নিজস্ব সংবাদদাতা: গতকাল মিটে গিয়েছে তৃতীয় দফার নির্বাচন। তবে আগের দু’দফার মত এই ভোটও রক্তক্ষয়ী। কোথাও ইট থেকে মাথা বাঁচাতে প্রার্থীকে হেলমেট পরে বুথে যেতে হয়েছে, কোথাও আবার সংঘর্ষে আহত দলীয় কর্মীকে দেখতে গিয়ে সপাটে চড় খেয়েছেন প্রার্থী। কোথাও আবার ভোট লুঠ আটকাতে গিয়ে প্রার্থীকে একাধিকবার হামলার শিকার হতে হল। রাজ্যের ৩ জেলার ৩১ আসনে তৃতীয় দফার ভোটে বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়ল এমনই টুকরো টুকরো অশান্তির ছবি। এমনকি ভোটপর্বের মাঝে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে মঙ্গলবার।
সূত্রের খবর, হুগলির গোঘাটে বিজেপি কর্মীদের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে তৃণমূলের এক বুথ সভাপতির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। এর আগে দ্বিতীয় দফার ভোটপর্ব শুরুর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুরে এক তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল। ওই দফায় ভোটপর্বের মাঝে নন্দীগ্রামে এক বিজেপি কর্মী আত্মঘাতী হয়েছিলেন। গতকাল হুগলি এবং হাওড়া জেলায় দিনভর ‘পেশিশক্তির লড়াই’ হয়েছে দুই হেভিওয়েট দলের মধ্যে। হামলার আশঙ্কায় মাথায় হেলমেট পরে ‘স্পর্শকাতর এলাকা’ মুক্তিচকে বুথ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন হাওড়ার উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজি। এলাকায় পৌঁছনোর পরেই বিজেপি সমর্থকেরা তাঁকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে বলে অভিযোগ। নির্মলের মাথা বাঁচলেও ইটের আঘাতে আহত হন তাঁর দেহরক্ষী।
তবে দিনভর অশান্তির নিরিখে এগিয়ে ছিল হুগলি। ভোটপর্বের মাঝে গোঘাটে প্রাণহানির পাশাপাশি আরামবাগ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল খাঁ-র উপর হামলা হয়েছে একাধিক জায়গায়। তাঁর মাথায় বাঁশের বাড়ি পড়তেও দেখা গিয়েছে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে। এমনকি, লাঠি হাতে মহিলাদের তাঁর উপর হামলা করতে দেখা গিয়েছে আরামবাগে। খানাকুলের তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নজিবুল করিমকেও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ। দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির বিজেপি-র দিকে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু এলাকায় দেখা গিয়েছে ব্যতিক্রমী ছবি। সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আইএসএফ-এর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গিয়েছে শাসকদল তৃণমূলকেই। ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক শওকত মোল্লা রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, বুরানগড় এলাকায় বোমা-গুলি নিয়ে সন্ত্রাস করছে আইএসএফ। তাঁকেও বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, শকুন্তলা এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে আইএসএফ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট পশ্চিমের আইএসএফ প্রার্থী মইদুল ইসলাম এবং ফলতার বিজেপি প্রার্থী বিধান পাড়ুইয়ের উপরেও তৃণমূল সমর্থকেরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ। রবিবারও হামলায় আহত হয়েছিলেন বিধান। বিষ্ণুপুরের পানাকুয়ায় হয়েছে দফায় দফায় বোমাবাজি। সেখানে সাতসকালেই এক মহিলাকে ভোট না দিতে যাওয়ার জন্য হুমকি দিতে দেখা যায় এক দুষ্কৃতীকে। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাতগাছিয়া থেকেও অশান্তির অভিযোগ মিলেছে।