বাজেট নামটা কানে আসলেই আমাদের নিজেদের পকেটে হাত চলে যায় । কারণ সবাই আমরা পকেটফ্রেন্ডলি হতে ভালবাসি। কিন্তু বর্তমান যা পরিস্থিতি করোনা ভাইরাসের বিশ্বজোড়া অতিমারী যে শুধু মানুষের জীবনে কোপ ফেলেছে তা নয় ভারতের অর্থনীতির গ্রাফটাও বেশ নিম্নমুখী। লকডাউন ও পরবর্তী সময়ের জেরে বেকারত্ম তকমা পেয়েছেন বহু মানুষ। কারোর আবার চাকরি থাকলেও কমে গেছে বেতন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। সম্প্রতি করোনা ভ্যাকসিনের বন্টন শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। এহেন পরিস্থিতিতে পেশ হচ্ছে সংসদীয় বাজেট।
বাজেট ২০২১: তাৎপর্য
আগামীকাল, ১ ফেব্রুয়ারি নতুন আর্থিক বছরের সাধারণ বাজেট পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন। বাজেটকে নিয়ে নানা জল্পনা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। করোনা অতিমারীর আবহে এই নতুন বাজেট পেশ করা কার্যত অর্থমন্ত্রীর ‘অগ্নিপরীক্ষা’, মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। দেশের নুইয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে এই বাজেটে। কতটা সফল হবেন নির্মলা সিতারামন? উঠছে প্রশ্ন।
বাজেট নিয়ে অবশ্য কোনোরকম চাপ নিতে রাজি নন অর্থমন্ত্রী। বরং অতিমারীর আবহে এবারের বাজেটে দেশবাসীর জন্য বেশ কিছু চমক অপেক্ষা করে আছে বলেই জানিয়েছেন তিনি। করোনা পরিস্থিতির যে ধাক্কা এসে লেগেছিল ভারতীয় অর্থনীতিতে, তা নির্মূল করার বিষয়েও নতুন বাজেট নিয়ে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী। বাজেট নিয়ে যখন এহেন উত্তেজনায় ফুটছে দেশের রাজনৈতিক তথা অর্থনৈতিক মহল, সেই আবহে ভারতীয় বাজেটের কিছু ইতিহাস জেনে নিলে মন্দ হয় না। কী বলেন? আসুন চোখ রাখা যাক ভারতীয় বাজেটের ইতিহাসে।
বাজেটের দিন:
সাধারণ ভাবে এদেশে নতুন বাজেট পেশ করার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনটিকেই বেছে নেওয়া হত। ১ মার্চ থেকে নতুন বাজেট পেশের মাধ্যমেই নতুন অার্থিক বছর শুরু হওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল ভারতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইগুলোর পাতায় পাতায় এই তথ্য পড়েই বড় হয়েছে তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু প্রচলিত এই রীতিতে কয়েক বছর আগে বদল আসে। বর্তমানে মার্চের বদলে ১ ফেব্রুয়ারি পেশ করা হয় বাজেট।
বাজেটের সময়:
শুধু তারিখ নয়, বছর কয়েক আগে পর্যন্ত ভারতে নতুন বাজেট পেশ করার সময়টাও ছিল ভিন্ন। দিনের শেষে বিকেল ৫টা নাগাদ অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করতেন, সকালে নয়। স্বাধীনতার আগে থেকেই এই রীতি চলে আসছিল। কেন হঠাৎ চিরাচরিত এই রীতিতে বদল এল? কী তার প্রকৃত ইতিহাস?
বাজেটের সময় বদলের কারণ:
বস্তুত, বিকেল ৫ টাতে ভারতীয় বাজেট পেশের রেওয়াজ প্রচলিত ছিল কারণ ব্রিটিশ শাসনের সময়কালে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের সদস্যরা ভারতের বাজেট শুনতেন। ফলে ব্রিটেনের ঘড়ির সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই নির্ধারিত হয়েছিল বাজেট পরিবেশনের সময়। এরপর স্বাধীন ভারতেও এই রীতি চলতে থাকে দীর্ঘ দিন।
১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে চিরচারিত এই বাজেট রীতিতে আসে বদল। এক বছর সকাল ১১টায় পেশ করা হয় বাজেট। ওই বছরের পর থেকে ভারতে বাজেটের জন্য ওই সময়টিই নির্ধারিত রয়েছে। এরপর প্রয়াত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বাজেট পেশের দিনটিতেও আনেন বদল। ২০১৬ সালে ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করেন তিনি। তারপর থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ভারতে বাজেট পেশ করা হয়ে থাকে।
বলা বাহুল্য, ভারতের বাজেট পেশের দিনক্ষণ বদলে দেওয়ার পিছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ব্রিটিশ শাসনের নিয়মকানুনের পরিবর্তন সাধনের বাসনা। ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় নতুন বাজেটের দিকে এখন তাকিয়ে গোটা দেশ।