সারা বিশ্বে খেলা হিসেবে কোনটা সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় আজ, তা জিজ্ঞাসা করলে পৃথিবীর অন্তত নব্বই শতাংশ মানুষ বলবেন একটাই খেলার কথা, ক্রিকেট! এই খেলার ভক্ত হোক বা না হোক, ক্রীড়াপ্রেমী প্রায় সব মানুষই আজ ক্রিকেটের নানান দিক সম্পর্কে কমবেশি ওয়াকিবহাল। আর ক্রিকেটপাগল মানুষজনের অনেক পাগলামির কথা তো হামেশাই আমাদের কানে আসে। বলা হয় ক্রিকেট নাকি ‘ভদ্রলোকদের খেলা’। বাইশ গজের মধ্যে তেরোজন খেলোয়াড় যে খেলাটা খেলেন, দুনিয়ায় সেই খেলাটাকে বিশেষ সম্মানের চোখে দেখা হয়। অথচ এই খেলার ইতিহাসেও জড়িয়ে রয়েছে নানান অসম্মানজনক ঘটনা।

ক্রিকেটের মতন খেলাতেও সারা পৃথিবীতে চলে ছোটো-বড়ো নানান ধরনের বেটিং, ম্যাচ-ফিক্সিং। আরও আশ্চর্য এ-ই যে এমন সমস্ত ঘটনার সঙ্গে বারবার জড়াতে দেখা গিয়েছে সেরা খেলোয়াড়দের নামও। এই কেলেঙ্কারির জন্য এমনকি ক্রিকেটজীবন চিরতরে শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের। আর কারোর ক্ষেত্রে তত বড়ো ক্ষতি না হলেও কেরিয়ারে বড়সড় দাগ থেকে গিয়েছে। একটু জেনে নিই এমন ক্রিকেটারদের কথা-

ক্রিকেট  খেলতে গিয়ে ব্যাটিং বা   ঘুষ চক্রে নাম জড়িয়েছে যাদের ঃ

সেলিম মালিক- পাকিস্তানের একসময়ের অন্যতম সফল ক্রিকেটার সেলিম মালিক। আট-নয়ের দশকে জাতীয় দলের অধিনায়কত্বও দিয়েছিলেন ইনি। সাউথ আফ্রিকা আর জিম্বাবোয়ে ট্যুরের সময় তাঁর উপর ম্যাচ ফিক্সিংএর অভিযোগ আনা হয়। কিছুদিনের জন্য তাঁকে ব্যান করা হলেও অভিযোগ খারিজ হবার পর খেলা চালিয়ে যান তিনি। প্রায় একশটি টেস্ট ম্যাচ খেলার পর তাঁর বিরুদ্ধে আবার ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এইবার তিনি ক্রিকেট থেকে সারাজীবনের জন্য নির্বাসিত হন।

ক্রিকেট
salim mallick


গুলাম হুসেইন বদি– সাউথ আফ্রিকার এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের ক্রিকেটীয় কেরিয়ারে কুড়ি বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বেটিং কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার দরুন। এমনকি জেলেও যেতে হয় তাঁকে। তাঁর উপর তৈরি হওয়া আটটি কেসের প্রায় সবেতেই দোষী সাব্যস্ত হন বদি।


উমার আকমল– ত্রিশ বছর বয়সী এই পাকিস্তানি খেলোয়াড়কে চলতি বছরেই ক্রিকেট থেকে তিন বছরের জন্য নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ঘুষ নেবার। স্পট ফিক্সিং স্ক্যান্ডালেও তাঁর নাম উঠে এসেছে একাধিকবার।

umar akmal


মরিস ওদুম্বে– কেনিয়ার এই বিখ্যাত ক্রিকেটারকেও ম্যাচ ফিক্সিংএর সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে পাঁচ বছরের জন্য ব্যান করা হয়েছিল ২০০৪ সালে। বুকির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেবার অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয় তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও নির্বাসনের সময় কাটিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি আবার খেলায় ফিরতে পেরেছেন।


