বর্তমান হোক কিংবা পুরাতন সকল জেনারেশন  কাছেই মহাভারত অত্যন্ত শিক্ষণীয় অধ্যায়।  মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভারত বংশের মহান উপাখ্যান। মহাভারতের মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। কুরুক্ষেত্রের সেই যুদ্ধ প্রাঙ্গনে অর্জুনকে প্রদান করা কৃষ্ণপ্রদত্ত  অমর বানী ভগবৎ গীতার আকারে সকলকে কঠিন পথ থেকে বেরনোর মার্গ দেখায়। কারো কাছে মহাভারত মনুষ্যসৃষ্ট গল্পমাত্র আবার কারো কাছে সত্য ঘটনা, যার অস্তিত্বের ছাপ আছে কুরুক্ষেত্রে। যুগ যুগ ধরে এই তর্ক বিতর্ক, দ্বিমত চলেই আসছে। সত্য ঘটনা হোক কিংবা গল্পের আঙ্গিকে তৈরি ঘটনা শুনতে ও পড়তে সকলেই বেশ ভালোবাসে। এই মহাভারত কাব্যগ্রন্থে যদি কিছু চরিত্রের উপস্থিতি না থাকত তা হলে হয়তো মহাভারত সত্যি মহাকাব্যে পরিণত হত না। হয়তো সত্যি ব্যাসদেব মহাভারত রচনা করতে সক্ষম হত না।

মহাভারতের সেই পাঁচ প্রধান চরিত্র

ভীষ্ম

একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন চরিত্র ভীষ্ম। যার কাছে নিজের কথার দাম অত্যন্ত দৃড়। তিনি কথার খেলাপ কোনদিন করেন না। তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন- তিনি কোনদিন বিয়ে করবেন না, কোনদিন হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসবেন না, হস্তিনাপুরের সিংহাসনে যেই বসুক তিনি নিজের শেষ জীবনকাল অবধি তাঁদের রক্ষা করবে।   তিনি ছিলেন রাজার অনুগত্য  অর্থাৎ বংশের নুন তিনি গ্রহন করছেন তার ক্ষতি তার দ্বারা অসম্ভব যদি তারা ভুল দিশায় পাথেয় তবুও। তাই নিজের প্রানের থেকে প্রিয় পঞ্চ পাণ্ডবকে রক্ষা করতে চাইলেও তরবারি ওঠায় তাদেরই বিরুদ্ধে কারন সে যে নিজের কথার দামে নিজেকে বন্ধক রেখেছেন।  কিন্তু ওপর দিকে ভীষ্ম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে তিনি মহিলা ও শিখণ্ডীর সম্মুখে অস্ত্র ধরবেন না। তাই অর্জুন ছলবশত শিখণ্ডীকে সামনে রেখেই বীর ও শক্তিশালী যোদ্ধা ভীষ্মকে হত্যা করেন। এবং সে নিজ ইচ্ছায় শত তিরের উপর শায়িত হয়ে ইচ্ছামৃত্যু বরন করে।  

দ্রৌপদী

মহাভারতের এক বিশেষ চরিত্র দ্রৌপদী। যেই চরিত্রের মাধ্যমে কৃষ্ণ ও দ্রৌপদীর ভাই বোনের সুমধুর সম্পর্ক ফুটে উঠেছে , তার এই চরিত্রের অস্তিত্ব না থাকলে প্রমানিত হত না নারীর সম্মান অত্যন্ত মূল্যবান যে তার সম্মানে হাত দেবে তার পতন নিশ্চিত। আর নারীর সম্মান রক্ষার্থে কৃষ্ণরুপী ভ্রাতার আগমন ঘটে যুগ যুগ ধরে।  আর এই নারী চরিত্রই প্রমাণ করেছে নারী ভোগের বস্তু নয়, সে সম্মানের প্রতীক, সে কর্তব্যপরায়ন, দায়িত্বরুপী, পতিপ্রেমী। দ্রৌপদীর চরিত্র বর্তমান নারী সমাজে এক আলোড়ন তৈরি করে।

