নিজস্ব সংবাদদাতা: রাত পোহালেই রাজ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন শুরু হয়ে যাবে। গতকালই সেখানকার প্রার্থীরা নিজেদের প্রচার শেষ করে ফেলেছেন। এখন অপেক্ষা শুধু মানুষের রায়দানের। এই মুহূর্তে গোটা রাজ্য তথা সারা ভারতেরই নজর আটকে রয়েছে বাংলার এই বছরের হাইভোল্টেজ কেন্দ্র নন্দীগ্রামের উপর৷ কারণ এই কেন্দ্রে একদিকে প্রেস্টিজ ফাইটে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অন্যদিকে বিজেপির তরফে রয়েছেন ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী৷ তার ওপর সংযুক্ত মোর্চার তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জিও সেখানেই দাঁড়িয়েছেন। সবমিলিয়ে একুশের ভোটে কার্যত ব্যাটেল গ্রাউন্ডে পরিণত হয়েছে নন্দীগ্রাম৷
কিন্তু নন্দীগ্রামে এই মেগা ফাইট শুরু হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ল গোটা এলাকার ইন্টারনেট পরিষেবা৷ যার জেরে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে ৷ প্রবল উদ্বেগে নির্বাচন কমিশন৷ ইন্টারনেট স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে৷ গুগল অ্যাপের সাহায্য নিয়েই নির্দিষ্ট ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল তাঁদের৷ কিন্তু ইন্টারনেটে ভেঙে পড়ায় আপাতত অকেজো সেই অ্যাপ৷ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন৷ কিন্তু এত দ্রুততার সঙ্গে ইন্টারনেট ফেরানো কার্যত অসম্ভব বলে জানিয়ে দিয়েছে বিএসএনএল৷
কিন্তু কেন ভেঙে পড়ল নন্দীগ্রামের ইন্টারনেট পরিষেবা? অনেকেই মনে করছেন, হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামকে কেন্দ্রকে করে চরম উৎসাহ তৈরি হয়েছে আমজনতার মধ্যে৷ আর এই কেন্দ্রের হালহকিকত জানতে মানুষ বারবার ইন্টারনেটের সাহায্য নিচ্ছেন৷ এই অতিরিক্ত চাপের ফলেই ভেঙে পড়েছে পরিষেবা৷ তবে সকলে এই যুক্তি মানতে নারাজ৷ অনেকেই এর পিছনে দেখছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি৷ গভীর পরিকল্পনা করেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি উঠেছে৷
মনে করা হচ্ছে, আজ বা কাল সকালের মধ্যে নন্দীগ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু না হলে, সেখানে বেলাগাম সন্ত্রাস হবে৷ বুথে বুথে ছড়াবে হিংসা৷ ফের রক্ত বইবে হলদি নদীর জলে৷ আর এই সন্ত্রাসের সাক্ষ্য প্রমাণ স্বরূপ কোনও ফুটেজও থাকবে না৷ ফলে নন্দীগ্রাম নিয়ে চরম চিন্তায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন৷ ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামের প্রতিটি বুথকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷ আকাশ পথে চলছে ড্রোনের নজরদারি৷ কিন্তু, ভোটের দিনে ইন্টারনেট না থাকলে ঠিক কী কী সমস্যা হতে পারে?
প্রথমতম, গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারবে না বাহিনী৷ সেক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সমস্যা হতে পারে তাঁদের৷ দ্বিতীয়ত, ভোটের কাজে কমিশনকে চরম সমস্যায় পড়তে হবে৷ তৃতীয়ত, বুথে ‘ওয়েবকাস্টিং’-এর সমস্যা হতে পারে৷ চতুর্থত, কাজে সমস্যা হবে সংবাদমাধ্যমেরও৷ বুথে হিংসা ছড়ালে তা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না সংবাদমাধ্যম৷ মিডিয়া মনিটরিংয়ে বিপাকে পড়তে পারে কমিশন৷ কোথাও কোনও অশান্তি হলে মিডিয়া মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বুথে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে কমিশন৷ ইন্টারনেট না থাকলে মিডিয়া মনিটরিং হওয়া কোনোমতেই সম্ভব নয়। এদিকে নন্দীগ্রামে ইন্টারনেট বন্ধ হতেই ফের গর্জে ওঠেন মমতা৷ তিনি বলেন, বহিরাগতরা নন্দীগ্রামে ঢুকছে৷ নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা হোক৷