ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা , যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।।
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর।।
প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসের শুক্লদ্বিতীয়া তিথিতে প্রতি ঘরে ঘরে ভাইয়ের কপালে এই মন্ত্রের দ্বারা বোনেরা টিকা এঁকে দেয়। যাকে বলি ভাইফোঁটা । ভাইয়ের মঙ্গলকামনা উপলক্ষে যমের দুয়ারে কাঁটা ফেলে যাতে যমরাজ যেন তার দুয়ার পেড়িয়ে ভাইয়ের চৌকাঠের দিকে পা না বাড়ায় । ( অনেক সময় রীতিভেদে মন্ত্রের পরিবর্তন হয়ে থাকে)।
সকল বিষয়ের পিছনে কিন্তু পৌরাণিক আখ্যান থাকে। এই ভাইফোঁটার পিছনেও পৌরাণিক ব্যাখ্যা থাকবে না তা ভাবা অসম্ভব । আর সেই ব্যাখ্যা থেকে আপনাদের আর অন্ধকারে থাকতে হবে না আজ বলব সেই অজানা কাহিনী ।অবশ্যই বলব কিন্তু তার আগে এই ভাইফোঁটার জন্ম কোথা থেকে, নামকরন ইত্যাদি ভাইফোঁটা সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
যমের দুয়ারে কাঁটা কেন ফেলা হয় তা কি জানা আছে?
যমের দুয়ারে কাঁটা ফেলা হয় যাতে ভাই বা দাদকে কোন অসুভ বিপদ স্পর্শ করার সাহস না পায়। তাই এই দিনে বোনের পার্থনার কিন্ত বিশাল জোড়। বোনের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের দ্বারা চন্দনের টিকা যখন ভাইয়ের কপালে ওঠে তখন যমের সাধ্যি থাকে না সেই ভাইয়ের কোনরূপ ক্ষতিসাধন করার। প্রতিটি বোন দিদি তার আদরের ভাই এর দাদার আয়ুর দীর্ঘ্যজীবীতার জন্য মঙ্গল কামনা করে।
নামের বিভিন্নতা
ভাতৃদ্বিতীয়া গোটা দেশে পালিত হয়। কিন্তু ভিন্ন নামে। যেমন হিন্দু ধর্মের রীতিতে বাঙ্গালীদের কাছে ‘ভাইফোঁটা’ নামে পরিচিত, পশ্চিম ভারতে এর নামকরন ‘ভাইদুজ’ নামে, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটকের দিকে একে ‘ভাইবিজ‘ বলে সকলে জানে। মহারাষ্ট্রে ‘ভাইদুজ’ এতটাই আরম্বড়ের সাথে পালন করা হয় যে যদি কারোর ভাই না থাকে তাহলে সে যাতে সেই ভাইদুজের আনন্দ উপভোগ করতে পারে বঞ্চিত না থাকে তাই চন্দ্রদেবতাকে ভাইয়ের আসনে বসিয়ে এই উৎসব পালন করা হয়। শুধু আমাদের দেশ বললেও কিন্তু একটু ভুল হবে নেপালে কিন্তু এই ভাইফোঁটা পালিত হয় কিন্তু ‘ভাইটিকা’ নামে এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলেও এই একই নামে পালন করা হয় সর্বোপরি প্রমাণিত হল যতই নামের তারতম্য থাকুক না কেন আসল উদ্দ্যেশ্য ছোটবেলার খেলার সঙ্গীটি, প্রিয় মানুষ্টির মঙ্গল কামনা করা।
আজ কার্তিক মাসের সোমবার আর সেই শুক্লাপক্ষ আর আজ ভাতৃদ্বিতীয়া, প্রতি ঘরে থেকে ভেসে আসছে উলু ও শঙ্খের ধনি, ভাইয়ের কপালে চন্দন, ঘিয়ের টিকা আঁকা হয় ।আশির্বাদী প্রদীপ জ্বলেছে, যার শিখাঁর আলত ছোঁয়া উঠছে ভাইয়ের মাথায়, মিষ্টি মুখ করিয়ে সম্পর্কের মধ্যে মধুরতা আসছে, উপহার আদান প্রদান চলছে সাথে ভালোবাসা।
কিন্তু এই রীতিটা এলো কোথা থেকে?
এর পিছনে কি ব্যাখ্যা আছে তা জানা আছে??
এই ভাতৃদ্বিতীয়া নামক যে উৎসব আমরা পালন করি এই উৎসবের ওপর নাম হল যমদ্বিতীয়া। কেন হল? কথিত আছে এই পূর্ন তিথিতে মৃত্যুর দেবতা যমরাজকে তার ভোগিনী যমুনা ফোঁটা দিয়েছিল। যমের বোন যেমন তার ভাইয়ের মঙ্গলকামনার জন্য মঙ্গলচিহ্ন এঁকেছিলেন তেমনই প্রতি হিন্দু ঘরের বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে কপালে মঙ্গলচিহ্ন আঁকে। কিন্তু এই গোটা বিষয়ের পিছনে আরও কিছু রহস্য আছে।
যম এবং যমী- ভ্রাতা ও ভগ্নী৷ ঋগ্বেদ বলছে, তাঁরাই পৃথিবীর প্রথম মরণশীল মানব-মানবী৷ যৌবনের উদ্গমে ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হতে চেয়েছিলেন যমী৷ কিন্তু যমের কাছে তা ছিল পাপ, অনাচার৷ যমী দ্বীপবর্তী নির্জন স্থানে ভ্রাতা যমের কাছে সহবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করছে৷ আর তার এই প্রার্থনায় সে কোনও দোষ দেখছে না, কারণ মাতৃগর্ভে যমজ সন্তান হিসেবে তারা তো পরস্পরের সঙ্গে একত্রবাস তথা সহবাসই করেছে৷ এবং এটাই বিধাতার ইচ্ছা যে তারা শারীরিক ভাবে মিলিত হয়ে সন্তানের জন্ম দিক৷ যম সংযত ভাবে উত্তর দিল, ভগিনী তুমি আমার সহোদরা, অতএব, অগম্যা৷ তা ছাড়া সর্বত্রগামী দেবতারা আমাদের উপর নজর রাখছেন৷ আর এই সকলের থেকে রক্ষা পেতেই ভাইফোঁটার রিতী চালু হয়।
ওপর একটি মতে, নরকাসুর নামক এক দৈত্যকে বধ করার পড় শ্রীকৃষ্ণ তার পরম প্রিয় বোন সুভদ্রার কাছে এলে সুভদ্রা কৃষ্ণের কপালে ফোঁটা দিয়ে মিষ্টি মুখ করান। আর সেই থেকে এই শুভ দিনের সূচনা হয় তারপর যুগ যুগ ধরে এই শুভ অনুষ্ঠানের ঐতিয্যবাহী উৎসব পালিত হয় প্রতিটি হিন্দু ঘরে।
তো এই ছিল ভাইফোঁটা অনুষ্ঠিত হওয়ার পিছনে মূল বিষয়বস্তু। তো এতদিন যেই ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিতে তার পিছনে যে এই জাতীয় আখ্যান ছিল তা কি জানা ছিল? তো কেমন লাগল আজকের এই প্রতিবেদন অবশ্যই আমাদের জানান।
[…] আরও পড়ুন ঃ ভাইফোটার অজানা গল্প […]