যুগ যুগ ধরে ক্রিকেট জগত ও অভিনয় জগত বরাবরই একে অপরের পরিপূরক হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে যেমন অনেক ক্রিকেটার রয়েছেন যারা হয়তো খেলোয়াড় হিসেবে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে পারেননি, তারা অভিনয় জগতে পাড়ি দিয়েছেন এবং এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন যারা সমানতালে অভিনয় ও খেলার জগত মাতিয়ে রেখেছেন। চলুন আজ সেই সমস্ত খেলোয়াড়দের একবার দেখিনিন।
১. অজয় জাদেজা
ভারতীয় খেলার ইতিহাসে অজয় জাদেজা এমন একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি মাঠে নামলেই বোলারদের কালঘাম ছুটিয়ে দিতেন। তিনি একজন সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন এবং তিনি তার জায়গায় যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে এই অসামান্য প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানটিকে ক্রিকেট জীবন থেকে চিরতরে অবসর নিতে হয়। খেলার জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে জাদেজা নিজেকে অভিনয় জগতে তুলে ধরে। ২০০৩ সালে অজয় তার প্রথম সিনেমা “খেল” দিয়ে বলিউডে আসেন। কিন্তু সেখানেও তার ভিত গড়ে তুলতে পারেন না। তাই তিনি আবার খেলার জগতে ফিরে আসেন কিন্তু একজন বিশিষ্ট ভাষ্যকার হিসেবে। অজয় জাদেজাকে “খেল” ছাড়াও কিছু সিনেমাতে ক্যামিও রোলে অভিনয় করতে দেখা গেছে যেমন – কাই-পো-চে, পাল পাল দিল কে সাথ।
২. বিনোদ কাম্বলি
খেলার জগতের এক অসামান্য প্রতিভাবান ব্যক্তি বিনোদ কামলি। বিনোদ তার প্রতিভার জোরে খুব তাড়াতাড়ি উন্নতির দিকে এগোচ্ছিলেন কিন্তু তার অতিরিক্ত আত্মভরসা ও অনিয়মানুবর্তিতা মূলক জীবন তার প্রতিভার উপর কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে বিনোদ কে ভারতীয় খেলার জগত থেকে খুব তাড়াতাড়ি অবসর নিতে হয়। খেলার জগত থেকে চলে আসার পর বিনোদ অভিনয় জগতে একটি সুযোগ পান। ২০০০ সালে “আনারাথ” নামে একটি সিনেমা তিনি করেন কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেই সিনেমাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিনোদ আবার খেলার জগতে ফিরে জান একজন ধারাভাষ্যকার হয়ে। পরবর্তী জীবনে তিনি বিভিন্ন সিরিয়াল ও ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন। এই মুহূর্তে তিনি একজন ক্রিকেট কোচ হিসেবে কাজ করছেন।
৩. কাপিল দেব
ভারতীয় খেলার ইতিহাসে এক অন্যতম অধিনায়ক ও অসামান্য ক্রিকেটার হলেন কাপিল দেব। কাপিল দেবের আত্মবিশ্বাসই ছিল তিরাশির ওয়ার্ল্ড কাপ জয় এর প্রধান কারণ। খেলার জগতের পাশাপাশি তিনি অভিনয় জগতেও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। “ইকবাল” নামে ছবিটিতে তার অভিনয়ের ঝলক দর্শকদের যথেষ্ট মনোরঞ্জন করেছিল। এছাড়াও মুঝসে শাদি করোগি, স্ট্যাম্পড বিভিন্ন ছবিতে কপিল দেবের অভিনয় দর্শকদের নজর কাড়ে।
৪. সালিল অঙ্কলা
সালিল অঙ্কলা একজন ক্রিকেটার হিসেবে সফল হতে না পারলেও তিনি একজন অভিনেতা হিসেবে যথেষ্ট সফল। সালিল প্রথম একজন ক্রিকেটার হিসেবেই দর্শকদের সামনে আসেন কিন্তু তার ভাগ্য তার সাথে থাকে না। পা নিয়ে গভীর অসুখের শিকার হন এবং তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন। একজন অসফল ক্রিকেটার থেকে তিনি নিজেকে অভিনয়জগতে তুলে ধরেন এবং ধীরে ধীরে তার অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মনে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে তোলেন। সালিল প্রথমে বেশ কিছু ধারাবাহিক করার সুযোগ পান যেমন- চাহাত ওড় নাফরাত, কোরা কাগজ, কর্মফল দাতা শনি প্রভৃতি। সালিল বিভিন্ন সিনেমাতেও কাজ করেছেন যেমন- কুরুক্ষেত্র, পিতা, তেরা ইন্তেজার প্রভৃতি। ক্রিকেটার হিসেবে না হলেও তিনি একজন সফল অভিনেতা হিসেবে বরাবর দর্শকদের মনে রয়েছেন।
৫. ইউগরাজ সিংহ