মহম্মদ আজহারউদ্দিন– ভারতবর্ষের একসময়ের বিখ্যাত এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানকে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার খোয়াতে হয় বেটিং কেলেঙ্কারির জন্যেই। বুকিদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা, তথ্যের আদানপ্রদান, এমনকি অন্য এক বিখ্যাত ক্রিকেটার হ্যান্সি ক্রঞ্জেকে বুকির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। আইসিসি এবং বিসিসিআই তাঁকে নির্বাসিত করে সারা জীবনের জন্য। যদিও পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নানান প্রশ্ন ওঠে।

ক্রিকেট
md. azharuddin


হেনরি উইলিয়ামস– সাউথ আফ্রিকার এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে তিনি নাগপুরের ওয়ান ডে ক্রিকেটে ইচ্ছে করেই খারাপ পারফরমেন্স দিয়েছিলেন। বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। অবশ্য তাঁর সাসপেনশন ছয় মাসের বেশি ছিল না।


লুই ভিন্সেন্ট– নিউজিল্যান্ডের এই খেলোয়াড়কে আজীবনের মতন ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করা হয় ২০১৪ সালে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা ম্যাচ ফিক্সিংএর সমস্ত দোষই তিনি স্বীকার করেন। তাঁর সঙ্গে অন্য কিছু খেলোয়াড়ের নামও বের হয় যাঁরা ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে সেই সময়ে জড়িত ছিলেন।


অজয় জাদেজা– উঠতি প্রতিভাধর ভারতীয় ক্রিকেটার অজয় জাদেজার ক্রিকেটজীবনে নির্বাসন পাঁচ বছরের জন্যে হলেও নির্বাসনের মেয়াদ শেষ হবার পরেও ক্রিকেটার হিসেবে তিনি বিশেষ কিছুই করে উঠতে পারেননি। যদিও এরপর তিনি অনেক রঞ্জি ম্যাচ খেলেন এবং আজ একজন ক্রিকেট কমেন্টেটর হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন।

ক্রিকেট
ajay zadeja


শেন ওয়ার্ণ– অস্ট্রেলিয়ার এই তারকা খেলোয়াড়ের নামও একসময় জড়িয়ে গিয়েছিল ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে। জন নামের এক বুকির কাছে তিনি ও তাঁর সতীর্থ মার্ক ওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিক করে দিয়েছেন বলে সেই সময় অভিযোগ ওঠে। নয়ের দশকের অন্যতম বিখ্যাত ক্রিকেট-স্ক্যান্ডাল এটি। যদিও কোনও কিছু প্রমাণিত না হবার ফলে তাঁদের কোনও শাস্তি ভোগ করতে হয়নি।

ক্রিকেট
shane warne


শান্তাকুমারন শ্রীশান্থ– বিখ্যাত এই ভারতীয় ক্রিকেটার পরিচিত ছিলেন মাঠে তাঁর বিধ্বংসী মেজাজের জন্য। ২০১৩তে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল খেলার সময় বেটিংএ জড়িত থাকার অভিযোগে। তিনি তাঁর সব অভিযোগ স্বীকার করে নিলেও পরে জানান তাঁকে দিয়ে জোর করে কনফেশনের কাগজে সই করানো হয়েছে। কিন্তু যাই হয়ে থাক না কেন, তাঁর ক্রিকেট জীবন প্রায় শেষ হয়ে যায় এই ঘটনার ফলেই।

ক্রিকেট
sreeshanth


ফলে বোঝা যাচ্ছে ‘ভদ্রলোকের খেলা’ বলে পরিচিত পৃথিবীর সবচাইতে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটেরও অন্ধকার একটা দিক রয়েছে। যা এই জগতের রথী-মহারথীদেরও চোরাবালিতে টেনে এনে ফেলে দিতে পারে। তবে এই সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সাচ্চা স্পোর্টসম্যান স্পিরিট দেখাতে পারে যেসব খেলোয়াড়, মানুষের হিরো কিন্তু তারাই, তাই না!

2 COMMENTS