তাপমাত্রার পারদ নিম্নমুখী, শীতের আমেজে মন টা একটু উরু উরু করছে? কাছে পীঠে কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে? তাহলে ঘুরে আসুন এই পাঁচটি জায়গায়।
১) ক্ষীরাই
বাংলার ফুলের উপত্যকা ক্ষীরাই। এখানে বিঘার পর বিঘা বাহারি ফুলের বাগান ঠিক যেন রূপকথার দেশ। এখানে হয়তো আপনি বরফে ঢাকা পাহাড়ের চুড়া দেখতে পাবেন না । তবে পাবেন বাংলার নির্ভেজাল স্বাদ ও নদী-ঘর-মাঠ-মানুষ নিয়ে ভরা প্রকৃত ‘বাংলার মুখ’। ভাবছেন কি কিরে যাবেন? হাওড়া থেকে খড়গপুর বা মেদিনীপুর গামী ট্রেন ধরুন, আর বেড়িয়ে পড়ুন ক্ষীরাইয়ের উদ্দ্যেশ্যে। সময় লাগে আনুমানিক দেড় থেকে দু-ঘন্টা। ক্ষীরাই স্টেশনে নেমে তিন নম্বর লাইন ধরে পাঁশকুড়ার দিকে প্রায় ২০ মিনিট মতো হেঁটুন। সরু মাটির রাস্তা বরাবর কিছুদূর যাওয়ার পর পড়বে কসাই নদীর দুদিকে রং বে রঙের ফুলে ভরা ক্ষীরাই।
২) দেউলটি
কলকাতা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটারের দূরত্বে নির্ভেজাল প্রকৃতির কোলে অবস্থিত এই দেউলটি। প্রকৃতির সমারোহ তো আছেই, তার সঙ্গে আছে অতীতের হাতছানি। রূপনারায়ণ নদীর ধারে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের বাড়ি। তাঁর বাড়িটিতে সংস্কার করে একটি ছোট গ্রস্থাগার তৈরি করা হয়েছে। সারা বছর পর্যটকদের ভিড় এখানে চোখে পড়ে। আর আছে প্রাচীন আটচালা মন্দির সব মিলিয়ে বাঙালি পর্যটকের সপ্তাহান্তের ছুটি ভালোই কাটবে দেউলটিতে।
৩) রায়চক
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় অবস্থিত রায়চক। কলিকাতা থেকে রায়চকের দুরত্ব ৫০ কিলোমিটার। গঙ্গার তীরে অবস্থিত অতি মনোরম এই স্থান। কাজের ফাঁকে ছুটি কাটিয়ে আসার জন্য একেবারে আদর্শ একটি পর্যটন কেন্দ্র এটি। এখানে পর্যটকরা এসে গঙ্গায় নৌকা ভ্রমণ করে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে পারেন। নিরিবিলিতে ছুটি কাটাতে নিঃসন্দেহে ঘুরে আসুন রায়চক থেকে আর নৌকা বিহারে গঙ্গা ভ্রমণের অভিজ্ঞতার সাক্ষী করুন নিজেকে।
৪) মাইথন
কর্মব্যাস্ত জীবনের ক্লান্তি কাটাতে শহর থেকে দূরে নির্জনে ছুটি কাটাতে চাইছেন? তাহলে বেড়িয়ে পড়ুন মাইথনের উদ্দ্যেশ্যে। কলকাতা থেকে ২৩৪ কিলমিটারের দুরত্বে ঝাড়খণ্ডের সীমানায় অবস্থিত মাইথন।
মাইথনে ঘোরার জায়গা বলতে প্রধানত মাইথন ড্যাম। শীতে মাইথন ড্যামকে অপুর্ব ভাবে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এছাড়া রয়েছে বরাকর নদীর বুকে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা। মাইথন ড্যামের পাশেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক। এছাড়াও রয়েছে মিলেনিয়াম পার্ক। শীতকালে এই জায়গায় মেলা বসে। মাইথন ড্যাম পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের সীমানায় ঢুকলে মিলবে বোটিং-এর আরও ব্যবস্থা ও। ড্যামের পাড়ে রয়েছে ফুড-পার্ক।
ড্যামের রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলে মিলবে বরাকর নদীর বিস্তীর্ণ পাড়, যেখানে গিয়ে বসলে বরাকরের চঞ্চল ঢেউ মন ভরিয়ে দেবে। বরাকর নদীর বুকেই রয়েছে চামচ দ্বীপ ও সবুজ দ্বীপ। ডিভিসি সবুজ দ্বীপে পার্কও তৈরি করেছে। এই দুই দ্বীপেই পৌঁছতে হয় বোটিং করে। মাইথনে রয়েছে আদি কল্যাণেশ্বরী মন্দির। ডিভিসি-র হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট। এই পাওয়ার স্টেশনে ঢুকতে গেলে কলকাতায় ডিভিসি অফিস থেকে অথবা মাইথনে ডিভিসি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। সমতলভূমিতে এটাই ছিল দেশের প্রথম হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্ট। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন খোলামুখের কয়লা খনিও। তাহলে আর দেরী কিসের এই শীতের মরশুমে বেড়িয়ে আসুন মাইথন থেকে।
ঘাটশীলা
শরীর ও মনের ক্লান্তি কাটাতে ঘুরে আসুন সবুজ পাহাড়, সুবর্ণ নদী ঘেরা ঘাটশিলা থেকে। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত বনভূমি সংলগ্ন এই এলাকাটি। এটি আগে ধলভূম রাজ্যের সদর দপ্তর ছিল। এখানে একটি বহু প্রাচীন তামার খনি আছে। ঝাড়খন্ড রাজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র ঘাটশিলা। সুবর্ণরেখা নদী পরিবৃত্ত এ অঞ্চলটি পাহাড় ও বনভূমি দিয়ে ঘেরা।
এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন সুবর্ণরেখা নদীর উপর রাত মোহনা ব্রিজ। যেখান থেকে সূর্য উদয় ও সুর্যাস্ত দেখার মনোরম দৃশ্য আপনার মন ভোলাতে বাধ্য। এছাড়া রয়েছে কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি, রামকৃষ্ণ মঠ, পাহাড়ে ঘেরা সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রাম কিনি মন্দির আরও অনেক কিছু।
তাহলে আর বিলম্ব কিসের? কাজের ফাঁকে সময় বের করে বেড়িয়ে পড়ুন প্রকৃতির মাঝে নির্ভেজাল আনন্দ কে উপভোগ করতে।