তেজস্বী যাদব না কি সুশাসনবাবু? মোদী ঝড়ে বিরোধীরা উড়ে যাবে নাকি যাদব ভোটব্যাঙ্ক তাতে লাগাম পরাবে? কে নেবে পাটনার দখল? ১০ নভেম্বর এই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বিহার দখলে এগিয়ে লালুপুত্র তেজস্বী যাদব। সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষা তেমনই ইঙ্গিত করছে।
বাংলার রাজনীতিতে বিহার ভোট নিয়ে জোর চর্চা। পাটনার দখল হারালে গেরুয়া শিবিরের মনোবল ধাক্কা খাবে বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে হয়তো রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ভোটের পথে যেতে পারে বাংলায়। দলবদলের অপেক্ষায় আছেন যে নেতারা তাঁরাও জল মাপছেন। চোখ রাখছেন ফলাফলের দিকে। বাংলার ভোটের ছয় মাসও বাকি নেই। এমন সময়ে বিহার ভোটের ফল কী প্রভাব ফেলতে পারে বাংলার রাজনীতিতে? তেমন ৫ পয়েন্ট বিশ্লেষন করলাম আমরা।

D6ad o6XoAAPlGD
patrika.com

বিধানসভায় মোদী ঝড়ে প্রশ্নচিহ্ন – ২০১৪ ও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদী-ঝড়ে বিরোধী শিবির উড়ে গেলেও কোনও বিধানসভা ভোটেই বিজেপি সেই ঝড় তুলতে পারেনি। ব্যতিক্রম উত্তরপ্রদেশ। এমনকি মোদী, অমিত শাহের নিজের রাজ্য গুজরাতেও ক্ষমতায় ফিরতে বিজেপিকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। অর্থাৎ বিধানসভা ভোটে রাজ্যের নিজস্ব ‘চাহিদা’ প্রধান হয়ে উঠেছে। বিহার নির্বাচনে এনডিএ হারলে এই বিশ্লেষণে সীলমোহর পড়বে। বাংলায় তৃনমূল, কংগ্রেস এবং বামপন্থীরা এটাকেই প্রচারের হাতিয়ার করবে।

738041 modi kovind pti
DNAindia.com

বঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের সম্ভাবনা – বিহারে হেরে গেলে নিজের সম্মান রক্ষার্থে বাংলার ভোটে আরও মরিয়া হয়ে ঝাঁপাতে পারে বিজেপি। কারণ, বিহার হাতছাড়া হলে বাংলা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে প্রায় পূর্ব ভারতই বিজেপির হাতছাড়া হবে। ফলে গেরুয়া শিবির আরও মরিয়া হয়ে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মতো চরম পদক্ষেপ করতে পারে। বারবার আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কথা বলে, দিল্লি গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যপাল সেই প্রেক্ষাপট তৈরি করে রেখেছেন। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘শহীদ’ হবার সুযোগ করে দেওয়া হবে। তাতে আখেরে তৃণমূলই লাভবান হবে। সিপিএম, প্রদেশ কংগ্রেসও মমতার বিরুদ্ধে হলেও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পক্ষে নয়।

bengal election kanad
kolkata24x7

হেভিওয়েট নেতাদের দলবদল – শুভেন্দু অধিকারীর মতো যে সব নেতারা এখনও তৃণমূলে থাকবেন, নাকি বিজেপিতে যোগ দেবেন, তা নিয়ে দোনামনা করছেন, তাঁরা বিহারের ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। যদি পাটনা বিজেপির দখলে আসে তবে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা জোড়াফুল ছেড়ে পদ্ম তুলবেন, সেটা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়। শীর্ষ নেতারা দলবদল করলে বিধায়ক, কাউন্সিলার-সহ যথেষ্ট অনুগামী নিয়েই যাবেন। সেক্ষেত্রে বিহারের ফল অনেক সম্ভাবনাই তৈরি করতে পারে।

modi stick 759
indian express

দেশের অ্যাজেন্ডা নাকি রাজ্যের – রাম মন্দির, সিএএ, চীনকে রুখে দেওয়ার মতো ইস্যু নিয়ে কি রাজ্যের ভোটে জেতা যাবে? বিহার ভোট সেটা ঠিক করে দেবে। এনডিএ যদি পাটনার দখল নিতে পারে, তবে অবশ্যই বিজেপি সেটাকে কৃষি আইনের পক্ষে জনতা রায় দিল বলে প্রচার করবে। বাংলাতেও। সার্বিক ভাবে দেশের অ্যাজেন্ডাই তখন প্রাধান্য পাবে বাংলার নির্বাচনী প্রচারে। কিন্তু সেটা যদি না হয় (সেই সম্ভাবনা প্রবল), তখন কিন্তু রাজ্যবাসীর নিজস্ব অভাব অভিযোগকেই ইস্তাহারে ঠাঁই দিতে হবে। তবে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং এনআরসি-সিএএ যে একুশের নির্বাচনে বিজেপির কাছে বড় ইস্যু হতে যাচ্ছে সেটা এখনই বলে দেওয়া যায়।

Amul Bihar CM 770x433 1
Amul

মতুয়া, আদিবাসী, মুসলিম ভোট – বিহারে যেই জিতুক বা হারুক তা নিয়ন্ত্রণ করে জাতপাতের অঙ্ক। এখানে কোনও সি ভোটার বা এসি নিয়েলসন লাগে না। ৫ জন এক জায়গায় হলেই ছাপরাবাসীর আলোচনা, শোনপুরে কত যাদব ভোটার, মারহারুয়ায় কত রাজপুত ভোটার, আমনৌরে কত ভূমিহার, পারসায় কত মুসায়ার, ছাপরায় কত মুসলিম ইত্যাদি। তেজস্বী বা নীতিশ কুমার যতই চাকরি বা শিল্পের কথা বলুন না কেন প্রার্থী বাছাই করেছেন এই পদ্ধতিতেই। বাংলাতেও সেই রাজনীতিই গড়িয়ে আসছে। মতুয়া-আদিবাসী-সিডিউল কাস্ট-মুসলিম শুধু নয় বাঙালি, অবাঙালি ভোটেরও অঙ্ক কষা হচ্ছে। দলিত ইউনিভার্সিটি, অ্যাকাডেমি তৈরি তোঁ সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই। বিহারে যেই জিতুক বাংলাতেও এই জাতপাতের রাজনীতির জয়জয়কার হবে। তারপর কোনওদিন বাংলার কোনও গ্রাম থেকেও ভেসে আসবে – ‘গাধা হোই না ঘোড়া হোই হো/‌মারলা সে মুয়ারি/‌কেহু কো সুধারি হোই বিহার নাহি সুধারি।’‌ শুধু বিহারের জায়গায় বাংলা বসিয়ে নিলেই হল।