নিজস্ব সংবাদদাতা: ভোট প্রচারের শুরু থেকেই তৃণমূলের প্রধান স্লোগান ছিল- ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চাই’। এবার ভোটে জেতার পর সেই স্লোগানের ধারাকেই কার্যত বজায় রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্ত্রিসভায় জায়গায় পেলেন জঙ্গলমহলের তিন মহিলা। বলা যায়, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম- এই তিন জেলার জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার উন্নয়ন যেন সন্ধ্যারানি টুডু, জ্যোৎস্না মান্ডি ও বীরবাহা হাঁসদার উপরেই দায়িত্ব সঁপে দিলেন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এই তিন জেলা থেকে কোনও পুরুষ নয়, এবার শুধু এই তিন মহিলাই মন্ত্রী হলেন।

পুরুলিয়ার মানবাজারের তিনবারের বিধায়ক কাদলাগোড়ার বাসিন্দা সন্ধ্যারানি টুডু এবার জয়ের হ্যাটট্রিক করে আজ রাজভবনে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। সেইসঙ্গে এই জঙ্গলমহল পেল দুই রাষ্ট্রমন্ত্রী। পদ পেলেন বাঁকুড়ার রানিবাঁধের দু’বারের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোৎস্না মাণ্ডি ও ঝাড়গ্রামের এবারের তারকা বিধায়ক বীরবাহা হাঁসদা। উল্লেখ্য, সন্ধ্যারানি টুডু অতীতে রাষ্ট্রমন্ত্রী থাকলেও জ্যোৎস্না ও বীরবাহা হাঁসদা এবারই প্রথম মন্ত্রীত্ব পদে শপথ নিলেন। সেইজন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানিয়েছেন দু’জন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ভোটে জেতার পর সন্ধ্যারানি টুডু অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তার আগে ২০১১ সালে বিধায়ক হওয়ার বছরখানেকের মধ্যেই ২০১২ সালে তাঁকে পরিষদীয় সচিব করা হয়। অর্থাৎ ধাপে ধাপে জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার ঘরের মেয়ের রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটে। যাতে খুশি হয় গোটা জঙ্গলমহলই। বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডুর কথায়, “আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা আমি রাজ্যের কল্যাণার্থে যথাযথ ভাবে পালন করব। এবার জঙ্গলমহল আমাদের নেত্রীকে উজাড় করে ভোট দিয়েছে। বিশেষ করে মহিলারা। তাই নেত্রী সেই পুরস্কার হিসাবে এই জঙ্গলমহলের আমাদের তিন মহিলাকে নবান্নে নিয়ে যাচ্ছেন।”

অন্যদিকে, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ বিধানসভার হিড়বাঁধের জ্যোৎস্না মান্ডি ২০১৬ সালে প্রার্থী হয়েই প্রথমবার রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন। তবে বাড়িতে রাজনৈতিক আবহেই বড় হয়েছেন। তাঁর দাদু মকর টুডু সিপিএমের বিধায়ক ছিলেন। এবার মন্ত্রীত্ব পেয়ে বিধায়ক জ্যোৎস্না বলছেন, “মেয়েরা যে শুধুই হেঁশেল সামলায় তা নয়। সব কাজ করতে পারে। দিদি আমাদের উপর আস্থা রাখায় আমরা কৃতজ্ঞ।”

আরেকজন ঝাড়গ্রামের বীরবাহা হাঁসদা। তিমি সাঁওতালি চলচ্চিত্র জগতের নামকরা নায়িকা। এর আগে ঝাড়খণ্ড পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর বাবা প্রয়াত নরেন হাঁসদা। তবে ভোটের আগে তিনি তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠা করা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। বরাবর সমাজসেবার কাজে যুক্ত ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা বীরবাহা। তাঁর কথায়, “আজও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলারা যথাযথ সম্মান পান না। কিন্তু আমাদের প্রিয় মমতা দিদি সবসময় মহিলাদেরকে গুরুত্ব দেন। আজ আবার সেই কাজের প্রমাণ মিলল।”