ফুচকা, গোলগাপ্পে পানি কা বাটাশা বা পতাশা, গুপ চুপ, ফুলকি, পাকোদি – নানা নামে দেশ ব্যাপী বিরাজমান স্ট্রিট ফুডের রাজা, ফুচকা। খুব কম সংখ্যক মানুষজন ফুচকা ভালোবাসেনা এমন দাবি করতে পারে। লকডাউনেও ফুচকা-র বিরহে কাতর হয়ে মানুষজন বাড়িতেই বানাতে শুরু করেছিল ফুচকা। এমন বিখ্যাত একটা খাওয়ারের ইতিহাস কি জানতে মন চায়না? তাহলে এই লেখাটি শেষ অবধি পড়ে ফেলুন।
৬০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে মনে করা হয় ভারতে প্রথম ফুচকা-র জন্ম।প্রাচীন ভারতের ১৬টি মহাজনপদের (সংস্কৃত ভাষায় মহান রাজ্য) অন্যতম, মগধ সাম্রাজ্য (বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বিহারে গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত)। মগধ এবং এর রাজধানী পটলিপুত্রের প্রাণবন্ত বিবরণ গ্রীক ইতিহাসবিদ মেগাস্থিনিস এবং চীনা বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী ফা-হিয়েন এবং হিউয়েন সাং-এর ভ্রমণ ডায়েরিতে পাওয়া যায়।
এটি বিশ্বাস করা হয় যে ফুলকি (ফুচকার পূর্বসূরী) খাওয়ার প্রচলন প্রথম দিকে মগধে এমন এক সময় উত্থিত হয়েছিল যখন এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পদ যেমন চিতবা, পিঠা, তিলবা এবং ধানের চিড়ে বিকশিত হয়েছিল। তাদের উদ্ভাবনকারী রন্ধনসম্পর্কীয় প্রতিভা ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেছে। তবে আশা করা যায় এই সময়েরই কোনো এক রন্ধনশালায় জন্ম হয়েছিল ফুচকার।
আক্ষরিক অর্থেই “যা নেই মহাভারতে,তা নেই ভূ ভারতে”। ভারতের এই প্রিয় পদটিও স্বমহিমায় বিরাজ করছে মহাভারতের আখ্যানে।মহাভারতে সদ্য বিবাহিত দ্রৌপদী তার শাশুড়ি কুন্তির বাড়ি ফিরে আসেন। পান্ডবরা তখন নির্বাসনে ছিলেন এবং কুন্তি পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন যে তার নতুন পুত্রবধূ দুর্লভ সংস্থান দিয়ে সংসার পরিচালনা করতে সক্ষম হয় কি না।
তাই তিনি দ্রৌপদীকে কিছু উচ্ছিষ্ট আলু সাবজি এবং যথেষ্ট পরিমাণ গমের আটা দিয়েছিলেন একটিমাত্র পুড়ি তৈরি করার জন্য। তাকে এমন খাবার তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন যা তার পাঁচটি ছেলের ক্ষুধা মেটাতে পারে। মনে করা হয় যে এই সময়ই নববধূ পানীপুরী বা ফুচকার আবিষ্কার করেছিলেন। পুত্রদের কৌতূহল দেখে মুগ্ধ হয়ে কুন্তি এই পদকে অমরত্ব প্রদান করেছিলেন।
যদিও এই সুস্বাদু পদটির উত্পত্তি এখনও ঐতিহাসিক নির্ভুল তথ্যের সাথে বেঁধে দেওয়া যায়নি, তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে ফুচকা পুরো ভারত জুড়ে ভ্রমণ করেছে এবং এই বিশাল দেশটি এই পদটির প্রেমে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে, প্রতিটি অঞ্চল তার পছন্দ অনুসারে এর নিজস্ব সংস্করণ বিকাশ করেছে এবং সংমিশ্রণের ফলে পদটির অনেকগুলি পরিবর্তন ঘটেছে। তা সত্ত্বেও নানা স্বাদে,নানা রূপে ভারতীয়দের হৃদয়ে চির বিরাজমান একটি পদ হয়ে বেঁচে থাকবে_ফুচকা।