দশমহাবিদ্যার শ্রেষ্ঠ বিদ্যা স্বয়ং মা কালী।কালী শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ রূপ যার অর্থ ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। মহাভারত অনুসারে এটি দেবী দুর্গার একটি রূপ, যিনি যোদ্ধা ও পশুদের আত্মাকে বহন করেন যার নাম ‘কাল রাত্রি’।আবার সংস্কৃত ভাষার অভিধান শব্দকল্পদ্রুম এ আছে শিব হলেন কাল বা মহাকাল তার পত্নী মহাকালী অর্থাৎ মহাকাল কে যিনি নিয়ন্ত্রিত রাখেন তিনিই মা কালী। মহানির্বাণ তন্ত্রমতে সর্ব প্রাণীকে কলন অর্থাৎ গ্রাস করেন যিনি তিনি মহাকাল, আর সেই মহাকালকে যিনি গ্রাস করেন তিনি কালী।মহাকালের বক্ষে পা রেখে কাল অর্থাৎ মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করেন কালী। অষ্টাদশ শতাব্দীতে নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বাংলায় প্রথম কালী পূজার প্রবর্তন করেন।

মা কালী
prabir2011 .blogspot

মা কালী নামের যেমন বহু মানে, তেমনি একই অঙ্গে কালী বহুরুপ-এর সমাহার। কখনো তিনি সালংকারা বরাভয় প্রদানকারী কখনো বা তিনি ছিন্নমস্তা ভয়ংকরী। তোড়ল তন্ত্র মতে দেবী ৮ টি রূপ_দক্ষিণা কালী, সিদ্ধকালী,গুহ্য কালী, মহাকালী, ভদ্রকালী চামুণ্ডা কালী, শ্মশান কালী ও শ্রী কালী। কালী একাধারে সৃজনী ও একেধারে সংহারী।

দক্ষিণা কালী

IMG 20201111 WA0018
pinterest. com

বঙ্গদেশের সর্বাধিক আরাধ্যা দেবী দক্ষিনা কালী। তিনি কখনও বা শ্যামা কালী নামে পরিচিত। নীল বর্ণ, ত্রিনয়নী, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা এবং মুণ্ডমালা শোভিতা।তার বাম দিকে দুই হাতে ছিন্ন মুণ্ড ও খড়গ এবং ডানহাত যুগলে আশীর্বাদ এবং অভয় মুদ্রা। তিনি মহাদেবের উপর দণ্ডায়মান। দেবী মহাভীমা ও মুহুর্মুহু রক্তপানকারী।
দক্ষিণ দিকের অধিপতি ধর্মরাজ যম যে কালীর ভয়ে পলায়ন করেন, তাঁর নাম দক্ষিণাকালী আবার অনেকের মতে যে দেবীরূপের পুজো করলে সর্বশ্রেষ্ঠ ফল দক্ষিণা রূপে পাওয়া যায়, তিনিই দক্ষিণাকালী। শবাসনে শায়িত শিবের বক্ষে ডান পা স্থাপন করে অধিষ্ঠান করেন দেবী।

দেবী গুহ্যকালী

IMG 20201111 WA0021
prabir2012 blogspot. Com

দেবীর গাত্রবর্ণ ঘন মেঘের ন্যায়,তিনি লোলজিহ্বা ও দ্বিভূজা,গলায় পশ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা,মস্তকে জটা ও অর্ধচন্দ্র । দেবী নাগফণা দ্বারা বেষ্টিতা ও নাগাসনে উপবিষ্টা। বামকঙ্কনে তক্ষক সর্পরাজ ও ডানকঙ্কনে অনন্ত নাগরাজ। তিনি নবরত্ন ভূষিতা,অট্টহাস্যকারিণী, মহাভীমা ও শব মাংস ভক্ষণকারিণী। দেবীর বাম পাশে বৎস রুপী শিব। গুহ্যকালী গৃহীদের উপাস্য দেবী নয়, তিনি সাধকদের আরাধ্যা । তবে বীরভূম জেলার আকালিপুরের মহারাজ নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত গুহ্যকালী আজও পুজো পেয়ে আসছেন।

সিদ্ধকালী

দেবী তন্ত্রে উল্লিখিত এই কালীর নাম স্বল্প পরিচিত। সিদ্ধকালী সিদ্ধ সাধকদের আরাধ্যা। তিনি দ্বিভূজা। দক্ষিণ হস্তে খড়গের আঘাতে চন্দ্র মন্ডল থেকে নিঃসৃত অমৃত পানে দেবী সন্তুষ্ট। দেবী সালঙ্কারা।দেবীর এক পা মহাদেবের বুকে ও অপর পা মহাদেবের ঊরুদ্বয় মাঝখানে অবস্থিত।

