রাত পোহালেই কাল, মঙ্গলবার রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোট। তৃতীয় দফায় তিন জেলার ৩১ আসনে ভোট। প্রথম দু দফায় ৬০ আসনে ভোটগ্রহণের পর এবার তৃতীয় দফায় তৃণমূল, বিজেপি-র মধ্যে জোর লড়াইয়ের সম্ভাবনা। এই দফায় বাম-আইএসএফ জোটও লড়াইয়ে থাকছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলার ৩১ আসনে তৃতীয় দফায় ভোট। ২০১৬ বিধানসভায় এইসব আসনে তৃণমূলের একাধিপত্য ছিল। দিদি এই ৩১ আসনের মধ্য়ে ২৯টি-তে জিতে বাজিমাত করেছিলেন। আর বিজেপি পাঁচ বছর আগে এই ৩১ আসনের কোনটাতেই প্রায় লড়াইয়েই ছিল না। তবে দিন বদলেছে দ্রুত। এই ৩১ আসনে দিদির মুখে হাসি কেড়েছে ২০১৯ লোকসভায় বিজেপি-র ৩১ শতাংশের মত ভোটবৃদ্ধি। যার বেশিরভাগটাই ঘটেছে বাম ভোট, বিজেপি-তে চলে যাওয়া।
আরও পড়ুন: টেলিভিশনের জিতুর সঙ্গে বন্ধুত্ব বাম প্রার্থী মীনাক্ষীর! ব্যাপারটা কী?
তৃণমূল, বিজেপি। দু জনের কাছেই এই তৃতীয় দফায় চ্যালেঞ্জ। অধিকারীদের পদ্মে যোগদানের পর প্রথম দু দফায় তৃণমূলকে বেশ কঠিন চ্য়ালেঞ্জ দিতে পেরেছে বিজেপি। তৃতীয় দফাতে বিজেপিকে ভাল ফল করতেই হবে। ভোটের শুরুর আগে থেকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূল গড়ে ভাঙন ধরাতে না পারলে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছানো যবে ন। আর তৃতীয় দফার আসনগুলো শুধু তৃণমূল গড় নয়, জোড়াফুল দুর্গ বলা ভাল। তবে এটা ঠিক বিজেপি-র উত্থানে দিদির দুর্গে ফাটল ধরেছে। এবার সেই ফাটল কতটা চওড়া সেটাই দেখার।
২০১৬ বিধানসভায় ২০১৬ বিধানসভায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৬টি আসনের মধ্যে ১৫টা আসনে জিতেছিল তৃণমূল। একমাত্র কুলতলিতে জিতেছিলেন বামপ্রার্থী। এই তৃতীয় দফায় হাওড়ায় যে ৭টা আসনে ভোট হচ্ছে তার ৬টিতেই জিতেছিল জোড়া ফুল। শুধুমাত্র আমতা কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন কংগ্রেসের অসিত মিত্র। হুগলিতে আবার এই দফায় হতে চলা ৮টি কেন্দ্রের ৮টিতেই জিতেছিলেন দিদি। তৃতীয় দফায় গত বিধানসভায় কোন আসনেই জেতা তো দূরে থাক, বলার মত ফলই করতে পারেনি বিজেপি।
২০১৯ লোকসভাতে আবার বিজেপি কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই এইসব আসনে তাদের ভোট শতাংশ অনেকটা বাড়িয়ে নিতে পারে। গোঘাট ও পুরশুড়ার মত কেন্দ্র বিজেপি লিডও পায়। ২০১৯ লোকসভায় এই ৩১টি কেন্দ্রে বিজেপি-র ভোট বেড়েছিল ৩১ শতাংশেরও বেশি। মজার কথা, তৃণমূলেরও কিন্তু ভোটপ্রাপ্তির হার বেড়েছিল। দুই ফুলের ভোটপ্রাপ্তির শতাংশের হারের সবটাই এসেছে বাম, কংগ্রেসের ভোট ভাঙন থেকে। বিজেপির যে ৩১ শতাংশ ভোট বেড়েছে, তা বাম-কংগ্রেসের থেকেই এসেছে সেটা অঙ্কেই পরিষ্কার। বামফ্রন্টের ভোটপ্রাপ্তির হার কমেছে ২২ শতাংশ মত। যেখানে কংগ্রেসের কমেছে ৮ শতাংশের মত।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, বাম-কংগ্রেস জোট কি তাদের পুরনো ভোটব্যাঙ্ক ফিরে পাবে? সংযুক্ত মোর্চাকে যদি এই রাজ্যে ভাল কিছু করতে হয় তাহলে এই দফাতেই করে দেখাতে হবে। এই দফায় নজর থাকবে আব্বাস সিদ্দিকির দলের দিকেও। সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে আব্বাস সিদ্দিকে কতটা থাবা বসান তা দেখার। ব্যাপার যাই হোক, তৃণমূলের কাছে চ্য়ালেঞ্জ এই ৩১ আসনের দাপট ধরে রাখা। সেখানে বিজেপিকে এইসব কেন্দ্রে তৃণমূলের একাধিপত্য রুখতেই হবে। আর বামদের সামনে এই ৩১ আসনে ভাল ফল করা ছাড়া উপায় নেই।
এই দফায় তারকা প্রার্থীদের মধ্যে আছেন টলিউড অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী। হাওড়ায় শ্যামপুরের প্রার্থী তনুশ্রীর কাজটা কঠিন। ২০১৯ লোকসভায় এই কেন্দ্রে বিজেপি পিছিয়ে ছিল। রায়দিঘিতে কান্তি গাঙ্গুলি ফিরে আসতে পারেন কিনা সেটাই দেখার। এবার আর দেবশ্রী রায় সেখানে প্রার্থী নন। যে দেবশ্রীর কাছে পরপর দুবার হেরেছিলেন আয়লায় মানুষের পাশে থাকা কান্তি গাঙ্গুলি। তবে তৃতীয় দফায় আসল নজর অভিষেক ব্যানার্জির দিকে। অভিষেক ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তাঁর কেন্দ্রে বিজেপি জয়ের ফুল ফোটাতে মরিয়া। সাতগাছিয়ায় তৃণমূল সোনালি গুহকে প্রার্থী না করায় কী ফল হয় সেটাই দেখার।