নিজস্ব সংবাদদাতা- কংগ্রেসের বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়াতে বিজেপি প্রথম থেকেই পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতির বিরোধিতা করে এসেছে। এখনও নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা কংগ্রেসের সমালোচনা করতে গিয়ে পরিবার প্রথার প্রসঙ্গ সামনে টেনে আনেন। যদিও গেরুয়া শিবিরেও পরিবার প্রথার নিদর্শন কম নয়। রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরার রাজে সিন্ধিয়া থেকে শুরু করে রাজনাথ সিং, কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মতো অসংখ্য বিজেপি নেতার পরিবার থেকে একাধিক সদস্য জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। কিন্তু ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়ে মন্তব্য করে নতুন করে জল্পনা উস্কে দিলেন অমিত শাহ। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তবে কি মুখে পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতা করলেও বিজেপি নেতারা দলের মধ্যে পারিবারিক মৌরসিপাট্টা তৈরি করার চেষ্টা করছেন? তাই কি প্রকাশ্যে বার্তা দিতে বাধ্য হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?
জেপি নাড্ডা যতই ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি হন দল এবং সরকারের যে অমিত শাহই প্রকৃত ‘নাম্বার টু’ সকলেই সেটা জানেন। এমনকি দলীয় সংগঠন পুরোটাই যে তার অঙ্গুলি হেলনে চলে সেটাও বিজেপির নেতারা ঘরোয়া আলাপ-আলোচনায় স্বীকার করে থাকেন। সেই অমিত শাহ গত বৃহস্পতিবার একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এ রাজ্যে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “দেশের ক্ষেত্রে ফ্যামিলি প্ল্যানিং দরকার, কিন্তু দলেতে তার কোনো জায়গা নেই।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর জল্পনা শুরু হয়েছে তবে কি এই রাজ্যে বিজেপির একাংশের মধ্যে পরিবারতন্ত্রের ঝোঁক দেখতে পেয়ে এই মন্তব্য করতে বাধ্য হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? নাকি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন যুযুধান দু’পক্ষকে? প্রসঙ্গত এই মুহূর্তে আদি ও নব্য বিজেপি, দুই ভাগে বিভক্ত এ রাজ্যের গেরুয়া শিবির। সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূল থেকে একের পর এক নেতা ও কর্মী গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে শুরু করেছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যারা বিজেপি করে আসছেন তারা গুরুত্ব হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন।
এই আশঙ্কার বশবর্তী হয়ে তারা বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ পর্যন্ত দেখিয়েছেন। গত এক মাসের মধ্যে হেস্টিংসের রাজ্য বিজেপির নতুন সদর দপ্তরের সামনে যেমন একদল আদি বিজেপি কর্মী বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তেমনি, আদি-নব্য দ্বন্দ্বের ফলে বর্ধমানে বিজেপির নবগঠিত দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। উত্তরবঙ্গে প্রাক্তন সাংসদ দশরথ তিরকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে, কিংবা তৃণমূল বিধায়ক শুক্লা মুন্ডা দলে যোগ দেওয়ার পরও একই রকমভাবে পুরানো বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে ফ্যামিলি প্লানিং সংক্রান্ত মন্তব্যের মধ্য দিয়ে অমিত শাহ বার্তা দিতে চেয়েছেন আদি কর্মীরা যেন দলকে নিজেদের সম্পত্তি ভেবে না বসেন। দলের ভালোর জন্য যেটা দরকার তা-ই করা হবে, সেখানে আবেগের বিশেষ জায়গা নেই।