নিজস্ব সংবাদদাতা: গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনার সেকেন্ড ওয়েভের জেরে দেশজুড়ে ঝড়ের গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। মারা গিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। শুরু হয়েছে হাহাকার, স্বজন হারানোর আকুল কান্না। অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হচ্ছে হাজার হাজার নিরাপরাধ সাধারণ জনগণের। হাসপাতালের বেডে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে একেকটা প্রাণ। শ্মশানে নিভছে না চিতার আগুন, জায়গা অমিল কবরস্থানেও। এভাবেই মৃতদেহর স্তূপ জমতে জমতে পাহাড় হয়ে যাচ্ছে। আর তার মধ্যেই রাজ্যে চলছে বিধানসভা নির্বাচন।
বছরের শুরুতে করোনার প্রকোপ একটু কমতে না কমতেই রাজনৈতিক মিটিং, মিছিল, সভা, রোড শো শুরু হয়েছিল যথেচ্ছভাবে। সেখানে না মানা হয়েছে কোনও কোভিড প্রটোকল, না কোনও নিয়ম। আর সে কারণেই অধিকাংশ রাজ্যবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বিবেচনাহীন কর্মকাণ্ড দেখে। চলতি নির্বাচনে বহু তারকা প্রার্থী তৃণমূল এবং বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। ভোট প্রচারের সময় অনেকেই সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বড়সড়, লম্বা-চওড়া বক্তৃতা দিয়েছেন। অনেকেই যে কোনও প্রয়োজনে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু দেশের তথা বাংলার এমন দুর্দিনের সময়ে কোথায় গেল সেই সমস্ত প্রার্থীরা? প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরাই।
বাংলা সিনেমার পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি তৃণমূল-বিজেপি নির্বিশেষে সমস্ত তারকা প্রার্থীদেরই নিশানা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যারা যারা মানুষের জন্য কাজ করবেন কিন্তু করে উঠতে পারছিলেন না বলে অনুযোগ করেছিলেন, তাদের যোগাযোগের সমস্ত ডিটেলস সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হোক। এত বড় সুযোগ তো আর পাবেন না।’’ শুধু তাই নয়, সকলকে তিনি অনুরোধ করেছেন, দরকার হলেই এই সমস্ত প্রার্থীদের ফোন করা হোক এবং কে কেমন ভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে সেটাই খোলাখুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করা হোক।
পরিচালকের এই পোস্টের কমেন্টেই নাট্যকর্মী মধুরিমা তরফদার একটি পোস্ট করেছেন। তাতে তিনি মুকুল রায় থেকে কৌশানি মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয় থেকে রাজ চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, জুন মালিয়া, যশ দাসগুপ্ত সকলের ফোন নম্বর শেয়ার করেছেন। মধুরিমা নিজে এখন ‘নান্দীকার’ নামক নাট্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করেন তিনি। মধুরিমার ওই কমেন্টের পরই সেই পোস্টটি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সকলেই ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে সহমত হন।
আবার অনেকে এই পদক্ষেপের নিন্দাও করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যারা এখনও জনপ্রতিনিধি হয়নি, তাঁদেরকে ফোন নম্বর এভাবে খোলা বাজারে প্রকাশ করা উচিত হয়নি। এটা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। তাঁরা যদি স্ব-ইচ্ছায় নিজেদের নম্বর প্রকাশ্যে আনতেন, তবে আপত্তির জায়গা থাকতো না। এই ক্ষেত্রে সেলেবরা আরও সমস্যায় পড়বেন। কারণ, অনেকেই কোনো দরকার ছাড়া তাঁদেরকে ফোন করে বিরক্ত করতে পারেন, যেহেতু স্টারদের জীবনযাত্রা নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল বরাবরই বেশি।