বিশ্বের বিখ্যাত কিছু মানুষের বিখ্যাত ডায়েরি সম্পর্কে জানা আছে?
পৃথিবী জুড়ে এমন অনেক কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে যার রূপরেখা আঁকা হয়ে রয়েছে বেশ কিছু বছর কি যুগ আগে। বিখ্যাত মানুষেরা তাদের কাজের, গবেষণার, অনুসন্ধানের ছাপ যে যে অংশে রেখে গেছেন তা এখন সারা বিশ্বের কাছে নিদর্শন। সেসব ছাপ যে নথি বা ডায়েরিতে আছে তাও আজ স্বাভাবিকভাবেই বিখ্যাত হয়ে গেছে তাদের স্বাক্ষরকারীদের হাত ধরে।
বিখ্যাত নথি বা ডায়েরিগুলি এখন সব রাষ্ট্রের কাছেই অতি কাঙ্ক্ষিত, তাই সেগুলির নিরাপত্তা ও সুরক্ষাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বিশ্বের কাছে এত লোভনীয় বস্তু কি? কি সেই ডায়েরিগুলি? কারা সেসব ডায়েরির মালিক? আসুন এমন ৫টি ডায়েরি সম্পর্কে আজ জানা যাক।
১। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২ – ১৫১৯) –
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ছিলেন ইতালির একজন চিত্রশিল্পী। তিনি তাঁর সমস্ত ধারণা, আইডিয়া, স্কেচ বিভিন্ন টুকরো টুকরো কাগজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সব দলিলকে একসাথে একটি ডায়েরি আকারে সংরক্ষণ করা হয়। এই ডায়েরি বা নোটবুকে নানা বিষয়ে তাঁর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়।৪০ বছরের জীবনে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অন্যতম কর্মনিদর্শন হল “কডেক্স” (https://www.bl.uk/manuscripts/Viewer.aspx?ref=arundel_ms_263_f001r)।
অ্যাস্ট্রোনমি, আর্কিটেকচার বিষয়ে তাঁর অভিনব ধারণাগুলিকে কাজে লাগিয়েই অষ্টাদশ শতাব্দীতে তৈরি হয়েছে নানা পরিবহন, যন্ত্র, স্থাপত্য। তাঁর ডায়েরি বা নোটবুকের তথ্যাদি বর্তমানে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে জার্নাল (https://www.bl.uk/collection-items/leonardo-da-vinci-notebook) হিসেবে সংরক্ষিত।ইতালীয় রেনেসাঁসের যুগের সবথেকে সেরা আর্টিস্টদের অন্যতম দ্য ভিঞ্চির ৭০০০ এরও বেশি অধিক পৃষ্ঠার অলংকরণকে ২০১৩ সালে ব্রিটিশ লাইব্রেরি ডিজিটাল রূপেও সংরক্ষণ ও প্রকাশ করে।
২। থমাস এডিসন (১৮৪৭ – ১৯৩১) –
আমেরিকা নিবাসী থমাস এডিসনের কীর্তি আলোকিত করেছে সারা জগতকে। ইলেকট্রিক পাওয়ার জেনারেশন, মাস কমিউনিকেশন, শব্দ বা সুরের রেকর্ডিং, সচল চিত্র প্রভৃতি ছিল তাঁর অনন্য আবিষ্কারের অন্যতম।
৫ মিলিয়ন পৃষ্ঠার নোটবুককে ডিজিটাল ভাবে প্রকাশ করতে নিউ জার্সির রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারদের ৩০ বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মাইক্রো ফিল্ম রুপে তাঁর জীবনের যাবতীয় তথ্য, অংশ, লেখা, স্কেচ, নোটসকে পরিণত করা গেছে। বর্তমানে (http://edison.rutgers.edu/index.htm) এতে ১৭৫০০ এর মত নথি, চিত্র রয়েছে।
এডিসনের বিখ্যাত উক্তি তাঁকে সর্বস্তরের মানুষের কাছেই অনুপ্রেরণার করে তোলে –
"Genius is one percent inspiration and ninety-nine percent perspiration.
I have not failed. I've just found 10,000 ways that won't work.Our greatest weakness lies in giving up. The most certain way to succeed is always to try just one more time."
