** জেনে অবাক হতে হয় যে বাংলার ভ্যাকসিন অপচয়ের হার ঋণাত্বক,-৭%।গত দুইমাসে পশ্চিমবঙ্গ ১৩ লাখ মানুষকে মোট বরাদ্দের অতিরিক্ত ভ্যাকসিন দিতে পেরেছে।এই পরিসংখ্যান থেকেই জানা যায় যে,বাংলা শুধু ভ্যাকসিন অপচয়ই রোধ করেনি,সেটা কাজেও লাগিয়েছে।চিত্তাকর্ষক ব্যাপারটি হল এই যে, বাংলা ভ্যাকসিনের কম যোগানের উপর নজর রেখে আরও বেশি মানুষকে কিভাবে ভ্যাকসিনেটেড করা যায় সেই চেষ্টায় সফল হয়েছে।যদিও এই কম যোগানের কারণে টিকাকরণের গতি মন্থর হয়েছে।মে এর শুরুর দিকেই বাংলা -৪% ভ্যাকসিন অপচয়ের রেকর্ড গড়ে তোলে।
ক্রমশ এখন এটি -৭% এর নজির গড়েছে। কোভাক্সিনের অপচয় হার এখন শূন্য।কিন্তু, ঋণাত্বক অপচয় হার কিভাবে সম্ভব?অপচয় হার বড়জোর শুন্য হতে পারে।তার মানে কি কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন অ্যাম্পুলের মধ্যে ১০ ডোজের বেশি ডোজ দেওয়া হয়ে থাকে?আসলে ভ্যাকসিনের একটি শিশিতে দশজনকে টিকা দেওয়ার মত টিকা থেকে থাকে।কিন্তু,নির্মাতারা আরও একটি ডোজ *’ওয়েস্ট ফ্যাক্টর’* হিসাবে প্রত্যেক শিশি পিছু দিয়ে রাখে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিরিঞ্জ দিয়ে টানার সময় অল্প পরিমাণের ডোজ নষ্ট হয়ে যায়।ওই অল্প পরিমাণ ক্ষতিরই ক্ষতিপূরণের জন্য একটি বাড়তি ডোজ দেওয়া হয়ে থাকে।কিন্তু,ভ্যাকসিনদাতা যদি উৎকৃষ্ট পেশাদার হয়ে থাকেন তাহলে ওই একটি শিশি থেকেই তিনি ১১ জনকে ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হবেন।এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবার কল্যাণ আধিকারিক অসীম দাস মালাকার বলেন,”এখন ভ্যাকসিন অপচয়ের হার ৭% এবং আরও লোককে ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় এই উদ্বৃত্ত পরিমাণ আরও বাড়বে।”এক কথায় বাংলা,প্রতি ১ লাখ ডোজে ৭০০০ বাড়তি ডোজ জোগাড় করতে সক্ষম হচ্ছে।
এরূপ যথার্থতা হালে কেরালায় দেখা গিয়েছে যা,কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা প্রশংসিতও হয়েছে।কোভাক্সিনের ক্ষেত্রে,প্রাথমিকভাবে বাংলার ভ্যাকসিন অপচয় হার ছিল ১%,কেন্দ্র নির্ধারিত সর্বাপেক্ষা কাম্য অপচয় হার।সেটা এখন শুন্যতে এসে দাঁড়িয়েছে।প্রাথমিক অপচয়গুলি আসলে জনগণের ভ্যাকসিন নিয়ে বাধানিষেধের ফলাফল।১০টি ডোজ থাকা একটি শিশি মুখ খোলার চার ঘণ্টা পরেই নষ্ট হয়ে যায়।ফলে,ওই চারঘন্টার মধ্যেই ১০ জন ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দিয়ে দিতে হয়।শুরুর দিকে কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট সংখ্যক ভ্যাকসিন গ্রাহক না থাকায় এই অপচয় হয়েছে।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা অব্দি বাংলা, প্রায় ২,৪৫,২৯০০০ জন মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছে, যার মধ্যে ২৮ লাখ ডোজই প্রাইভেট সেন্টার থেকে দেওয়া হয়েছে।যতদূর জানা যায়, যখন থেকে টিকাকরণ শুরু হয়েছে তখন থেকে পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রের কাছ থেকে ১.৯৩কোটি কোভিশিল্ড ডোজ এবং ৩২ লাখ কোভাক্সিন ডোজ পেয়েছে।এছাড়া প্রাইভেট সেক্টর থেকে প্রাপ্ত ভ্যাকসিন ডোজের সংখ্যা ২৫ লাখ।বাড়তি ভ্যাকসিন থাকার আরেকটি কারণ হিসাবে বলা যায়,ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা।অল্প পরিমাণে ভ্যাকসিন সরবরাহ করার ফলে বাংলার টিকাকরণের গতিও কমেছে।জুনের তৃতীয় সপ্তাহ অব্দি প্রত্যহ ৩ লাখ ডোজ করে টিকা দেওয়া হচ্ছিল, যেটা এখন দাঁড়িয়েছে ২ লাখের কিছু বেশিতে।ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিশগড়ের মত কিছু রাজ্যে ভ্যাকসিন অপচয়ের হার সব থেকে বেশি(যথাক্রমে ৩৩% ও ১৫%)।কেন্দ্রীয় তথ্য অনুসারে,মধ্যপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবের টিকা অপচয়ের হার ৭%; ইউপি,রাজস্থান এবং গুজরাটের অপচয় হার প্রায় ৩%।সেই সূত্রে বাংলার এই পেশাদারিত্বের নজির অবশ্যই প্রশংসনীয়।