ফিটনেস ফ্রিক খেলোয়াড়
ক্রিকেট খেলার জন্য জরুরি
“Don’t limit your challenges, challenge your limits”-
ক্রিকেট বিশ্বের সমস্ত বিখ্যাত খেলোয়াড় এই মন্ত্রটি মেনে চলেন। না হলে তাঁরা তাঁদের ক্ষেত্রে শীর্ষে উঠতে পারতেন না। আর খেলাটার নাম যদি হয় ক্রিকেট, তবে তো আর কথাই নেই। ক্রিকেটদুনিয়ার সমস্ত কিংবদন্তী তাঁদের সমস্ত সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই বহুদূর উঠে আসতে পেরেছেন। আর ক্রিকেটার হোক বা অন্য কোনও খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষ, এঁদের প্রত্যেকের জন্য সবচাইতে জরুরি হল শারীরিকভাবে ফিট থাকা। বিশেষ করে ক্রিকেটে তো মাঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাম ঝরিয়ে যেতে হয়। প্র্যাকটিসেও দিতে হয় নিজের সেরাটাই।
ফলে শরীরের কলকব্জা ঠিকমতন কাজ যদি না করে, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং কোনটাই ঠিকমতন করা সম্ভব হয় না। সারা পৃথিবীতেই তাই একটা বয়সের পর বাইশ গজে দাঁড়িয়ে থাকার শারীরিক জোর কমে যাবার ফলে অবসর নেন ক্রিকেটাররা। কখনও কখনও সমালোচকদের নানান মন্তব্যের সম্মুখীনও হতে হয় তাঁদের। ফিজিকালি ফিট থাকতে না পারার জন্য ফর্ম বজায় থাকছে না, বয়স হয়ে গিয়েছে, শরীরচর্চার প্রয়োজন, ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া উচিত- এমন বহু তির্যক মন্তব্যের সামনে অসংখ্যবার পড়তে হয়েছে ভারতের অনেক কিংবদন্তী ক্রিকেটারকেও। অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেটের জাতীয় দলে এখনও এমন বহু খেলোয়াড় রয়েছেন যারা ফিটনেসে টেক্কা দিতে পারেন বিশ্বমানের যে কোনও সফল ক্রীড়াবিদকেও। একটু জেনে নিই তাঁদের কথা-
বিরাট কোহলি– ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট টিমের বর্তমান অধিনায়ক এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের অন্যতম ফিটেস্ট মানুষ। ২০০৮ সালে জাতীয় দলে ঢোকার সময়ে শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ব্যতিব্যস্ত না হলেও পরবর্তী বারো বছরে ছবিটা পাল্টে গিয়েছে অনেকটাই। এই সময়ে ভারতের অন্যতম সফল ক্রিকেটারদের তালিকায় জায়গা করে নেবার পাশাপাশি সবচাইতে ফিট ক্রিকেটার দের মধ্যেও অন্যতম হয়ে উঠেছেন বিরাট কোহলি। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেদের দাবি দিনের মধ্যে অনেকটা সময়ই জিমে কাটান এই তারকা ক্রিকেটার। খান ব্যালান্সড ডায়েট। ফলে ফিজিকালি ফিট থাকবার জন্য পরিশ্রম করতেও যে তিনি পিছপা নন তা বোঝা কঠিন নয়।
মহেন্দ্র সিং ধোনি– ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ফিজিকালি ফিট থাকবার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে কাটান না ঠিকই। কিন্তু ঘড়ি ধরে ভীষণ কঠিন রুটিনে তাঁর সারা দিন কেটে যায়। সাইত্রিশ বছরের এই ক্রিকেটার ভারতকে ক্রিকেটের বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন এবং অবসরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাঁর শারীরিক সক্ষমতা অন্যান্য অল্পবয়সী খেলোয়াড়দের কাছে ঈর্ষণীয়। সকালে প্রচুর ফল ও দুধ দিয়ে দিন শুরু হয় তাঁর। আর ম্যাচের দিনগুলোয় টাটকা ফলের রস আর প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ পানীয় তাঁকে সতেজ ও স্বতঃস্ফূর্ত রাখে।
হার্দিক পাণ্ড্যেয়া– ভারতীয় ক্রিকেটের যথেষ্ট বিতর্কিত কিছু নামের মধ্যে হার্দিক পাণ্ড্যেয়ার নাম করা হয় সবার আগে। কিন্তু দুর্ধর্ষ এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান যে ফিটনেস ফ্রিক , তা অনেকেই জানেন না। অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় হার্দিকের এইট প্যাকের সুঠাম চেহারা ও জিম করার নানান ভিডিওর সঙ্গে কমবেশি সবাই আমরা পরিচিত। এই পেশিবহুল চেহারা ধরে রাখার জন্য এই খেলোয়াড় দিনের মধ্যে অনেকখন ব্যয় করেন জিমে। খাবার খান তেল মশলা ছাড়াই। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পোস্ট করা শারীরিক কসরতের ভিডিও দেখলেই টের পাওয়া যায় হার্দিকের এই অত্যন্ত ফিট থাকার পিছনের রহস্যটা কি!
রবীন্দ্র জাদেজা– ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই উঠতি তারকা নিজের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে সবসময়েই ভাবনাচিন্তা করেন। আইপিএল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, সবেতেই এই খেলোয়াড় নিজের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। রবীন্দ্র জাদেজার মতে শরীর সচল রাখার সবচাইতে ভালো উপায় হল দৌড়নো। ট্রেডমিল হোক বা মাঠ, ওয়ার্ম আপ করার আগে দশ থেকে পনের মিনিট দৌড়নো তাঁর রোজকার রুটিন। এছাড়া ঠিকঠাক ডায়েট তো রয়েছেই।
কে এল রাহুল– ইনিও ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের উঠতি তারকা। যদিও বিতর্ক এঁকে নিয়েও অনেক রয়েছে তবুও ক্রিকেটার হিসেবে এখনও পর্যন্ত এঁর অবদানকে ছোটো করে দেখার কোনও কারণ নেই। সতীর্থ খেলোয়াড়দের মতনই স্বাস্থ্য সচেতন কে এল রাহুল। সবসময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর যে ফিট এন্ড ফাইন চেহারার দেখা মেলে তা নিয়মিত শরীরচর্চার ফল। জিমের সমস্ত রকমের ওয়ার্কআউটই তাঁর পছন্দের। বিশেষ করে পায়ের কসরতের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেন ইনি। শরীর ঠিক রাখতে সাঁতার আর যোগাসনও তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে খেলার দুনিয়ায় ফর্মে থাকতে হলে সবচাইতে জরুরি হল নিজের শরীরের প্রতিটি পেশিকে সচল রাখা এবং শরীরচর্চা নিয়মিত করা। ভারতবর্ষের তাবড় ক্রিকেটাররা কিন্তু এই নিয়ম মেনেই চলেন। আমাদেরও কিন্তু সুস্থ আর সতেজ থাকার জন্য এঁদের রুটিন কিছুটা অন্তত ফলো করার চেষ্টা করাই উচিত, তাই না!