নিয়ে চ্যানেলের দর্শকদের মধ্যেও ধুন্ধুমার তর্ক বিতর্ক চলছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।মীরাক্কেল’-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবছর স্টার জলসা নিয়ে এসেছে নতুন কমেডি শো আসছে’হাসিওয়ালা অ্যান্ড কোম্পানি’। এই শো-এর বিচারকের আসনেই এবার দেখা যাচ্ছে মীরাক্কেলের রজতাভ দত্তকে। তাঁর সঙ্গে আরো যাঁরা বিচারের ভার পেয়েছেন তাঁরা হলেন, বিশিষ্ট অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য এবং অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা।
যদিও বিতর্ক নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেননি রজতাভ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘এ ব্যাপারে কথা বলার অনুমতি নেই চ্যানেলের’। কিন্তু স্টার জলসা বনাম জি বাংলার চিরাচরিত দ্বন্দ্বেই যে মীরাক্কেলের বিচারক হিসেবে বাদ পড়েছেন রজতাভ দত্ত, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
মীরাক্কেলে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়:
শ্রীলেখা মিত্র এবং রজতাভ দত্তের সঙ্গে সঙ্গে মীরাক্কেলের বিচারকের তৃতীয় আসনটি বরাবর যাঁর জন্য থাকত, সেই পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এবারে দেখা যাচ্ছে না মীরাক্কেলে।
বিচারকের আসনে তাঁর অনুপস্থিতিতে মনমরা দুই বাংলার মীরাক্কেল অনুরাগীরা। তবে বর্ষীয়ান এই অভিনেতার অনুপস্থিতির কোনো সঠিক কারণ জানা যায় নি। তাঁকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমেও মুখ খোলেননি কেউ। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়স বতর্মানে ৮০ বছর। পর্যবেক্ষকের অনুমান, বয়সের কারণে এবং শারিরীক অসুস্থতার কারণেই হয়তো মীরাক্কেল থেকে সরেছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা তা জানা যায় নি।