নিজস্ব সংবাদদাতা: আজ যিনি তৃণমূল, কাল তিনি বিজেপি। আজ যিনি ঘাসফুলে, কাল তিনি পদ্মফুলে। গীতা সারাংশের ‘পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম’- কথাটিকেই যেন জীবনের আপ্তবাক্য করে নিয়েছেন তাঁরা। সবমিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এই ভোটের বাজারেও রংবদলের পালা চলছে। এই আবহে এবার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। মানুষের নানান সমস্যার সুরাহার কথা নির্বাচনের আগে জনসভায় রাজনৈতিক দলের নেতারা বলে থাকেন। কিন্তু এবার রাজনৈতিক দলের জনসভায় রাজনীতি যেন ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। তার বদলে শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের পালা।
তবে মানুষ কিন্তু নির্বাচনের আগে স্মৃতিতে একটু নাড়া দিয়ে নিচ্ছে। আসলে মানুষের স্মৃতির থেকে কোন কিছুই চিরতরে মুছে যায় না। কালের প্রবাহে হয়তো কিছুদিন মানুষ স্মৃতির থেকে বাইরে থাকে। কিন্তু কোনও কোনও ঘটনা আবার সেই স্মৃতিকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়ে সেই ব্যক্তিকে জাগিয়ে তোলে। তেমনই একটা ঘটনা নির্বাচনের আগে আবার বালি বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের মনে সেই ক্ষত আবার যেন যন্ত্রণার কারণ হয়ে ফুটে উঠছে। আর সেই আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা মাথায় রেখেই এই বিধানসভার বহু মানুষ এবার ইভিএম-এর বোতামে ছাপ দেবেন বলে ঠিক করেছেন। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী বৈশালী ডালমিয়া। যিনি আগে তৃণমূলের বালির বিধায়ক ছিলেন। এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হয়েছেন দীপ্সিতা ধর। তৃণমূল প্রার্থী শিশু চিকৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়। তবে বালির নির্বাচনে প্রধান লড়াই হচ্ছে বৈশালী ডালমিয়া আর দীপ্সিতা ধর-এর মধ্যে। তাই ফিরে আসছে বালি পুরসভার সেই স্মৃতি।
কী সেই ঘটনা ? আসুন একটু অতীতের দিকে তাকানো যাক। ২০১৪ সালে ঘটে যাওয়া বালি পুরসভার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে এই শান্তিপূর্ণ এবং নিরুপদ্রব অঞ্চল বালিতে তোলপাড় হয়েছিল। এই ঘটনায় এলাকার মানুষের বিশ্বাসে যে ফাটল ধরেছিল তা আজ নির্বাচনের মুখে আবার প্রকট হয়ে উঠছে । এখনও মানুষের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে, নীতিনিষ্ঠ দল সিপিএম-এর ওপর থেকে কী ভাবে সেদিন উঠে গিয়েছিলো মানুষের বিশ্বাস, ভরসা, যা আজও এখানকার মানুষের মনে সজীব।
এই নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন? এই প্রশ্ন করতেই নানান উত্তর এলো মানুষের মধ্য থেকে। কেউ বললেন, “বুঝতে পারছি না এই সময়ে কাকে ভোট দেব ।” কেউ আবার ভোটার কথা বলতেই খানিক চুপ থেকে বালি পুরসভার ২১ কোটি টাকা তছরুপের ঘটনা নিয়ে কথা বলে উঠলেন। বললেন, “বালি বিধানসভা এলাকার বালি পুরসভার আর্থিক কেলেঙ্কারি এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছে। আজও নির্বাচনের আগে সেই আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা মনে পরে যায়। আসলে ভোটের আগের সময়টা হলো জনগণের।”
সেই বালি বিধানসভায় এবারে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বৈশালী ডালমিয়া। তিনিও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন। তৃণমূলে থেকে তিনি কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। বলেছেন তাঁর বিধানসভার অধীনে যে সব পুরসভা রয়েছে সেখানকার বেশিরভাগ জায়গায় তৃণমূলীদের দুর্নীতি, কাটমানি খাওয়ার কথা। আর এসবের বিরুদ্ধে মুখ খুলেই বৈশালী ডালমিয়া তৃণমূলে ব্রাত্য হয়েছেন।
তবে বৈশালী ডালমিয়ার বিধানসভা অঞ্চলের মানুষের অনড় ওপরে ভরসা আছে, সেটা তারা নিজেরাই বলছেন। এখানকার মানুষ মনে রেখেছেন। বলছেন, “লকডাউন এর সময় যেভাবে বালির সমস্ত মানুষের পাশে বৈশালী দাঁড়িয়ে ছিলেন, বালির মানুষেরা সেটা মনে আছে।” আর এই কারণেই বৈশালীর ডালমিয়ার দৃঢ় বিশ্বাস, “পরিবর্তনের লক্ষ্যে বালির মানুষ তার পাশেই থাকবেন।” তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে, বালি বিধানসভা এবারে “ আসল পরিবর্তন” চাইছেন? জানা যাবে ২ মে তারিখে।