অনেক দেশে বছরের শেষ দিনটি অর্থাৎ ৩১ শে ডিসেম্বর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ‘নিউ ইয়ার্স ইভ’ পালিত হয়। বহু জায়গায় এই দিনটি ‘ওল্ড ইয়ার্স ডে’ বা ‘সেন্ট সিলভেস্টার ডে’ নামেও পরিচিত।
এই দিন সন্ধ্যায় সাধারণত একটা পার্টি রাখা হয়, যা ১ লা জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। যেখানে নাচ, গান, খাওয়া, ড্রিংক্স পান করা এবং আতশবাজি ফাটানো হয়ে থাকে।
ভারত সংস্কৃতি ঐক্যের সংস্কৃতি। ৩১ ডিসেম্বরের সন্ধ্যে থেকে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, চণ্ডীগড়, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, পুনে, কোচি এবং আহমেদাবাদের মতো বড় বড় শহরগুলিতে এই নিউ ইয়ার্স ইভ পালিত হয়… চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। আগ্রা, ভুবনেশ্বর, কয়ম্বাটোর, কটক এবং ভোদোদরার মতো দেশের অন্যান্য শহরেও উদযাপিত হয়। সমগ্র ভারত জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় বহু অনুষ্ঠান, বিভিন্ন শো আয়োজিত হয়, করা হয় পার্টির আয়োজন। এই সমস্ত পার্টিতে বড় এবং ছোট সেলিব্রিটি এবং ব্যক্তিত্বরা পাশাপাশি যোগদান করেন।
বলিউডের বিভিন্ন তারকাদের নিয়ে লাইভ কনসার্ট এবং নৃত্যের মতো অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ তাদের পরিবারের সাথে নববর্ষ উদযাপন করতে পছন্দ করে। হোটেল এবং রিসর্টগুলিও পর্যটকদের আগমনের প্রত্যাশায় সজ্জিত হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে অনেক মানুষও পুরানো ঐতিহ্য অনুসরণ করেন। খ্রিস্টানরা চার্চে যান, মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থনা করেন। আমরা বাঙালিরা উন্মাদনায় মেতে উঠি।
নতুন বছর আসার উন্মাদনা প্রতিবারই থাকে, সবার মাঝে। ২০২০ কেও আমরা সেভাবেই সাদরে অভ্যর্থনা করেছিলাম। কিন্তু একটি মাত্র নাম … ত্রাস হয়ে এ বছরটা নিয়ন্ত্রণ করে চলে। সেই ত্রাসে গৃহবন্দি এখনো বহু মানুষ। কিন্তু তা বলে তো নতুন বছর আসাটা বন্ধ থাকতে পারে না।
কিন্তু এ বছরের নিউ ইয়ার্স ইভ হবে স্বতন্ত্র। ভিড় একটু এড়িয়ে শুধু পরিচিত গণ্ডিতে নিজের বাড়িতেই করা যাক উৎসবের আয়োজন। পার্ক স্ট্রিটের আবহ গড়ে উঠুক বাড়িতে।
কোয়ারেন্টাইন নিউ ইয়ার্স ইভ:-
বিগত কয়েকটি মাস প্রতিদিন একটা করে নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি আমরা। বছরের শেষ দিন অর্থাৎ নিউ ইয়ার্স ইভে আমাফের কাজ তার প্রতি আলোকপাত করা ও নতুন ভাবে প্ল্যানিং কইরা।
শেষ দিনের সন্ধ্যাটা শুধু মাত্র পার্টি বা উৎসবে মেতে ওঠার দিন নয়, বছরের শেষ দিনটিতে একবার পিছন ফিরে তাকাতেও হয়… আমাদের আগের রেজ্যুলেশন এর খাতায় একবার চোখ বুলাতে হয়… ঠিক কতটা চেয়েছিলাম আর কতটা পেয়েছি? বা কী করবার কথা ছিল, আর কী করেছি? নিজেকে নিজেই মূল্যায়ন করার দিন, আর নতুন বছরের রেজ্যুলেশন করার দিন।
এবারে হোক কোয়ারেন্টাইন নিউ ইয়ার্স ইভ… ঘরে বসে ঘরের মানুষের সাথে একঘেয়ে দিন কাটাচ্ছি বিগত নয়-দশ মাস। এক মুখ, এক ঘর, এক আবহ… কোনো বৈচিত্র্য নেই। বাহিরের ডাক শোনা হয়নি, হয়নি পুজোর সেই উন্মাদনা… তবে কি বাদ যাবে নিউ ইয়ার্স ইভের উন্মত্ততা?
