নিজস্ব সংবাদদাতা: উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্ক, বিবেকানন্দ রোড, সিমলা স্ট্রিট, মধু রায় লেনের অলি গলি চষে দলের হয়ে প্রচার করে চলেছেন প্রয়াত মন্ত্রী অজিত পাঁজার পুত্রবধূ শশী পাঁজা। বাঙালি অবাঙালি নির্বিশেষে পৌঁছে যাচ্ছেন প্রতিটি মানুষের বাড়ি। আগে এই এলাকারই প্রাক্তন কাউন্সিলর ও মেয়র পারিষদ ছিলেন তিনি। তাঁর ওয়ার্ডে উন্নয়নের কাজ হয়েছে যথেষ্ট। বিধায়ক থাকাকালীন সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বাগবাজারের অগ্নিকাণ্ডের সময়েও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ছাত্র ছাত্রীদের পাঠ্য পুস্তক বিতরণ, বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা প্রভৃতি জনমুখী পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছেন। নাগরিক সমস্যার সমাধান করেছেন দ্রুত। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবার খতিয়ান তুলে ধরছেন।
কিন্তু এতকিছুর পরেও শশীর হ্যাটট্রিক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ এলাকার অবাঙালি ভোটব্যাঙ্ক। আর এর সঙ্গেই রয়েছে চোরাস্রোতে বইতে থাকা তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বও। তৃণমূলের দুই মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে ও শশী পাঁজার গণ্ডগোল বহু পুরনো। উত্তর কলকাতায় দুই বিধায়কের অনুগামীদের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা লেগে থাকার খবরও পাওয়া যায়। তবে কেবল শশী নয়, সাধন পাণ্ডের সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত পাঁজার সম্পর্কও কোনও কালেই ভাল ছিল না। পাশাপাশি শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে পুরসভার মোট ১১টি ওয়ার্ড রয়েছে৷ এর মধ্যে ১০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া ২০১৫ সালের পুরো ভোটের নিরিখে বাকি ৭, ৮, ৯, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২৪, ২৬- এই নটি ওয়ার্ডই তৃণমূলের অধীনে৷ যেটা একজন তৃণমূল প্রার্থীর কাছে স্বস্তির কথা৷
কিন্তু এখানে বরং উল্টোটাই৷ কারণ, ৭, ৮, ১০,১৭- এই চারটে ওয়ার্ডে শশী পাঁজার বিক্ষুব্ধের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। আর সেই কারণেই এই ওয়ার্ড গুলিতে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের নির্বাচনে সর্বভারতীয় ফরওয়ার্ড ব্লক দলের প্রার্থী পিয়ালি পালকে শশী হারিয়েছিলেন ১৩,১৫৫ ভোটের ব্যবধানে। এবার শশী পাঁজার বিপরীতে লড়ছেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত বামফ্রন্ট প্রার্থী জীবনকৃষ্ণ সাহা। আছেন বিজেপি প্রার্থী সন্দীপন বিশ্বাস। একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলার বুকে অভূতপূর্ব সাফল্যের পরই এই রাজ্যে পদ্ম ফোটাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়া বাহিনী।
তারমধ্যে লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। শ্যামপুকুর কেন্দ্রে রাহুল সিনহার ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মাও বজায় রয়েছে। সবমিলিয়ে খাস কলকাতার বুকে এই কেন্দ্রে গেরুয়া ঝড়ের স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ভোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই শ্যামপুকুর কেন্দ্র নিয়ে বিভিন্ন মহলে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে৷ উত্তর কলকাতায় এই কেন্দ্রটাই তৃণমূলের ভয়ের জায়গায় পরিণত হয়েছে৷ সেটা অজিত পাঁজার পুত্রবধূ শশী পাঁজারও বিলক্ষণ জানা৷ তাই শশী মুখে জয়ের ব্যাপারে যাই বলুক না, তিনি নিজেও চেনেন তাঁর ঘরশত্রু বিভীষণদের৷ কিন্তু ভোট একটা ফ্যাক্টর৷ আর তাই খানিক নরমে, খানিক গরমে কোনোমতে নিজের জয়ধারা বজায় রেখে ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছেন শশী৷