গ্লিসারিন নামটি আমাদের কাছে বেশ পরিচিত।গ্লিসারিন শুধু যে অশ্রু গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে কৃত্রিম কান্নার সৃষ্টি করে এমন নয়, এটা আমাদের ত্বককেও উত্তেজিত করে তাকে পুনর্জীবিত করে।উত্তরে হাওয়া আসতে শুরু করলেই চামড়ায় এমন টান ভাব চলে আসে যে যে কোনো কাজেই মন বসানো বেশ কঠিন। তাই মন দিয়ে কাজ করতে হলে ত্বককে আগে সুস্থ রাখতে হবে। তাই শীত আসার আগে থেকেই নিতে হবে সঠিক যত্ন।

প্রাণহীন ত্বককে সতেজ করতে প্রয়োজন পড়ে বাড়তি যত্নের। ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজন পড়ে সবার আগে। তবে বাজারে যেসব ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, তা কেমিক্যালযুক্ত হওয়ার কারণে পুরোপুরি আস্থা রাখা সম্ভব হয় না। কারণ তাতে ক্ষতি হওয়ার ভয় থেকেই যায়। সে ক্ষেত্রে গ্লিসারিনের উপকারিতা অনেক।তাই বাজার চলতি ময়েশ্চারাইজারের বদলে ভরসা রাখুন গ্লিসারিনে। কিন্তু আপনি কি জানেন গ্লিসারিন ব্যবহার করবেন কী ভাবে?

গ্লিসারিন

১)ময়েশ্চারাইজার হিসেবে গ্লিসারিন :

গ্লিসারিনকে ত্বকের পক্ষে খুব ভাল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে মানা হয়।এটা খুব কাজে লাগে শুকনো,ছোপ পড়ে যাওয়া বিবর্ণ চামড়ার জন্য।তাই এটা শীতের জন্য খুবই আবশ্যক জিনিষ।গ্লিসারিনকে আপনি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।একটা তুলোয় গ্লিসারিনে চুবিয়ে সেটা ত্বকের ওপর লাগান।গ্লিসারিন লাগানোর পরেই চামড়া নরম ও আদ্র থাকে।গ্লিসারিনের কিছু অসুধের মত গুণ আছে যা চট করে শুকনো,রুক্ষ ও খসখসে চামড়া সারাতে সক্ষম।এই গুণের জন্যই চামড়া মোলায়েম ও নরম থাকে।এটা ত্বকের জন্য গ্লিসারিনের একটা বড় গুণ।

২)ত্বকের পুষ্টি যোগায় :

ত্বকের পুষ্টি যোগাতে গ্লিসারিন খুব কার্য্যকরি।তাই যে কোনও প্রসাধনীতে গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।গ্লিসারিন ত্বকে জলের মাত্রা বা আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে,যার ফলে চামড়া সুস্থ্য থাকে।গ্লিসারিনকে পুষ্টিদাতা হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে আপনার দৈনন্দিন ব্যবহারের ময়েশ্চারাইজারের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।আপনি মুখের প্যাক বা মাস্কে গ্লিসারিন যোগ করতে পারেন।গ্লিসারিনের গুণ আছে ত্বকের পুষ্টি যোগায় ও নরম রাখে।নিয়মিত ব্যবহার করলে চামড়া সুস্থ্য ও তরতাজা থাকে।

৩)ত্বকচর্চা :

গ্লিসারিনকে অসুধ ও ক্রিমে ব্যবহার করা যায়, যা দিয়ে রুক্ষ ও খসখসে ত্বকের চিকিৎসা হয়।অনেক সময় ঠাণ্ডার জন্য,দূষণ ও অন্য নানা কারণে ত্বকের ওপরটা খসখসে হয়ে উঠতে শুরু করে।এই সময় গ্লিসারিন ব্যবহার করলে চামড়ার রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায় ও চামড়া নরম ও মসৃণ থাকে।চামড়ার রোগ সারানোর অসুধে বেশির ভাগ সময়ই গ্লিসারিন থাকে।নিয়মিত গ্লিসারিন ব্যবহার খুব ভাল ত্বকের যত্ন নেয়।তাই নিজের ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখতে নিয়মিত গ্লিসারিন ব্যবহার করুন।

৪)চামড়ার খুঁত কমায় :

গ্লিসারিন ত্বকের ব্রণ ও কোনও রকমের খুঁত সারাতে সাহায্য করে।এটার জন্য নিয়মিত রুপে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে হয়।ব্রণর জায়গায় বা যেখানে খুঁত আছে সেখানে ভাল করে গ্লিসারিন মাখুন।আস্তে আস্তে মুখের দাগগুলো মুছে যাবে,এবং ত্বক পরিস্কার হয়ে যাবে।”কান্না উৎপাদনকারক” গ্লিসারিনকে তাই অন্য সব উপকারের জন্যও ব্যবহার করা যেতেই পারে।

গ্লিসারিন

৫)স্ক্রাবার ও ফেসওয়াশ হিসেবে :

