বছর শেষে উৎসবের মরশুম লেগেই আছে। আমাদের দেশের নানা প্রান্তে ডিসেম্বর মাসে যে দিন গুলি উৎসবের আকারে পালিত হতে দেখা যায়, বিজয় দিবস (Victory Day) তার মধ্যে অন্যতম। প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যে চিরাচরিত দ্বন্দ্ব, যার জেরে আজও বারবার উত্তপ্ত হয় সীমান্তের পরিস্থিতি, বিজয় দিবসের সঙ্গে যে সেই ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের সম্পর্ক আছে, তা বলাই বাহুল্য।
বিজয় দিবস কী?
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছোটো বড় সমস্ত সাফল্যই দেশের মানুষের কাছে কল্যাণের।কিন্তু তবু একটি বিশেষ সাফল্যকে স্মরণীয় করে রাখতে বিজয় দিবসের উৎপত্তি।
বিজয় দিবসের ইতিহাস:
১৯৭১ সালে খান সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে যখন উত্তাল ওপার বাংলার পরিস্থিতি, তার আঁচ এসে লেগেছিল ভারতেও। ওপার বাংলার রাজনীতিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হস্তক্ষেপে মিলেছিল সাফল্য। পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম থেকে বিচ্ছিন্ন করতে, স্বাধীন বাংলাদেশ স্থাপন করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালের সেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, হাজার হাজার বাঙালির রক্তে রাঙা হয়ে যেখানে উঠেছিল স্বাধীনতার সূর্য, বিজয় দিবসের ইতিহাস সেই মুক্তির গল্প বলে। খান সেনাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেই বিশেষ বিজয় স্মরণীয় করে রাখতে ভারতে পালিত হয় বিজয় দিবস।
বিজয় দিবস কবে?
বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয় ১৬ ডিসেম্বর দিনটিকে। ১৯৭১ সালের ওই দিনেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল। গড়ে উঠেছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সেই স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর ভারতে বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বিজয় দিবসের গুরুত্ব:
১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানের সেই যুদ্ধে খান সেনাদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানকে ঘোষণা করা হয়েছিল বাংলাদেশ হিসেবে। বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র বাংলাভাষী রাষ্ট্র। সে সময় পাকিস্তানি সেনাদের প্রধান ছিলেন আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। ভারতের সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কাছে নিয়াজি এবং তাঁর অধীনস্থ প্রায় ৯৩ হাজার সেনা আত্মসমর্পণ করেছিল। ভারতের বিজয় দিবসের সেই স্মরণীয় জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা। এই দিনটি বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের কাছেও তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিজয় দিবস পালিত হয় কীভাবে?
ভারতে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠান পালিত হতে দেখা যায়। সেনাদের আত্মবলিদানকে শ্রদ্ধা, সম্মান জানানোর জন্য সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলেই নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। দেশের নানা প্রান্তে বিজয় দিবসে বিজয় মাল্য দিতে দেখা যায় নিহত সেনাদের স্মরণে।
এছাড়া, শুধু ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেই নয়, সার্বিক ভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনা বাহিনীর সমস্ত সাফল্যকেই উদযাপন করা হয় বিজয় দিবসে। আর যে সমস্ত সেনা এযাবৎ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন, স্মরণ করা হয় তাঁদের বীরত্বকেও।
রাজধানী দিল্লির সেনা স্মারক ইন্ডিয়া গেট (India Gate)-এর সামনে রাখা অমর জাওয়ান জ্যোতিকে সাক্ষী রেখে প্রতিবছর বিজয় দিবসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় শহিদদের। অনুষ্ঠান পালন করা হয় ব্যাঙ্গালোরেও।