৩। চার্লস ডারউইন (১৮০৯ – ১৮৮১) –
বিজ্ঞানের দরবারে চার্লস ডারউইনের অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৩৮ সাল থেকে ডারউইন জউরনাল লেখা শুরু করেন যেখানে তাঁর তত্ত্বের বিবরণ পাওয়া যায়। এর সাথে সাথে জিওলজি, নতুন প্রজাতির সন্ধান ও তাঁর সে সম্বন্ধে ধারণা, পরিবার – পরিজনের বিষয়ে ব্যক্তিগত প্রভাব তাঁর নোটে পাওয়া যায়।
কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডারউইনের যে অনলাইন জার্নাল (http://darwin-online.org.uk/) প্রাকাশ করা হয়েছে তাতে রয়েছে ৫০০০ এরও বেশি দৃষ্টান্ত এবং ১৯৫০০০ এর বেশি সংখ্যক পৃষ্ঠার ডিজিটাল প্রতিলিপি। এটি দারুইনের দায়েরির সম্পূর্ণ প্রতিলিপি।
Charles Darwin kept numerous notebooks to record his discoveries and thoughts on everything from his first sketch of an evolutionary tree (left) to important books to read (right)
৪। মেরি ক্যুরি (১৮৬৭ – ১৯৩৪) –
মেরি ক্যুরি হলেন প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি নোবেল সম্মান লাভ করেন। এই ফরাসি বিজ্ঞানী রেডিয়েশন নিয়ে কোনও সুরক্ষা বর্ম ছাড়াই আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে যে গবেষণা করে গেছেন তাঁর সুফল আজকের বিজ্ঞানও পাচ্ছে।
খুব অল্প বয়সেই মেরি ক্যুরি রেডিয়েশনের কুপ্রভাবে মারা যান। জীবিতকালে তাঁর ডায়েরি জুড়ে যে গবেষণার ছাপ পাওয়া যায় তা থেকে একথা স্পষ্ট যে এত বছর পরেও তাঁর গবেষণায় ব্যবহৃত কোট, বোতল, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছুঁতে হলে যথেষ্ট সুরক্ষাবিধি মেনে হাত দিতে হবে। রেডিয়েশনের প্রভাব কতটা ক্ষতিকর তা তিনি তাঁর জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন।
প্যারিসে (http://www.bnf.fr/en/tools/a.welcome_to_the_bnf.html) তাঁর অন্যান্য আবিষ্কার, নোটসের সাথে জার্নালটিও সংগ্রহ করা রয়েছে।
৫। অ্যাডলফ হিটলার (১৮৮৯ – ১৯৪৫) –
জার্মান নেতা তথা শাসক অ্যাডলফ হিটলার রচিত ৬০ খন্ডের জার্নাল প্রথমে “হিটলারস ডায়েরি” নামে প্রকাশিত হয়। পরে জানা যায় ডায়েরিতে ১৯৮১ থেকে ৮৩ সালের মধ্যে জাল করে কনরাড কুজাও নামে এক জার্মান ইলাস্ট্রেটার বা অঙ্কনশিল্পী।
দ্য সানডে টাইমস পত্রিকায় এই সত্য উদঘাটিত হয়। এই পত্রিকাতেই মুসোলিনির ডায়েরির জালকান্ড প্রাকাশিত হয়েছিল। https://www.oregonlive.com/news/erry-2018/04/77d8443678/adolf_hitlers_diaries_surfaced.html
আসল অংশতে যুদ্ধের রণনীতি, হিটলারের মতামত, জীবনদর্শন বিবৃত ছিল। শক্তি ও ক্ষমতার প্রভাব আচ্ছন্ন অ্যাডলফ হিটলার তাঁর ডায়েরিতে সেই মেজাজি বজায় রাখেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর জার্মান আর্কাইভে এই বিখ্যাত ডায়েরি জায়গা করে নেয়, জাল অংশটির সাথে।
ডায়েরি নিয়ে আরও অনেক কাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশ্ব জুড়ে। সেগুলির নাগাল পেতে প্রয়োজন আরও চোখ-কান খোলা রাখা। তথ্যসমৃদ্ধ খবর করে তোলে ব্যাক্তির মননকেও সমৃদ্ধ। যা কিছু আজ বর্তমানে সৃষ্টি হচ্ছে তার ভিত লুকিয়ে আছে এমনই কতকগুলি নিদর্শনের মাঝে। রাজনীতি, বিনোদন, খেলা সব ক্ষেত্র জুড়েই বিখ্যাত মানুষদের ডায়েরি প্রমাণ করে তার গুরুত্ব শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আজও অমলিন।
সাহিত্যের আঙিনায় ডায়েরি আজ একটি পৃথক শাখা বা ধারা। ডায়েরির মর্যাদা আগামী সময়েও এভাবেই ব্যাপ্ত থাকবে সেই আশাই করা যায়। এরকম আরও খবরের জন্য পড়তে থাকুন বাংলা খবর।