নন্দীগ্রামে এবার মেগা ফাইট। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে প্রার্থী তাঁরই একই সময়ের স্নেহধন্য শুভেন্দু অধিকারী। দিদি বনাম দাদার লড়াইয়ে একেবারে জমে গিয়েছে নন্দীগ্রামের লড়াই। এ লড়াই শুধু বিধায়ক হওয়ার নয়, এ লড়াই রাজ্য দখলের, প্রেস্টিজ বাঁচানোর। দু পক্ষই একেবারে সব শক্তি উজাড় করে প্রচার সারছেন। কিন্তু এবার কথা হল শেষ অবধি নন্দীগ্রাম কোন ফুলের দখলে যেতে চলেছে।
নন্দীগ্রামের লড়াই এখন যেন রাজ্য দখলের লড়াই হয়ে গিয়েছে। নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে গোটা দেশের এত উৎসাহ কেন। তার সবচেয়ে বড় কারণ যদি হয়, প্রার্থী হিসেবে মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং, তাহলে দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই তৃণমূলে সব পেয়েছির দেশে থাকা শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ানো। নন্দীগ্রাম আন্দোলন মমতাকে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় ইচ্ছার রাজ্যের ক্ষমতা এনে দিয়েছিল। আর মমতার সেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রধান সেনাপতি ছিলেন শুভেন্দু। সেই নন্দীগ্রামেই এবার দুই যোদ্ধা, এবার যুযুধান দুই পক্ষ। এ যেন কোনও রূপকথার গল্পের স্ক্রিপ্ট।
যাই হোক, এখন প্রশ্ন নন্দীগ্রামে কী হবে। নন্দীগ্রামে গতবার রেকর্ড ভোটে জিতেছিলেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রাম আন্দোলন এলে তাঁর কথা আসেই। তাহলে কী মমতা ব্যাকফুটে?
তাঁর আগে অঙ্কের হিসেবে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচন:
এই নির্বাচনে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের লিড ছিল প্রায় ৬৮ হাজারের মত। মোট ভোটের ৬৩ শতাংশই ছিল তৃণমূল প্রার্থী দিবেন্দু অধিকারীর দখলে। সেখানে বিজেপি প্রার্থী এই বিধানসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন, ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে, ৪.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে সিপিএম প্রার্থী ছিলেন তিন নম্বরে। এবার তৃণমূলের সেই ভোটে অধিকারী পরিবারের একক প্রভাব কতটা ছিল সেটাই দেখার।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচন:
তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ে শুভেন্দু অধিকারী জিতেছিলেন ৮১ হাজার ভোটের ব্যবধান। শুভেন্দুর বর্তমান দল বিজেপি সেই ভোটে তৃতীয় স্থানে ছিল মাত্র ১০,৭১৩ ভোট পেয়ে। বাম প্রার্থী সেই ভোটে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ২৬ শতাংশের মত ভোট পেয়ে। যেখানে শুভেন্দু পেয়েছিলেন ৬৬.৮ শতাংশ ভোট।
২০১৪ লোকসভা নির্বাচন:
এই নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হিসেবে পুনর্নিবাচিত হয়েছিলেন। তমলুক লোকসভার অধীনে নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনে তৃণমূলের শুভেন্দু লিড নিয়েছিলেন ৮০ হাজারের মত ভোটের। শুভেন্দু এখানে ৬৮.৭৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৯ লোকসভার থেকে ২০১৪ লোকসভা ভোটে এই আসনে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ানো শুভেন্দুর লিড বেড়েছিল।
২০১১ বিধানসভা নির্বাচন:
তৃণমূলের টিকিটে এই আসনে ফিরোজা বিবি জিতেছিলেন ৪২ হাজারের মত ভোটে।
হিসেব বলছে, নন্দীগ্রামে সাম্প্রতিককালে হওয়া ভোটে তৃণমূল বিপক্ষের চেয়ে গড়ে ৬০-৭০ হাজারের মত ভোট বেশি পায়। এবার সেই প্রাপ্ত ভোটে কতটা শুভেন্দু বা অধিকারী পরিবারের সেটা নিয়েই যত জল্পনা। আবার বামেদের ভোট যে গত বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে কমবেই সেটাও নিশ্চিত। বামেদের সেই ভোট দিদি না দিদি কার দিকে যায় সেটা দেখার।
বিশেষজ্ঞরা লড়াই হাড্ডাহাড্ডি বললেও মমতাকেই এগিয়ে রাখছেন। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের মজবুত সংগঠন, মমতা ব্যানার্জির নিজে প্রার্থী হওয়া-এসব কারণে রাজ্যের শাসক দলই এখানে এগিয়ে। সোজা অঙ্কের হিসেবে মমতা অনেকটাই এগিয়ে এখানে। যদিও এ রাজ্যে বিজেপির উত্থান সব সোজা হিসেব দুমড়েমুচড়েই এসেছে। শুভেন্দুর অনুগামীরা তেমনটাই চাইবেন। সব জল্পনা শেষ হবে, ১ এপ্রিল নির্বাচন শেষে, আর উত্তর জানা যাবে ২ মে। তার আগে এমন হিসেব বারবার হবে, অনেকে করবে।