কৃষ্ণ

হিন্দু পুরান অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণুর দ্বাপরযুগের অবতার হলেন কৃষ্ণ। যুগে যুগে যখন পাপের ঘড়া পুর্ণ হয় তখন ভগবান স্বয়ং প্রকট হন মনুষ্যরূপে। কৃষ্ণও বিষ্ণুর অবতার মাত্র মনুষ্যরূপে এই ধরাধামে আবির্ভুত হন। তিনি দুষ্টের দমন করেন ও সৃষ্টের পালন করেন। অসুররূপী কৌরবদের পরোক্ষভাবে দমন করেন এবং নারীর সম্মান রক্ষা করে, যুদ্ধের সময় তিনি অর্জুনের রথের সাথী বেশে অর্জুনকে  নিজের বানীর দ্বারা সঠিক মার্গ দর্শন করিয়ে, বিশেষ পরামর্শ দিয়ে  সৃষ্টের পালন করেছেন। তিনি মহাভারতে অপরাজেয় যোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। কৃষ্ণের উপস্থিতির জন্যই আজ গীতা সকলের ঘরে ঘরে লক্ষ্যনীয়। গীতায় খোদিত সেই অমৃত শ্রীকৃষ্ণের বাণী মানুষকে বিভিন্ন বিপদের বেড়াজাল ভেঙ্গে সমাধান পথের মার্গ দেখায়, অন্ধকারের রাস্তা থেকে বার করে আলোর দিশা দেখায়।

যুধিষ্টির

যুধিষ্টিরের চরিত্র সকল চরিত্র হইতে ভিন্ন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক, কর্ত্যব্যপরায়ণ, উদারমনসম্পন্ন, সত্যবাদী ব্যক্তি। মিথ্যা তার কাছে পাপ। জীবনে তিনি মিথ্যা কথা বলেননি। কিন্তু যুদ্ধচলাকালীন পরিস্থিতিতে নিজেদের জয়ের জন্য ছল করে মিথ্যার আশ্রয় নেন, কিন্তু সেই মিথ্যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল সত্যতা। তিনি ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। তার চরিত্রে মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের, স্বামীর, আজ্ঞাকারী পুত্রের আসল চরিত্র ফুটে ওঠে।

দুর্যোধন

যেখানে বাঘের ভয়  সেখানেই সন্ধ্যা হয় । ব্যাপারটা ঠিক সেই রকম। যে কোন ক্ষেত্রেই নায়ক থাকলে খলনায়কও বর্তমান। খলনায়ক ছাড়া নায়ক অসম্পুর্ণ। কারন খলনায়ক বধ না করলে নায়কের স্বীকৃতি পাওয়া সম্ভবপর নয়। ঠিক তেমনই দুর্যোধনের চরিত্র। সিংহাসন লোভ, সম্পত্তির লালসা, যৌনতা, নারীর প্রতি অসম্মান, নারীকে ভোগ্যবস্তু ভাবা, নেশায় মত্ত, কূটনৈতিক বুদ্ধিসম্পন্ন, গুরুজনদের প্রতি অশ্রদ্ধাজ্ঞাপন সব মিলিয়ে  এক চরিত্রহীন, বুদ্ধিভ্রষ্ট এক চরিত্রের অধিকারী। যখন তার পাপের ঘড়াপূর্ন তখনই তার বিনাশের দামাদা বাজে। এবং পাপীর বিনাস হয়। তার চরিত্র থেকে প্রমানিত হয়  কর্ম কাউকে ছাড়ে না। অসৎ, কুকর্ম করলে শাস্তি তাকে পেতেই হয় সে শাস্তি মৃত্যুও হতে পারে।    

আপনার কি মতামত এই সকল চরিত্র সম্পর্কে। কি মনে হয় আপনার এরা সত্যি প্রধান চরিত্র নাকি এরা পার্শ চরিত্র। এদের চরিত্রে কিছু বদল হলে ভালো হত? এরা কি সত্যি এদের নিজস্ব চরিত্রে সফল নাকি কোথাও খামতি রয়ে গেছে? আপনাদের মতামত আমাদের একান্ত কাম্য।