সৌজন্য Times Of India

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত্য পরাজিত হলেন | অনেক দিন থেকেই তিনি approval rating বা অনুমোদনের হিসেবে জো বাইডেনের অনেকটা পেছনে ছিলেন | কিন্তু আসল নির্বাচনে ট্রাম্প বেশ জোর লড়াই করেই পরাজিত হলেন | তাঁর এই পরাজয়ের আসল কারণ গুলো  দেখে নেওয়া যাক |

১) করোনা অতিমারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা

ট্রাম্প করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে খুবই অক্ষমতা  ও  অবৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি দেখিয়েছেন বলে প্রভূত সমালোচিত হয়েছেন | করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে আমেরিকা বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করেছে | এখনো পর্য্যন্ত আমেরিকাতে করোনায় ১ কোটি ২০ লক্ষ্যের বেশি লোক সংক্রমিত হয়েচেন ও ২ লক্ষ্য ৫০ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে যা ভারতের তুলনায় অনেক বেশি | যদিও ভারতের তুলনায় আমেরিকার জনসংখ্যা অনেক কম ও আমেরিকাতে অনেক ভারাতের তুলনায় অনেক উন্নত একটি দেশ । ট্রাম্প প্রথম থেকেই মাস্ক ব্যবহার ও লক ডাউনের বিরোধিতা করেছেন যার ফলে করোনা বেশি করে ছড়িয়ে যেতে পেরেছে । এতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন ।

২) কৃষ্ণাঙ্গ দের প্রতি অবিচার

কৃষ্ণাঙ্গরা ট্রাম্পের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন | জর্জ ফ্লয়েড নামক এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ নৃসংশ ভাবে গলা টিপে হত্যা করে  | এতে পুরো কৃষ্ণাঙ্গ সমাজ খেপে ওঠে ও black lives matter বলে একটি বড়সড় আন্দোলন গড়ে ওঠে | পরিস্থিতি শান্ত করার বদলে ট্রাম্প এটিকে হিংসাত্মক গুন্ডামি বলে আখ্যা দেন এবং দরকার হলে গুলি চালানো হবে বলেও হুমকি দেন | এতে কৃষ্ণাঙ্গরা আরো খেপে ওঠেন ও আন্দোলন আরো হিংস্র হয়ে ওঠে |

৩) ল্যাটিন আমেরিকান ও মেক্সিকান দের প্রতি বিরূপ ভাব

ট্রাম্প ল্যাটিন আমেরিকান ও মেক্সিকানদের আমেরিকাতে অনুপ্রবেশের ঘোর বিরোধীতা করেছেন | এই অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্যে তিনি মেক্সিকো সীমান্তে একটি বিশাল দেওয়াল তৈরী করার পরিকল্পনা করেন | অনেক অনুপ্রবেশকারী কে অত্যন্ত কঠোর হাতে আটকে দেওয়া হয় | অনেক ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী মা বাবার থেকে শিশু দের বিচ্ছিন্ন করে আটকে রাখা হয় | তিনি মেক্সিকান দের প্রতি ‘আমেরিকা পছন্দ না হলে দেশে ফিরে যান’ এমন উক্তিও করেন | এতে আমেরিকার বড় লাতিন আমেরিকান হিসপানিক গোষ্ঠী ট্রাম্পের ওপর অত্যন্ত রেগে ছিলেন |

৪) স্বৈরাচারী শাসনতন্ত্র

ট্রাম্প নিজের মতের বিরোধীতা একেবারেই সহ্য করেননি | নিজের মতের সঙ্গে অমিল হলেই তাঁর উপদেষ্টাদের ঘন ঘন বদলেছেন | এতে হোয়াইট হাউসে ( যে বাড়ী থেকে প্রেসিডেন্ট কাজ চালান ) উপদেষ্টা মহলে অত্যন্ত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় । এছাড়া তিনি জার্মানি প্রভৃতি বন্ধু গনতান্ত্রিক দেশগুলির প্রতি বৈষম্য মুলক আচরন করেন ও রাশিয়ার পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসক কিম জং উনের সঙ্গে সৌহার্দ্য পূর্ণ আচরন করতে আরম্ভ করেন । যেসব সংবাদ মাধ্যম তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তাঁদের বারবার অপমান করেছেন ও তাঁরা মিথ্যা খবর বা fake news প্রচার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কোনো প্রমান না দিয়েই । অনেক ক্ষেত্রে অনেক সংবাদ সংস্থা কে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করেন । তাঁর এই অদ্ভুত আচরন গনতান্ত্রিক রীতিতে অভ্যস্ত আমেরিকান দের মোটেও খুশি করে নি ।

images?q=tbn:ANd9GcSBPrUG B3f59bZcquqerrtzYuyFwaPu83MJQ&usqp=CAU
সৌজন্যে News18.com

৫) অসত্য ভাষণ

সব রাজনৈতিকই অল্প বিস্তর মিথ্যা ভাষণ করেন | কিন্তু ট্রাম্প এটাকে প্রায় চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন | তাঁর বক্তৃতা ও টূইটে বলতে গেলে যা খুশি তাই বলে গেছেন কোনো প্রমানের  অপেক্ষা না রেখেই । যেমন তিনি করোনা কে আর এক রকমের ফ্লু বলে চালাতে চেষ্টা করেছেন । যদিও করোনা পরিস্থিতি রুখতে তিনি একান্তই ব্যর্থ ছিলেন, তিনি বারবারই ‘সব কিছু নিয়ন্ত্রণে’ ‘সব কিছু দারুণ চলছে’  বলে দাবী করেন । অনেকে তাঁর মিথ্যা ভাষণ কে মজা করে ‘alternative fact’ বা ‘বিকল্প সত্য’ বলে আখ্যা দেন । ট্রাম্পের বারবার এই অসত্য তথ্য দেওয়ার জন্য তাঁর কথার গুরুত্ব একেবারে কমে গিয়েছিল ও লোকের আস্থা হারিয়ে ছিলেন ।

শেষ হয়েও হইল না শেষ

ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গেছেন তবুও তিনি হার স্বীকার করেন নি । এখনো তিনি গদিতে থেকে যাবার জন্যে আপ্রাণ  চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । আমেরিকার গনতন্ত্রকে ধুলোয় লুটিয়ে দেবার এই প্রচেষ্টাতে তিনি এখনো প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছেন । তবে আশা করা যায় তাঁর প্রচেষ্টায় তিনি সফল হবেন না । হলে তা হবে আমেরিকার গনতন্ত্রের ঘোর দুর্দিন ।

আপনারা অনেকেই আমেরিকার নির্বাচন আগ্রহের সঙ্গে অনুসরন করেছেন । আপনারা কি মনে করেন এই গুলোই ট্রাম্পের পরাজয়ের অন্যতম কারন? মন্তব্যে জানান |

ট্রাম্প আমলের সব কথা জানতে : https://www.britannica.com/biography/Donald-Trump/Presidency

আরো পড়ুন : বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়ে ভারতের কি লাভ হলো