নিজস্ব সংবাদদাতা: স্বাধীনতার পর থেকে গত পাঁচ দশক বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথমবার বামফ্রন্টের কোনও বিধায়ক ছাড়াই গঠন হবে রাজ্য বিধানসভা। যাদের সঙ্গে টানা কয়েক দশক লড়াই করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল ঘটিয়েছিলেন, তারাই এখন শূন্য। রীতিমত ভ্যানিশ রাজ্য রাজনীতির আঙিনা থেকে। এমনকি গত বছরের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও এবার কোনও আসন পাননি। ভোটের এই ফলাফল আলিমুদ্দিন ও প্রদেশ কংগ্রেসকে যেমন ধাক্কা দিয়েছে, তেমনই এই ফলাফল অবাক করেছে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
একুশের বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার হাতে সাকুল্যে একটি আসন এসেছে, তাও সেটা পেয়েছে আব্বাস সিদ্দিকীর আইএসএফ। প্রতিপক্ষ শিবিরের এমন ফলাফল যে একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না, তা এ দিন বলতে শোনা যায় রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীকেও। মমতা বলেন, “ওদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে আমার সংঘাত থাকতেই পারে। কিন্তু আমি বাম-কংগ্রেসকে শূন্য হিসেবে দেখতে চাই নি। বরং বিজেপির থেকে একটা অংশ যদি ওরা আসত, তাহলে ভালই হত।” এরপর বাম-কংগ্রেসের হার সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মমতা বলেন, “কিন্তু ওরা গত কয়েক বছরে বিজেপির এত তোষামোদ করেছে, যে নিজেরাই এখন সাইনবোর্ড হয়ে গেছে।”
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালে বাংলায় প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার পর থেকে এমন কোনও ভোট আসেনি, যেখানে বাম বা কংগ্রেস কোনও আসন পায়নি। প্রায় ৭০ বছরের রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথম এমন বাম-কংগ্রেস শূন্য ভোট দেখল বাংলা। যেখানে পুরোপুরি মুছে গেল এই দুই দল। যা কার্যত কল্পনাতীত ছিল সকলের কাছেই। সংযুক্ত মোর্চার ভাগে আসন এসেছে মাত্র ১ টি। সেটাও পেয়েছেন ভাঙড়ের আইএসএফ প্রার্থী নৌশাদ সিদ্দিকী। জনগণ এত স্পষ্টভাবে এর আগে কোনও জোটের বিরুদ্ধে রায় দেননি। কেন এভাবে জোটের বিরুদ্ধে রায় দিলো বাংলার মানুষ, তা এবার অন্তত ভেবে দেখার সময় এসেছে।
তবে, নির্বাচনের পর দল ‘ভেন্টিলেশনে’ চলে গেলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার হাতে রাস্তাতেই থাকতে চান তাঁরা। রেড ভল্টান্টিয়ারদের এই দল হেরে যাওয়ার পরও মানুষের জন্যই কাজ করতে চান। সিঙ্গুরে থার্ড বয় হওয়ার পরও সিপিএমের তরুণ মুখ সৃজন ভট্টাচার্যের দাবি, রুটি-রুজির লড়াইকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফিরিয়ে আনার লড়াই তাঁরা চালিয়ে যাবেন। একই মত, বালি বিধানসভার পরাজিত সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরেরও। তাঁর কথায়, “যারা বিজেপি-তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরাও যদি রাতে এমারজেন্সি হলে আমাদের ফোন করে, আমরা নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করব।”