রসনা তৃপ্তির রসমর্মিতা দূরের কথা, শাক সব্জি র মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রাণঘাতী বিষ হয়ে উঠছে জীবন সংশয়ের কারণ। বাজারের থলিতে করে এক ঝুড়ি বিষ নিয়ে যাচ্ছি আমরাই। রাসায়নিক ভরা বিষাক্ত সবজি ডেকে আনছে মারণ ব্যাধির ছোবল। তাজা পটল, লঙ্কা, ফুলকপি, বাঁধাকপির মনমোহিনী রূপের আড়ালেই আসলে যে চূড়ান্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক কৃত্রিম সার এর কারসাজি, এ কথা অনেকেই এখন জেনেছেন ৷ আর এর ফল স্বরূপ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে সুস্থতা। যকৃত, হ্দযন্ত্র, অন্ত্রের গুরুতর বিপর্যয় ডেকে আনছে ।সবচেয়ে বড় কথা, পরিবেশের ওপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে অজৈব চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক। রাসায়নিকের মারণ বিষ বিপন্ন করে তুলছে জলাভূমির বাস্তুতন্ত্র, মাটি হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক উর্বরতা।
এ কথা ঠিক যে, জৈব চাষে জমি পিছু উৎপাদনের পরিমাণ অজৈব চাষের তুলনায় বেশ কিছু টা কম। কিন্তু, উৎকর্ষ এবং গুণগত মানের দিক থেকে জৈব চাষ অত্যন্ত ভালো, একথা সন্দেহাতীত। ঠিক এই প্রেক্ষাপট থেকেই ভারতবর্ষের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়ে উঠেছে জৈব চাষের অতি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। জৈব চাষ এ উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য অজৈব চাষে উৎপাদিত পণ্যের তুলনায় কিছুটা বেশি। জৈব চাষে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ জমির পিছু কিছুটা কম হলেও, যেহেতু কৃত্রিম রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না, এই চাষে বিনিয়োগ অনেকটা কম হয়ে থাকে। জৈব চাষের উৎপাদিত পণ্য আকারে কিছুটা ছোট হয়, কেবল তাই নয়, এগুলো সম্পূর্ণ দাগবিহীন হয়না। জৈব চাষের উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ বজায় থাকে। এজন্যই, আধুনিক কালে, নন জিএমও খাদ্যে মজেছে আপামর বিশ্ববাসী। ১৯৯৫ সালে মহারাষ্ট্র যুগান্তকারী ভাবে দেখিয়েছে যে, সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে তুলা চাষের পদ্ধতি কতটা সাফল্যমন্ডিত হতে পারে। অথচ, এই মহারাষ্ট্র এক সময়ে কৃত্রিম রাসায়নিক ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ তুলা উৎপাদন করত। কিষান মেহতা নামক জনৈক ব্যক্তির মৌলিক এবং অসামান্য উদ্যোগে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে তুলা চাষ করে বিপুল পরিমাণ লাভের মুখ দেখতে পেয়েছিল মহারাষ্ট্র। অতি সম্প্রতি, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা জৈব চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প বেছে নিয়েছে।কারণ, জৈব পণ্যের চাহিদা ক্রমবর্ধমান এবং এর বাজার বাস্তবিক অর্থেই বিশ্বব্যাপী। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট চাষীরা জৈব পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদন করেছেনএবং তা বাজারজাত করার ব্যবস্থা করেছে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা। এই সংস্থাগুলি কৃষকের থেকেই সরাসরি জৈব উৎপাদন কিনে নেওয়ার ফলে অবধারিতভাবেই কৃষককে জৈব উৎপাদন বিক্রির চিন্তা আর করতে হচ্ছে না, বরং তারা অনেক সহজে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছে। আর কেবলমাত্র, সব্জি র ক্ষেত্রে নয়, বরং, মাছ-মাংস-ডিম উৎপাদন এর ক্ষেত্রেও জৈব চাষ আরও ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে ফেলেছে। বলাই বাহুল্য যে, বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে ও জৈব পণ্যের চাহিদা গগনচুম্বী।
সুতরাং, এভাবেই সুস্থ-সুন্দর জীবন আর লাভজনক জীবিকার অন্যতম পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছে জৈব চাষ।