নিজস্ব সংবাদদাতা: শাহরুখ খান অভিনীত বীর-জারা সিনেমার কথা মনে আছে? সেই সিনেমায় বিনা অপরাধে পাকিস্তানের জেলে প্রায় ২০ বছর বন্দি ছিলেন কিং খান অভিনীত বীর চরিত্রটি। শেষ অবধি নিরপরাধ প্রমাণ হয়ে ফিরে এসেছিলেন নিজের দেশে। এবার এমনটাই ঘটল ঘর বাস্তবে। বিনা অপরাধে প্রতিবেশী দেশের জেলে প্রায় দু’দশক বন্দি থাকার পর মুক্তি পেয়ে ফের দেশের মাটিতে পা রাখলেন ৬৫ বছরের হাসিনা বেগম।
ভারতে ফিরে তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি এখন স্বর্গে আছেন। আবারও যে নিজের দেশ, নিজের মাটি, নিজের মানুষজনের ভিতরে ফিরতে পারবেন ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে আসছিল সেই আশা। অবশেষে সব সংশয় দূর হয়েছে। গতকালই ভারতে ফিরেছেন পাকিস্তানে বন্দি থাকা বৃদ্ধা। উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারিই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ভারতের তরফে ২৬৩ জন পাকিস্তানি নাগরিক ও ৭৭ জন মৎস্যজীবীকে মুক্তি দেওয়া হবে। একই ভাবে ৪৯ জন ভারতীয় নাগরিক ও ২৭০ জন মৎস্যজীবীকে মুক্তি দেবে পাকিস্তানl
বছরের পর বছর পেরিয়ে গিয়েছে। বারবার চেষ্টা করেও হাসিনা বেগম প্রমাণ করতে পারেননি তিনি নির্দোষ। তবে সত্যের জয় শেষ অবধি হয়েছে। তাই দেশে ফিরে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত হাসিনা। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে গতকাল তিনি জানিয়েছেন, ”অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। অবশেষে দেশে ফিরে শান্তি পেলাম। মনে হচ্ছে যেন স্বর্গে রয়েছি। জোর করে আমাকে আটকে রেখেছিল পাকিস্তান।”
কিন্তু কেন তাঁকে আটক করেছিল ইসলামাবাদ? ১৮ বছর আগে হাসিনা পাকিস্তানে এসেছিলেন স্বামীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু গণ্ডগোল বাঁধে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলাতেই। লাহোর পুলিশকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁর কথায় কান দেয়নি। জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় নিরপরাধ মহিলাকে। বন্দি হাসিনা বারবার আবেদন করেছেন। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি। পেরিয়ে গিয়েছে বছরের পর বছর।
অবশেষে এতবছর পরে বরফ গলার পিছনে রয়েছে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ পুলিশ। ঔরঙ্গাবাদের থানায় নিখোঁজ ডায়রি করা হয়েছিল তাঁর নামে। সেই রিপোর্টই এসে পৌঁছয় লাহোর প্রশাসনের হাতে। পরিষ্কার হয় তাঁর পরিচয়। এরপরই তাঁর মুক্তির ব্যাপারে পদক্ষেপ করে পাক পুলিশ। ঔরঙ্গাবাদের পুলিশের কাছে তাই কৃতজ্ঞতার শেষ নেই হাসিনার। গত সপ্তাহেই তাঁকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। সমস্ত নিয়ম মেনেই তাঁকে তুলে দেওয়া হয় ভারতের হাতে।