আমরা যত আধুনিকতার দিকে এগিয়ে চলেছি, ততই যেন মানবিকতা কমে আসছে। অল্পতেই আজকাল আমরা হারিয়ে ফেলছি সহনশীলতা। আর তার ফলে বিরক্ত হয়ে সেই বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ কখনো কখনো ছাড়িয়ে যায় শালীনতার মাত্রা। তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা শহর।
ধূপকাঠি বিক্রির উদ্দেশ্যে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিলাসবহুল গাড়ির জানলার কাচে বারকয়েক ‘নক’ করেছিল ১০-১২ বছরের ছোট্ট এক কিশোর। কিন্তু অচেনা-অজানা ওই কিশোরের এহেন আচরণ একেবারেই সহ্য করতে পারেননি কালো কাচের ওপারে বসে থাকা সেই ‘ভদ্র’ মহিলা। এ পর্যন্ত ঘটনায় কোথাও কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু বিপত্তি ঘটল তারপরেই। ছোট্ট কিশোরের আচরণে বিরক্ত হয়ে তাকে ‘অপরাধের’ শাস্তি দিলেন ওই মহিলা।
জানা গেছে, ধূপকাঠি বিক্রি করতে চাওয়া ওই কিশোরকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে রাস্তার মাঝখানেই গাড়ি থেকে নেমে আসেন ওই মহিলা। আর তারপর আশেপাশের পথচারীদের হতবাক করে দিয়ে হঠাৎই জুতো খুলে বেধরক মারতে শুরু করেন সেই ছোট্ট কিশোরকে। এই ঘটনার কথা সামনে আসতেই রীতিমতো নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
সূত্রের খবর, গত সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট মোড়ের কাছে। আশার কথা, চোখের সামনে মহিলার এই ধরণের ঔদ্ধত্য এবং অমানবিকতা দেখে চুপ করে থাকে নি শহর তিলোত্তমা। প্রথমে পথচারী এবং পরে ক্রমশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরও অনেকেই এহেন অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। জনতার পাল্লায় পড়ে রীতিমতো পর্যুদস্ত হন বিলাসবহুল গাড়ি চড়া ওই মহিলা। এই ঘটনার কথা ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। উদ্ধত ‘ম্যাডাম’কে এক হাত নিয়েছেন নেটিজেনরা।
প্রসঙ্গত, ধূপকাঠি বিক্রেতা ওই কিশোরের নাম বিকাশ। সে গড়িয়াহাট চত্বরে ধূপকাঠি ফেরি করে পেট চালায়। তাঁর বয়সী ছেলেমেয়েরা যখন অতিমারীর আবহে নিরাপদে ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাস করছে, তখন ছোট্ট বিকাশকে নামতে হয়েছে জীবনের কঠিন লড়াইয়ে। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাটাই যার কাছে চ্যালেঞ্জ, তার প্রতিদিনের সংগ্রাম বোঝার ক্ষমতা নেই গাড়ির কাচের ওপারে বসে থাকা ‘ম্যাডামের’। নিজের ব্যক্তিগত পরিসরে কয়েক সেকেন্ডের ব্যাঘাত ঘটলে তাই তিনি বিরক্ত হতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে জুতো হাতে তুলে বাচ্চা ছেলেটিকে নির্মমভাবে মারবেন? প্রশ্ন উঠছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।