আরে! না, না… বাদ যাবে কেন? নিজের আবহ বদলে নিন, বদলে নিন পরিস্থিতি, বদলে নিন সেলিব্রেশনের স্টাইল…
১. নিউ ইয়ার্স ইভে ২০২১ কে স্বাগত জানাতে সাজিয়ে তুলুন নিজের ঘর:-
2021 এর গ্লিটার বেলুন কিনে ঘর সাজিয়ে ফেলুন। আরো প্রচুর বেলুন ও অনেক অনেক অনেক লাইট দিয়ে সাজিয়ে ফেলুন নিজের বাড়ি। ক্রিসমাস ইভে তো ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়েই ফেলেছেন নিশ্চয়, সাথে এবার পুরো বাড়ি বেলুন ও লাইটে সাজিয়ে পার্ক স্ট্রিটের আবহ তৈরি করুন নিজের ঘরেই। চেনা মানুষ গুলো অচেনা রূপে ধরা দেবে অচিরেই।
২. নিউ ইয়ার্স ইভ এ সাজিয়ে তুলুন নিজেকে:-
আপনি সন্ধ্যেটা বাড়িতেই কাটাচ্ছেন বলে ঘরের পোশাকেই দিন কাটাবেন না। পার্টিতে যাওয়ার পোশাক ও মেক আপে সাজিয়ে তুলুন নিজেকে ও পরিবারের সকলকে। আর যদি একা থাকেন তবু নিজেকে সাজান, দেখুক না ঘরের দেওয়াল গুলোই আপনাকে…!
৩. ছবিও তুলবেন কিন্তু:-
ঘর সাজানো ও নিজেকে সাজানোর পর কিন্তু ক্যামেরাকে মুক্তি দেবেন না। সেলফি তুলুন, পরিবারের সাথে তুলুন, ঘরের ডেকোরেশনের ছবি তুলুন… কিন্তু তুলুন… যত মন চায় তত ছবি তুলুন।
৪. অবশ্যই আপনার সাথী হোক ককটেল:-
একার জন্যই হোক বা পরিবারের জন্য… বানিয়েই ফেলুন ককটেল। একটু আলকোহলের স্বাদের খুব দরকার… হোক সে সামান্য… বাকিটা ফ্রুট জুস দিয়ে চালিয়ে দিন। কিন্তু ককটেল অবশ্যই যেন থাকে…
৫. কেক তৈরি করুন:-
৩১ এর সকাল থেকেই বানান সুস্বাদু কেক। আর নিজে ও পরিবারের সকলে সে স্বাদ উপভোগ করুন। কেক, কুকিস ছাড়া নিউ ইয়ার্স ইভ যেন অসম্পূর্ণ।
৬. নিউ ইয়ার্স রেজ্যুলেশন লিখে ফেলুন:-
যতই লকডাউন এফেক্ট থাক, নিশ্চয় আপনি আপনার প্রাণের প্রিয় ডায়েরিটি কিনে ফেলেছেন। টুক টুক করে আগামীর প্ল্যানিং সাজিয়ে ফেলুন। নতুন ডায়েরির গন্ধ নিতে নিতে নতুন নতুন রেজ্যুলেশন নেবার মজাই আলাদা। তবে মনে রাখবেন মজাটা তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন আপনি ডায়েরির পাতার রেজ্যুলেশনকে বাস্তবায়িত করবেন। তাই সে সন্ধ্যায় কেক ও ককটেলের পাশে স্থান পাক আপনার ভবিষ্যৎ প্ল্যানিং।
৭. গান শুনুন:-
একটু হেভি সাউন্ডে গান শুনুন। আপনার পছন্দ অন্যদের শোনান, অন্যদের পছন্দ নিজে শুনুন। পার্টি সং ও শুনতে পারেন, যদি না পাশের বাড়ির লোকে গালাগাল দেয়। আর কেউ সাথ না দিলে… একলা চলো রে… সুরে সুর মিলিয়ে হেডফোনকে স্বাগত জানান।
৮. স্ক্র্যাপবুক তৈরি করুন:-
২০২০ এক অবিস্মরণীয় বছর। একটি স্ক্র্যাপবুক করে ১২ মাসের স্মৃতি একসাথে সংরক্ষণ করুন। আপনার সৃজনশীলতা এতে প্রকাশ পাবে। গান শুনতে শুনতে নিজেকে সৃজনশীল করে তুলুন।
৯. মেমোরি জার তৈরি করুন:-
একটি কাঁচের জার নিয়ে নিজের মত সুন্দর করে সাজান। ঘরের একটা সুরক্ষিত জায়গায় তাকে স্থান দিন। তাতে ২০২১ এর ১২ মাস ধরে ঘটে যাওয়া বিশেষ ঘটনা কাগজের টুকরোতে লিখুন ও জারে রাখুন। আপনাকে ২০২২ এর নিউ ইয়ার্স ইভে সাহায্য করবে।
১০. পছন্দের খাবার খেয়ে উপভোগ করুন:-
কী খেতে মন চাইছে? মাটন বিরিয়ানি? গোটা মুরগি রোস্ট? কিছু ডিসার্ট? যেটা মন চাইছে বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন, আর তৃপ্তি করে খান। আপনার রান্না যে কোনো রেস্টুরেন্টকে হার মানাবার ক্ষমতা রাখে এটা বিশ্বাস রাখুন।
আর নতুন বছরকে এবারে এভাবেই স্বাগত জানান। হোক না এবার একটু অন্য রকম নিউ ইয়ার্স ইভ।