মাস কয়েক আগে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর নেট দুনিয়া কে তোলপাড় করেছিল যে বিষয় তা হল, মেন্টাল হেলথ বা মানসিক স্বাস্থ্য। শরীরের সুস্থতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সামান্য কিছুতেই আমরা খোঁজ করি স্পেশালিষ্ট দের,কিন্তু আমাদের কেবল মাত্র এই শরীর কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার জন্য বারবার অবহেলিত হয় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। মানসিক অসুস্থতার জন্য ডাক্তার দেখানো এখনো এই সমাজে Taboo যাকে হয় এড়িয়ে যেতে হয় বা লজ্জার ভয়ে গোপন রাখতে হয়। ” এটা জাস্ট একটা phase” এই বলে বিপদ এড়াতে এড়াতে কখন যে আমরা খাদের একেবারে কিনারায় এসে দাঁড়াবো কেউ জানেনা। একটা কুঁড়ি ঝড়ে যাওয়ার পর তখন শুধু বাকি থাকবে আক্ষেপ, অভিযোগ,কেন সে কাউকে কিছু জানালোনা। কিন্তু এই সমাজ ই যে তাকে জানাতে দেয়নি_সেই দায় কেউ স্বীকার করবে না।

শারীরিক অসুস্থতার যেমন কোনো বয়স নেই,তেমনই মানসিক অসুস্থতার ও কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই।দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার প্রবণতা কিন্তু সেই ইঙ্গিত-ই দিচ্ছে। ৮ বছরের প্রাণোচ্ছল শিশু থেকে ৬৮ বছরের প্রবীণ, সবার মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মানসিক অসুস্থতা শুধুমাত্র সদ্য কিশোরদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা_এ জাতীয় গুরুতর ভুল ধারণা থেকে আমরা যতো তাড়াতাড়ি বেরোতে পারবো ততোই আমাদের জন্য মঙ্গল।

download 3
ছবি সৌজন্যে:boredpanda. com

এখানে কয়েকটি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার কথা আলোচনা করা হল-

ডিপ্রেশনঃ

কবির কথায় “ডিপ্রেশনের বাংলা নাকি মন খারাপ?” না, একেবারেই নয়। ডিপ্রেশন শুধু মন খারাপ নয়,ডিপ্রেশন বিষন্নতা। কারণ ছাড়া মন খারাপ, সব সময় বুকের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট,গুমড়ে যাওয়া ক্লান্তি বোধ, হয় সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব বা একেবারেই ঘুম নেই, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, সব কাজে আকর্ষণ হারানো,এমনকি পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে গেলে ক্রমাগত আত্মহত্যার চিন্তা_এই লক্ষণ গুলোই ডিপ্রেশনের পরিচায়ক। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই,সঠিক সময়ে নিজে বা পরিজনরা সতর্ক হতে পারলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি এমন কিছু কঠিন নয়। ডাক্তারি সহায়তায় বা কাউন্সিলিং এর মাধ্যমেই সম্ভব অসাধ্য সাধন

BPD বা বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারঃ

যে মানসিক অসুস্থতা নিয়ে সব চেয়ে ভুল ব্যাখ্যা হয় এটি সেরকমই একটি অসুস্থতা। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে অপারগতা এই অসুস্থতার প্রধান লক্ষণ। সামান্য আনন্দে বা সামান্য দুঃখে অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পরা,মেজাজের অস্বাভাবিক তারতম্য, নিজেকে একলা মনে করা বা একলা হয়ে পড়ার ভয় পাওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপনে আকর্ষণ, নিজের ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ,নিজের কাছের মানুষদের প্রতি মনোভাবের দ্রুত পরিবর্তন এই অসুস্থতার পরিচায়ক। যেহেতু এই রোগ নির্ণয় করা খুবই কঠিন তাই সেই উদ্দেশ্যে সব সময় একজন অভিজ্ঞ মনোবিদেরই পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

images 6
ছবি সৌজন্যে: elitereaders. com

প্যানিক ডিসঅর্ডারঃ

প্যানিক ডিসঅর্ডার হচ্ছে এমন এক মানসিক পরিস্থিতি যেখানে উদ্বেগ বা উৎকন্ঠা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। একটি বিষয় যেটি অন্যদের কাছে আপাত তুচ্ছ, তা এই ডিসঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তির কাছে হয়ে ওঠে মারাত্মক আতঙ্কের বিষয়। এর প্রধান উপসর্গগুলো হলো ঘুমের সমস্যা, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, অস্থিরতা, হাত, পা ঝিনঝিন করা, ঘাম দেওয়া, মাথাঘোরা এবং বমিভাব এবং পেশি টানটান হয়ে যাওয়া। বিহেভিয়ারেল থেরাপি ও প্রয়োজনে ওষুধের মাধ্যমে এই অসুস্থতা নিরাময় সম্ভব।

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারঃ

এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিহীন অবসেশন অর্থাৎ আসক্তি এবং কম্পালসন অর্থাৎ আসক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়। বর্তমান যুগে সদ্য কিশোর দের মধ্যে এর প্রবণতা বেশী থাকলেও যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যেতে পারে। আমরা যাকে সাধারণ কথায় ‘ছুঁচিবাই’ বা ‘বাতিকগ্রস্থ’ বলি এটি অনেকাংশে এই ডিসঅর্ডার। তাই ব্যঙ্গ তামাশা না করে প্রয়োজন সঠিক সময়ে সচেতনতা গ্রহণ।

JuliaYellow Depression 1120x550 acf cropped 1120x550 acf cropped
ছবি সৌজন্যে: juliayellow. com

আশার কথা আজ কিছুটা হলেও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। স্কুল কলেজে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হতে এখনও অনেক পদক্ষেপ জরুরি। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার,দরকার কাছের মানুষদের একটু বেশী আগলে রাখা_ আর তার চেয়েও বেশী দরকার সবার থেকে বেশী নিজেকে ভালোবাসা,আজকের দুনিয়ায় যা সবচেয়ে বেশী জরুরি।