বিশ্বখ্যাত ১১টি অস্কার জেতা ছবি টাইটানিকেও লুকিয়ে আছে কিছু ভুল। যদিও টাইটানিক ডোবা সত্য ঘটনার অবলম্বনে এটি প্রথম ছবি নয় এর আগেও টাইটানিক ডোবা নিয়ে একটি সিনেমা হয় নাম ‘ক্যাভালকেডে’, যেটি অস্কার পায়।
বিখ্যাত চলচিত্র প্রযোজক ‘জেমস ক্যামেরনে’র ‘টাইটানিক’ ছবিটি সিনেমার ইতিহাসে এক দৃষ্টান্তমূলক শীলমোহর। সিনেমার ইতিহাসে এটিই এমন একটি ছবি যার পরিচালনা, লেখা ও এডিটিং একজনই করে। এমনকি ১৯৯৭ সালে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার ২০ বছর পরও সিনেমাটি দর্শকদের মনে একই প্রভাব ফেলতে সক্ষম। তবে এই সিনেমার চলচিত্র নির্মাণে রয়ে যায় কিছু সূক্ষ ভুল যা পরবর্তী কালে ধরা পড়ায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়, তবে কোনো কোনো বিতর্কের আবার যোগ্য জবাব ও দিয়েছেন পরিচালক ‘জেমস ক্যামেরন।’
লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও সিনেমার জ্যাক ডসন ও কেট উইন্সলেট সিনেমার রোজ ডিউইট বিউকেটার অভিনীত এই ছবিটি মূলত একটি প্রেমের গল্প। উচ্চবিত্ত রোজের সাথে নিম্নবিত্ত জ্যাকের প্রেমের মাঝের ট্রাজেডির দৃশ্যপটেই এই সিনেমা ফুটে ওঠে। টাইটানিকের মূল ঘটনার সাথে এই প্রেম কাহিনীর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সিনেমার পার্শ্বচরিত্র এবং অন্যান্য দৃশ্যপটে মিল আছে। ১১টি অস্কার পাওয়া এই সিনেমাটিতে কিছু চলচিত্র নির্মাণে ভুল আছে। সেগুলি হলো…
১) সিনেমার শুরুতেই একটা দৃশ্যে দেখানো হয় জাহাজ ছাড়ার আগে সিনেমার রোজ অর্থাৎ কেট উইন্সলেট যখন একটি ঘোড়ার গাড়ির থেকে নামছে তখন তার বাম চিবুকে একটা তিল আছে। কিন্তু পরের দিকে জাহাজের মধ্যে সিনেমার অন্য একটি দৃশ্যে তার ডান চিবুকে সেই তিলটি দেখায়।
২) সিনেমা শুরুর দিকেই যখন জাহাজ ছাড়ার হুইসেল পরে সেই দৃশ্যে অভিবাদন আর বিদায় জানানোর জন্য যেসব মানুষ এসেছিল তাদের মধ্যে একটা হইচই পরে হুলুস্থুল কান্ড দেখা যায়। কিন্তু তার পরের সিনেই যখন জ্যাককে তাস খেলতে দেখানো হয় তার পাশের জালনা দিয়ে একটি ফাঁকা টাইটানিক চত্বর দেখানো হয়। এটি তার ভুল না অন্যমনস্কতা?
৩) ওই দৃশ্যটি তো সবার নিশ্চয়ই মনে আছে সিনেমার একটা দৃশ্যে জ্যাককে জাহাজের নীচের দিকের একটা ঘরে হাতকড়া দিয়ে পাইপের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। রোজ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করার জন্য গিয়ে একটা কাঁচের বাক্স থেকে কুড়ুল বের করার আগেই কাঁচ ভেঙে দিলেও পরক্ষণেই কুড়ুল বের করার সময় কাঁচ চোখে পড়ে।
৪) উপরের দৃশ্যটির পরের দৃশ্যেই যখন রোজ কুড়ুলটি দিয়ে জ্যাককে ছাড়াতে যায় জ্যাকের পরনে একটা সাদা জামা আর তার উপর ক্রসবেল্ট ছিল কিন্তু রোজ যখন কুড়ুল দিয়ে আঘাত করতে যায় তখন জ্যাকের পিছন থেকে ওই ক্রস বেল্ট আর দেখা যায় না। পরিচালক অভিনেতার দিকে সুপ্রসন্ন হলেও স্টান্ট ম্যানের দিকে তিনি মোটেও নজর দেন নি।
৫) সিনেমার শেষের দিকের একটি দৃশ্যে দেখা যায় রোজ ও জ্যাক প্রায় জাহাজভর্তি জল পেরিয়ে ছুটে চলেছে আর তার পিছনে বন্দুক উঁচিয়ে দৌড়াচ্ছেন বিলি জেন সাথে গুলিও চালাচ্ছেন মাঝে মাঝে। আর সেই সময়ই শ্যুটিং সেটের একটি লাইট ক্যামেরার ফ্রেমের মধ্যে চলে আসে।
৬) টাইটানিক জাহাজটি ১৯১২ সালে ডুবে যায়। ফ্ল্যাশ বাল্ব বা ফ্ল্যাশ সাদা লাইট তখনো আবিষ্কৃত হয় নি কিন্তু সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখানো হয় জাহাজের মজুররা ফ্ল্যাশ আলো জ্বালিয়ে সন্ধান চালাচ্ছে।
৭) সিনেমার একটি দৃশ্যে যখন রোজকে বাঁচানোর জন্য জাহাজের এক কর্মী তাকে কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন রোজ বারণ সত্ত্বেও। তক্ষুণি রোজ এক ঘুসি মেরে সেই লোকটির নাক ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু ঘুসি মারার সময়ই ওই লোকটি তার নাক ধরার আগেই ওনার হাতে রক্ত দেখা যায়। নাক ফাটার আগেই তবে হাতে রক্ত আসলো কোথা থেকে।
৮) সিনেমা শেষের দৃশ্যে যখন জাহাজটি ডুবে যাচ্ছে। জাহাজের ডেকে অবস্থিত লোকদের এপাশ ওপাশ করার জন্য পরিচালক তারের ব্যাবহার করেন কিন্তু কিছু জায়গায় সেই তার স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে কোনো মানুষের সাথে জড়িয়ে আছে।
৯) সিনেমার শেষের দিকে যখন রোজ কাঠের পাটাতনের উপর থাকার সময় যখন জ্ঞান ফিরে পেয়ে জ্যাককে ডাকতে শুরু করে ঠিক সেই সময় জ্যাকের নাকের উপর বরফের কোনো চিহ্ন দেখা না গেলেও ক্যামেরার এঙ্গেল পরিবর্তন হলেই দেখা যায় জ্যাকের নাকের নীচে বরফ। কয়েক মুহূর্তে এই বরফ আসলো কোথা থেকে!
১০) সিনেমার একটি দৃশ্যে একটি কাঁচের মধ্যে ক্যামেরার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। এটা কি এডিটিং এর ভুল নাকি অন্যমনস্কতার।