লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। আর সেই সাফল্যের ক্ষীর খেতে বিভিন্ন দল থেকে গেরুয়া শিবিরে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। এই প্রবল ঢেউয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন বিজেপির পুরানো নেতারা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল, আদি-নব্য দ্বন্দ্ব এবং পদ না পাওয়ার ক্ষোভ। এখানে আমরা সেরকম ৫ নেতাকে নিয়ে আলোচনা করলাম যারা রীতিমতো কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন বঙ্গ বিজেপিতে।
১। দুধকুমার মণ্ডল – যে সময় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অস্তিত্ব দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হত সেই সময় থেকে বীরভূমে বুক চিতিয়ে পদ্মপার্টি করছেন দুধকুমার। কর্মী-সমর্থকরা বলেন শের-দিল (সিংহ হৃদয়) কার্যকর্তা। দু’বার স্থানীয় ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতের প্রধান এবং দু’বার ওই এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও হন। দলের হয়ে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করেন বিধানসভায়। পরবর্তী কালে রাজ্যে নেতৃত্ব তাঁকে বীরভূমের জেলা সভাপতি পদে বেছে নেয়। দুধকুমারের দাপটেই পাড়ুই, মাখড়া-সহ বোলপুর ও সিউড়ি মহকুমার বড় অংশের গ্রামীণ এলাকায় মজবুত সংগঠন গড়ে তোলে বিজেপি। সে সময় তৃণমূলের দাপুটে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিতেও দেখা যেত তাঁকে।
২। পরেশচন্দ্র দাস – লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সুনীল মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন। দিল্লীর বাসিন্দা। পেশায় ছিলেন আইএএস অফিসার। কিন্তু ব্রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দলের মধ্যেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন পরেশবাবু। মুসলমানদের নিয়ে দলের নীতি ঠিক কি, জানতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই নিয়ে প্রবল সমালোচনাও হয়। তারপর থেকেই ক্রমশ দলে কোনঠাসা হয়ে পরেছেন পরেশ।
৩। শুভ্রাংশু রায় – বাবা মুকুল রায়ই বিজেপিতে এনেছিলেন শুভ্রাংশুকে। এখনও পর্যন্ত দলের কাজে তাঁকে খুব একটা সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। মেলেনি পদও। এনিয়ে শুভ্রাংশু নিজেও ক্ষুব্ধ। অনেকে বলেন, বিজেপির অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার শুভ্রাংশু। সম্প্রতি তাঁর একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি লিখেছিলেন, ‘রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিলে কেমন হয়?’ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগেও এমনই একটি পোস্ট করেছিলেন শুভ্রাংশু। লিখেছিলেন, ‘অগ্নিপরীক্ষা দিতে দিতে আমার হৃদয়টাই ঝলসে গিয়েছে।’ তারপরেই তৃণমূল ছেঁড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। এবারও মুকুলের ‘হাপুন’ দলবদল করেন কিনা সময়ই বলবে।
৪। শঙ্কুদেব পান্ডা – তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কুদেব পাণ্ডা লোকসভা ভোটের ঠিক আগেই বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। তাঁর আশা ছিল বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি লোকসভার টিকিট পাবেন। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়নি। ২০২১-এর বিধানসভা জয়ের লক্ষ্যে বঙ্গ বিজেপিতে বেশ কিছু সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে। কিন্তু সেখানেও শঙ্কুদেবের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। তৃণমূলে যারা তাঁর সমসাময়িক ছিলেন সেই সৌমিত্র খাঁ বা নিশীথ প্রামাণিকেরা ইতিমধ্যেই বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হয়েছেন। এমন অবস্থায় শঙ্কুদেব মনে করছেন বিজেপিতে তাঁর বিশেষ ভবিষ্যৎ নেই। তাই আবার তৃণমূলে ফেরার কথা ভাবছেন তিনি।
৫। রাহুল সিনহা – জাতীয় সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রাহুল সিনহাকে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে অনুপম হাজরাকে। তারপর থেকেই অভিমানী তিনি। রাহুলের নিজের কথায়, ‘৪০ বছর বিজেপি করার এই পুরস্কার পেলাম! তৃণমূল থেকে নেতা আসছে তাই আমাকে সরতে হল। এর থেকে দুর্ভাগ্যের কিছু হতে পারে না।’ দল ছাড়ার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও দিয়েছেন। সংগঠনের কাজেও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। বিজেপির নবান্ন অভিযানের সময়েও গোঁসা ঘরে খিল দিয়েছিলেন। তবে অমিত শাহর বাংলা সফরের সময় ফের দেখা গেছে তাঁকে। তবে সেটা সাময়িক কিনা তা সময়ই বলবে।