বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে কেবলমাত্র বিহারের মানুষরাই নয়, অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। এই প্রথম বোধহয় ভারতবর্ষের কোনো রাজ্যের নির্বাচনী ফল দিকে অন্য রাজ্যের রাজনীতিকদের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তবে কেবল ফলাফল প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই রাজ্যে বিহার নির্বাচনের গুরুত্ব শেষ হয়ে যায়নি। সেই ফলাফলকে কেন্দ্র করে একের পর এক তর্যায় জড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকরা। আসুন আমরা বরং দেখেনিই বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কী কী প্রভাব ফেলল।
১) মোদি ম্যাজিক অটুট আছে বলতে পারবে বিজেপি
বিহার নির্বাচনে বিজেপি তথা এনডিএর যদি পরাজয় ঘটতো, সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মোদি ম্যাজিক শেষ হয়ে গিয়েছে বলে প্রচার করত। যার নেতিবাচক প্রভাব বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কের ওপর অবশ্যই পড়তো। সেই সঙ্গে নীতীশ কুমারের ওপর মানুষ ক্ষুব্দ থাকলেও নরেন্দ্র মোদির ওপর যে মানুষের আস্থা বজায় আছে তা বিহার নির্বাচনেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের আগামী নির্বাচনে মোদিই হতে চলেছেন বিজেপির প্রচারের মুখ।
২) অন্য দলের নেতাদের কাছে বিজেপির আকর্ষণ রক্ষা পেল
বিজেপিতে যোগ দিলে রাজনৈতিক লড়াইয়ে জয় লাভ করা অনেক সহজ হবে, এই ধারণা থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বিজেপিতে যোগদান করে। বিহার নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখার ফলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পক্ষে তৃণমূল ভাঙ্গানো আরো সহজ হয়ে গেল।
৩) বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গ, এই প্রচার আরো গতি পেল
বিজেপি শিবির থেকে বারবার দাবী করা হচ্ছিল তাদের জয়রথ বিহার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে। বিহার নির্বাচনের ফলাফলকে হাতিয়ার করে বিজেপি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গে তাদের জয় অবশ্যম্ভাবী। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা হবে। তাদের এই প্রচার মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা।
৪) মিমের উত্থান
বিহার নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে হায়দ্রাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মৌলবাদী রাজনৈতিক দল মিম ৫ টি আসনে জয়লাভ করে।মূলত কংগ্রেস ও আরজেডির সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েই তাদের এই সাফল্য। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় মিমের জন্য সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার ফলেই বিহারে সরকার গঠন করতে পারেনি মহাজোট। বিহারের ফল প্রকাশের পর ওয়াইসি জানিয়ে দেন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনেও তার দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এর পরেই এই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু ভোট বিভাজন হওয়ার ভয় পেতে শুরু করেছে। সংখ্যালঘু ভোট যত বিভাজিত হবে ততই বিজেপির সুবিধা।
৫) বামেদের অক্সিজেন লাভ
গোটা দেশজুড়ে বামেদের যখন দূরবীন দিয়ে খুঁজে দেখতে হচ্ছে সেই পরিস্থিতিতে বিহারের মাত্র ২৯ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাম দলগুলি একত্রে ১৬ টি আসনে জয়লাভ করে। বিহারে বামেদের এই সাফল্য ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই রাজ্যের বামপন্থীদের নতুন করে অক্সিজেন যুগিয়েছে। তারাও বিশ্বাস করতে শুরু করেছে লড়াই পুরো শেষ হয়ে যায়নি। চেষ্টা করলে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
এখন দেখার বিহার নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব এই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকরী হয়।