নিজস্ব সংবাদদাতা- রাজ্য রাজনীতির রঙ্গ মঞ্চে যেন পরিণত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস! তৃণমূলের একের পর এক জনপ্রতিনিধি দল ছাড়ার ‘লাইনে’ দাঁড়িয়েছেন। কেবলমাত্র সিরিয়াল নাম্বার আসার জন্য অপেক্ষা তাদের! বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় ফেসবুকে পোস্ট করে বিদ্রোহী হন। তার সেই বিদ্রোহের সুর গতকাল সারা দিন অব্যাহত থাকার পর রাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তারপরই শান্তির সুর শোনা গিয়েছে শতাব্দী রায়ের গলায়। এরই মধ্যে হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির দিকে পা বাড়ালেন শ্যামল আদক। তবে তৃণমূল নেত্রীর ‘টেনশন’ সবচেয়ে বাড়তে পারে হাওড়ার নেতা ও বন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায়। তিনি জানিয়েছেন শনিবার ফেসবুক লাইভে এসে রাজনৈতিক ভবিষ্যতের বিষয়ে ঘোষণা করবেন।
শ্যামল আদক পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। অধিকারী পরিবারের মেজো ছেলে দল ছাড়ার সময় অনুমান করা হয়েছিল তিনিও বিজেপিতে যোগ দেবেন। যদিও অমিত শাহ-এর সেদিনের সভায় উপস্থিত হননি শ্যামল আদক। তবে তিনি নিজে না গিয়ে হলদিয়া পুরসভার অন্য একজন কাউন্সিলরের হাত দিয়ে ইস্তফাপত্র এক্সিকিউটিভ অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দেন। ইস্তফার কারণ নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু জানাননি এই নেতা।
হাওড়ার তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অরূপ রায়ের বিবাদের কথা সবাই জানে। কিছুদিন আগে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠে প্রকাশ্য জনসভায় হুঁশিয়ারি দেন রাজীব। এরপরই রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী এবং তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাকে ডেকে ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকবার কথা বলেন। তখন মনে করা হয়েছিল এই তৃণমূল নেতার ক্ষোভ হয়তো প্রশমিত হয়েছে। যদিও এই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভার একের পর এক বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন। এদিকে গত সপ্তাহে হাওড়া জেলা সভাপতি ও ক্রীড়া মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা দল থেকে পদত্যাগ করলে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। তবে শনিবারের ফেসবুক লাইভের মধ্য দিয়ে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এরই পাশাপাশি জল্পনা তীব্র হয়েছে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবকে ঘিরে। তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এবং কোচবিহার জেলার তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে নিশানা করে বিষোদগার করেন। তার অভিযোগ রবীন্দ্রনাথ বাবুর হাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর থাকলেও তিনি কাজের কাজ কিছু করেননি। সেজন্যই নাকি উত্তরবঙ্গে দলের এই দুরবস্থা। যদিও এই অভিযোগের পাল্টা কোনো মন্তব্য করতে চাননি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
ঘটনা হল গত লোকসভা নির্বাচনে এই দুই মন্ত্রীর এলাকাতেই পিছিয়ে আছে তৃণমূল। বিশেষ করে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভা কেন্দ্র ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ীতে বিজেপির থেকে ৬০ হাজারেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়ে রাজ্যের শাসক দল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই তরজাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে রাজনৈতিক মহল।