মহাকালী

IMG 20201111 WA0022 1
prabir2012 blogspot. Com

তন্ত্রসার গ্রন্থমতে মহাকালী পঞ্চদশ নয়না। দেবীর দশহাতে রয়েছে যথাক্রমে খড়্গ,শূল,ধনু,বাণ,শঙখ,চক্র,ভুশুণ্ডি,রুধির, নরমুণ্ড ইত্যাদি। তিনি রূপ,সৌভাগ্য,কান্তি ও শ্রী প্রদানকারী।

ভদ্রকালী

ভদ্রকালী নামের ভদ্র শব্দের অর্থ করলেন এবং কাল শব্দের অর্থ শেষ সময় অর্থাৎ মরণ কালে যিনি জীবের মঙ্গল বিধান করেন তিনি ভদ্রকালী।
ভদ্রকালীর গাত্রবর্ণ অতসী পুষ্পের মত মাথায় জটাজুট ললাটে অর্ধচন্দ্র গলদেশে কন্ঠহার। কিন্তু বৃহৎ তন্ত্রসার গ্রন্থে দেবীর রং এবং অন্য মাত্রা পেয়েছে।সেখানে বলা হয়েছে “দেবী নিবিড় মেঘের মতো কৃষ্ণবর্ণা, তাহার পরিধান কৃষ্ণবস্ত্র,জিহ্বা লোল,দন্ত অতি ভয়ংকার, চক্ষুদ্বয় কোটর মধ্যগত, বদন হাসিপূর্ণ,গলদেশে নাঘার, কপালে অর্ধচন্দ্র ও মস্তকে আকাশগামিনী জটা। “তিনি জগতকে গ্রাস করছে তার হাতে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ও পাশ যুগ্ম। গ্রাম বাংলায় ভদ্রকালীর মাহাত্ম্য সর্বজনবিদিত।

চামুন্ডকালী

চামুন্ডা কালীর বা চামুণ্ডা ভক্তদের কাছে প্রসিদ্ধ দেবী। ভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরান মতে চন্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুর বধের নিমিত্তে দেবী দুর্গার ভ্রুকুটি কুটিল ললাট থেকে উৎপন্ন হয় দেবী চামুণ্ডার। তার গায়ের রং নীল ও পরিধানে বাঘছাল। হাতে অস্ত্র, দন্ড আর চন্দ্রহাস।দুর্গাপুজোর মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত পুজোয় দেবী চামুণ্ডা পুজো হয়। বৃহৎ তন্ত্রসার গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী দেবী চামুণ্ডা নিবিড় অন্ধকারে অবস্থানকারী তিনি চতুর্ভূজা। তাহার দেহ কৃষ্ণবর্ণ ও কেশ গুলি পিঙ্গল বর্ণ এবং দেবী শবের উপর উপবিষ্টা।

শ্মশান কালী

IMG 20201111 WA0017
pinterest. Com

কালীর এই রূপ শ্মশানঘাটে পূজা হয়ে থাকে। শ্মশান কালী দেবীর গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ, রক্তের ন্যায় লাল চক্ষুদ্বয়। বাম হাতে মদ ও মাংসে ভরা পাত্র,ডানহাতে নরমুণ্ড। দেবী ভয়ংকরী। নানা অলঙ্কারে ভূষিতা এবং উলঙ্গিনী। গৃহস্থের বাড়িতে শ্মশান কালীর ছবি রাখা অশুভ।সেকালের ডাকাতেরা ডাকাতি করতে যাবার আগে শ্মশানঘাটে নরবলি দিয়ে শ্মশান কালীর পুজো করতো.

শ্রী কালী

শ্রী কালী দেবীর আরেক রূপ।দেবী এই রূপে দারুক নামক অসুর কে বধ করেছিলেন। মহাদেবের কন্ঠের বিষের প্রভাবে দেবী কৃষ্ণবর্ণা।

nativeplanet . com
nativeplanet . com

এই প্রধান ভাগ গুলি ছাড়াও বিভিন্ন পুরাণ ও তন্ত্রে পাওয়া যায় অসংখ্য দেবী কালিকার কথা,যথা- ধনদাকালী,অষ্টভুজা কালী,আদ্যাকালী,রক্ষাকালী,কামকলাকালী,রটন্তী কালী ইত্যাদি।