ক্রিকেট জগত ও অভিনয় জগত দুটিতেই সমানতালে মাতিয়ে রেখেছেন ইউগরাজ সিংহ। ইউগরাজ প্রথমদিকে একজন সফলতম ক্রিকেটার হিসেবে আসেন এবং নিজের প্রতিভার মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেট টিমে একটি জায়গা করে নেন। কিছু বছর খেলবার পর তার চোটের জন্য তিনি অবসর নিয়ে নেন। অবসরের পর তিনি পাঞ্জাবি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে যোগদান করেন। এখন অব্দি ৩০ এরও বেশী পাঞ্জাবি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন ও কিছু হিন্দি সিনেমাতেও তিনি কাজ করেছেন। যেমন- ভাগ মিলখা ভাগ, সিং ইস ব্লিং প্রভৃতি। ইউগরাজ সিংহ এর ছেলে যুবরাজ সিংহ ভারতীয় ক্রিকেট টিমের এক অন্যতম খেলোয়াড়।
৬. ইরফান পাঠান
ভারতীয় ক্রিকেটের এক বিখ্যাত বোলার ইরফান পাঠান। ইরফান নিজের অসাধারণ বোলিং দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের এক পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন। কুড়ি বছর ধরে ইরফান নিজের প্রতিভার প্রদর্শন করে এসেছেন। ক্রিকেট জগতের বাইরেও ইরফান নিজের দক্ষতাকে তুলে ধরতে পেরেছেন। এই বছরই তার অভিনীত প্রথম সিনেমা দেখতে পাওয়া যাবে। ইরফান একটি তামিল সিনেমায় কাজ করেছেন যার নাম “কোবরা”। সিনেমাটি তামিল-তেলেগু এবং হিন্দি ভাষায় মুক্তি পাবে।
৭. হরভজন সিং
ক্রিকেট জগতের আরেকটি অন্যতম তারকা হরভজন সিং। নিজেরা অভাবনীয় প্রতিভা দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের এক অংশ হয়ে ওঠেন। একজন বিখ্যাত বোলার হিসেবে তিনি দর্শকদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়। এবার ক্রিকেট জগত থেকে বেরিয়ে অভিনয় জগতেও তার জীবনের নতুন ইনিংস তৈরি করতে শুরু করেছেন। হরভজন “দিক্কিলনা” নামে একটি তামিল সিনেমায় কাজ করেছেন, যেটি এখনো মুক্তি পায়নি।
৮. শ্রীশান্ত
বিভিন্ন কারণে ক্রিকেট জগত থেকে শ্রীশান্ত বহুদিন আগেই বেরিয়ে গেছেন। ক্রিকেট জগত থেকে বিরতি নেবার পর তিনি তার ভাগ্য পরীক্ষা করতে অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত হলেন। প্রথমে তামিল সিনেমায় কাজ করার পর বলিউড কিছু সিনেমাতেও কাজ করেছেন। যেমন- আকসার টু, টিম ফাইব ইত্যাদি।
৯. শচীন তেন্ডুলকর
ক্রিকেট জগতে একজন সফলতম ক্রিকেটার হিসেবে সর্বদাই রাজ করেছেন। কোন ছোট বয়সে ক্রিকেটকে ভালোবেসে তিনি জগতে পদার্পণ করেন এবং দেখতে দেখতে ক্রিকেট জগতে রাজ করেন। শচীন তেন্ডুলকর বিশ্বের এমন একজন ক্রিকেটার যিনি নিজের অর্ধজীবন ক্রিকেটকে সমর্পিত করেছেন। সব সময় তার মুখে শোনা গেছে এক কথা যে তিনি কিছু পাওয়ার জন্য খেলেননি, বরং খেলাই তাকে অনেক কিছু পাইয়ে দিয়েছে। শুধু খেলার জগতই নয় শচীন নিজেকে অভিনয় জগতেও প্রমাণ করেছেন তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক সিনেমা “শচীন: আ্য বিলিয়ন ড্রিমস” এর মাধ্যমে। শচীন তেন্ডুলকর নিজের পুরো জীবনটাকে দর্শকদের সামনে এই সিনেমাটির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
১০. নভজোৎ সিং সিধু
তিনি এমন একজন ক্রিকেট তারকা যাকে এক নামে সমগ্র দেশ চেনে। যার ব্যক্তিত্বের মধ্যেই তার উন্নতির রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। নভজোৎ সিং সিধু নিজের জীবনের প্রথম দিকে একজন সফলতম ক্রিকেটার হিসেবে ভারতীয় টিমে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নেন। তিনি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তার পারদর্শিতার মাধ্যমে নিজেকে এক অন্য জায়গায় পৌঁছে দেন। ক্রিকেট জীবন থেকে অবসর নেয়ার পরেও সিধু নিজের ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে বরাবরই চর্চায় থেকেছেন। কখনো ভাষ্যকার, কখন অভিনেতা, কখনো রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক বা কখনো রাজনীতিবিদ, প্রত্যেকটি পার্টে নভজোৎ সিং সিধু নিজেকে বরাবরই প্রমাণ করেছেন।
এক জনের নেই। তিনি হলেন সুনীল গাভাস্কার। তিনি একটি মারাঠি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছিলেন।
[…] শচীন তেন্ডুলকার না বিরাট কোহলি কে কার থেকে বেশী এগিয়ে? এই বিষয়ে তর্ক ও বিতর্ক লেগেই থাকে। দুইজনই ক্রিকেট জগতের দুই অন্যতম প্রতিভা। প্রতিভায় কেউ কারো থেকে কোন অংশে কম যান না। একজন নব্বইয়ের দশকে ক্রিকেট জগতকে নিজের প্রতিভায় মাতিয়ে রেখেছিলেন, আবার আরেকজন নিজের গুণ এর দ্বারা নিজেকে ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তবে চলুন দেখে নেয়া যাক পরিসংখ্যানে কে কার থেকে বেশি এগিয়ে। […]