গ্লিসারিনের সঙ্গে গোলাপ জল ও পাতি লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্রাবার, ক্লিনজার, মাস্ক বানানো যায়। তা খুবই উপকার করে। ক্লিনজার বা স্ক্রাবার বানানোর জন্য এই ৩ উপকরণের সঙ্গে চিনিও মেসানো যেতে পারে।গ্লিসারিন ত্বকের ওপর থেকে ময়লা ও ধুলো সরায় ও চামড়াকে পরিস্কার করে।গ্লিসারিনকে গোলাপ জলের সাথে মেশান এবং ত্বক পরিস্কার করতে ব্যবহার করুন।রাতে শোওয়ার আগে গোলাপ জলে গ্লিসারিন মেশান।ভাল করে সেটা দিয়ে মুখ মুছুন।এটা নিয়মিত করুন যাতে চামড়া ভাল করে পরিস্কার হয় ও বন্ধ কোষগুলো খোলে।এটা চামড়ার জন্য একটা খুবই উপকারি জিনিস।আপনার রেগুলার ব্যবহারের ফেসওয়াশ একবার মুখ ধুতে যতটুকু লাগে ততটুকু পরিমাণ নিয়ে তার সঙ্গে দুই ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে ফেসওয়াশ দিয়ে ম্যাসাজ করে দু’মিনিট পর উষ্ণ গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপনি দেখবেন আপনার ব্যবহৃত ফেসওয়াশেই আর ত্বক শুষ্ক হচ্ছে না।

৬)রাতে ত্বকের যত্ন :

রাতে শোয়ার আগে এক ফোঁটা গ্লিসারিন ২ ফোঁটা গোলাপ জল হাতের তালুতে মিশিয়ে নিলে যখন একটু গরম হয়ে আসবে তখনই ওই মিশ্রণ আপনি মুখে দু’মিনিট ম্যাসাজ করে সারা রাত রেখে দিন। পরের দিন আপনার ত্বক অনেক বেশি গ্লোইং থাকবে এবং যে কোনো মেকাপ খুব সুন্দরভাবে বসবে আপনার ত্বকে।প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে আপনার ত্বকে একটা নাইট ক্রিম ব্যবহার করে ঘুমালে পরবর্তী দিন আপনার ত্বক অনেক বেশি সুন্দর থাকে। কিন্তু এ নাইট ক্রিমের কাজটিও আপনি নিশ্চিন্তে গ্লিসারিন দিয়ে করতে পারেন।

৭)হাত-পায়ের যত্নে গ্লিসারিনের ব্যবহার :

কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন নিয়ে হাতের তালুতে ম্যাসাজ করে গরম করে নিয়ে হাত-পায়ে লাগিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে পা মোজা পরে নিতে পারেন। এভাবে কয়েকদিন এর ব্যবহারে আপনার হাতের রুক্ষতা ও পা ফাটার হাত থেকে মুক্তি পাবেন খুব সহজে।রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁট, হাত, পা বা শরীরের যে অংশের ত্বক ফেটে যায় বেশি, সেখানে গ্লিসারিন, জলপাই তেল ও গোলাপজল বা পানির মিশ্রণ লাগিয়ে রাখলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। গোসলের পরও এসব মিশ্রণ লাগাতে পারেন। মুখের ত্বকে গ্লিসারিন সরাসরি না লাগানো ভালো, তবে অন্য স্থানে সরাসরি লাগাতে পারেন।

৮)প্যাক হিসেবে ব্যবহার :

ফেইস প্যাক ব্যবহারে ত্বক স্বভাবতই একটু টানটান করে কিংবা ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। আর শীতে তো কথাই নেই! কিন্তু তাতে কি রূপচর্চা বন্ধ থাকবে শীতে? অবশ্যই না। শীতকালে ত্বকে ফেইসপ্যাক বিশেষ করে ক্লে-মাস্ক ব্যবহারে করতে হলে প্যাকটিতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে দিন। গ্লিসারিনে অতিরিক্ত তেল থাকে না কিন্তু এটি ত্বকে ময়েশ্চার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আর প্যাক ব্যবহারের পরেও ত্বক থাকবে ডিহাইড্রেটেড ও কোমল।

৯)টোনার হিসেবে :

গ্লিসারিন কিন্তু টোনার হিসেবেও বেশ কাজ করে। দিনের শুরুতে গ্লিসারিনের সাথে হালকা গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করুন আপনার ফেইসে। যারা সারাদিন বাহিরে থাকেন, তারা চাইলে ব্যাগেও ক্যারি করতে পারেন। এতে সারাদিন জুড়ে বেশ রিফ্রেশিং এবং হাইড্রেটেড মনে হবে ত্বককে।

১০)মেকআপের কাজে :

শীতকালে যেহেতু ত্বক একটু ড্রাই হয়ে যায়, তাই মেকআপের আগে দরকার একটি ময়েশ্চারাইজার। তাই মেকআপের আগে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বককে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার মেকআপ খুব সুন্দর করে ত্বকে বসে যাবে।

Glycerin

সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে এক ধরনের ন্যাচারাল গ্লো আসবে। নাকের ব্ল্যাক হেডস ও ক্লিন করতে সাহায্য করবে। তাই দেরি না করে আজ থেকেই গ্লিসারিন ব্যবহার শুরু করুন। অন্য কোনো ক্রিম বা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে না।

আরোও পড়ুন, জানুন কিছু অজানা তথ্য

আরও পড়ুন : https://www.banglakhabor.in/পৃথা-কী-আজীবন-যৌনতার-আস্ব/amp/