বিধানসভা ভোটের মাঝপথে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। ইতিমধ্যেই প্রথম চার দফায় নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফার ভোট। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের প্রধান তারকা প্রচারক যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধুমাত্র তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে নয়, তার কথা শুনতে আজও লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করছেন রাজ্যের নানা প্রান্তরে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ বিজেপির সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিটা নেতাকে ভোট প্রচারে নামিয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে একাই টক্কর দিয়ে নিচ্ছেন মমতা। তার বক্তৃতা এবং জনপ্রিয়তার ধারেকাছে রাজ্যের আর কোনও নেতা এই মুহূর্তে নেই।

তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা হিসেবের বাইরে রেখে অনুসন্ধান করব আর কোন কোন তৃণমূল নেতা প্রচারে রাজ্য জুড়ে ঝড় তুলেছেন। বলতে গেলে তৃণমূল নেত্রীর পরবর্তী সেরা পাঁচ তারকা প্রচারককে তৃণমূলের অভ্যন্তর থেকে বেছে নেব আমরা।


[  ]  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-

তৃণমূলের অভ্যন্তরে এই মুহূর্তে নাম্বার টু হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেত্রীর ‘ভাইপো’ অভিষেক। তবে কেবলমাত্র ভাইপো হওয়ার যোগ্যতায় নয়, জনপ্রিয়তা এবং ধারালো বক্তৃতা দিয়ে তিনি সত্যিকারের নাম্বার টু হয়ে উঠেছেন তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রীর পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে। রাজ্যজুড়ে ভাগ করে করে প্রচার চালাচ্ছেন মমতা এবং অভিষেক। যেখানে অভিষেক ভোট প্রচারে যাচ্ছেন সেখানে তৃণমূল নেত্রী আর যাচ্ছেন না। এই তথ্যটাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা বুঝিয়ে দেয়।

সবচেয়ে বড়ো কথা বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এর পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা গুলিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে লাইভ সম্প্রচার করছে। বোঝাই যাচ্ছে তৃণমূল নেত্রীর পর জোড়া ফুল শিবিরের তারকা প্রচারক হিসেবে যদি কেউ থাকেন তবে তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।


[  ]  দেবাংশু ভট্টাচার্য-

বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় দেখা যায় দেবাংশু’কে। সত্যিই অত্যন্ত কম বয়সী এই তৃণমূল নেতা। তার নিজের দাবি মত এখনও ২৫ বছর বয়স হয়নি। কিন্তু বন্দোপাধ্যায় পরিবারের বাইরে গিয়ে তৃণমূলের আর কোনও প্রচারকের যদি রাজ্যব্যাপী চাহিদা থাকে তবে তা একমাত্র দেবাংশু’র। একেবারে অচেনা অজানা মুখ থেকে তিনি তারকা প্রচারক হিসেবে তৃণমূলের একেবারে শীর্ষে উঠে এসেছেন। তার একের পর এক ছড়া, তীক্ষ্ণ বাক্যে বিরোধীদের ছারখার করে দেওয়া ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জনপ্রিয় করে তুলেছে তাকে। তৃণমূল সমর্থকরা মার্জিত এবং ভদ্র সভাবের দেবাংশু’কে ঘিরে সত্যি উদ্বেল হয়ে ওঠেন। এবারের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী না হলেও রাজ্যজুড়ে জোড়া ফুল শিবিরের হয়ে বেশ ভালোমতোই ঝড় তুলেছেন।


[  ]  অনুব্রত মণ্ডল-

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল মূলত রাজ্যবাসীর কাছে বিতর্কিত নেতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার নিজের জেলায় বক্তা হিসেবে তৃণমূল শিবিরের আর কেউ তার ধারে কাছে আসেন না। সাম্প্রতিককালে বাংলা সংবাদমাধ্যমগুলির লাইভ টেলিকাস্টের মাধ্যমে অনুব্রত মণ্ডলের বেশ কিছু বক্তব্য শোনা গিয়েছে। গ্রাম বাংলার চলিত ভাষায় বক্তৃতা শুরু করে হালকা টেনে কথা বলা অনুব্রত মন্ডল সত্যিই বড্ড ভালো কথা বলেন। তার কথার মধ্যে যে মাটির টান পাওয়া যায় তা গ্রাম বাংলার পাশাপাশি শহরের অনেকের কাছেই খুব প্রিয়। তবে এর বাইরে গিয়ে নানান সময়ে অনুব্রতর মজার মজার মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বারেবারে ভাইরাল হয়েছে। যা বীরভূমের এই তৃণমূল নেতার জনপ্রিয়তাকে আরও শিখরে তুলে দিয়েছে।


[  ]  ফিরহাদ হাকিম-

তৃণমূলের প্রধান সংখ্যালঘু মুখ ফিরাদ ‘ববি’ হাকিম দক্ষিণ কলকাতার নেতা হলেও রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় তার বক্তৃতার বেশ ভালোই চাহিদা আছে। তাছাড়া অল্প যে কজন তৃণমূল নেতা গুছিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখতে পারেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। এই কারণে জেলাগুলিতে তাকে বেশকিছু দলীয় সভা করতে দেখা যায়। মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় না গেলে ফিরহাদ হাকিম তৃণমূল শিবিরের প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেন। তার বক্তব্যে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার ছাপ পাওয়া যায়।


[  ]  সৌগত রায়-

তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় এতদিন কলকাতা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার শহরতলী এলাকাতে মূলত দলীয় প্রচার করতেন। তবে বাগ্মী বক্তা হিসেবে তিনি চিরকাল পরিচিত। শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগ পরবর্তী অধ্যায়ে সৌগতবাবু তৃণমূলের অন্যতম প্রথম সারির বক্তা হিসেবে উঠে আসেন। বর্তমানে তার বক্তৃতার জনপ্রিয়তা তৃণমূল মহলে যথেষ্ট। এমনকি এই বর্ষীয়ান নেতা শহরের পাশাপাশি গ্রামে চলে গিয়েও বক্তব্য রাখতে যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ। তাছাড়া যথেষ্ট অভিজ্ঞ হওয়ায় তার কথার গুরুত্ব আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও।


সচেতনভাবে আমরা এই তালিকার বাইরে রেখেছি টলিউড সুপারস্টার তথা ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেব’কে। তিনি কোনদিনই সুবক্তা ছিলেন না। কিন্তু প্রচারে গিয়ে দেব যে পরিমাণ ঝড় তোলেন তা বোধহয় একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনীয়!