বিশ্বের ১০ তাবড় মহিলা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে জানা আছে? না থাকলে পড়তে হবে আজকের এই খবর —
আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক কিন্তু তবু নানা পরাধীনতায় নিত্য ভুগি। মহিলা আর পুরুষ হওয়ার পার্থক্যে, তৃতীয় লিঙ্গের ভেদাভেদে, শিশু – কিশোর শ্রমে, শিক্ষার অপরিপক্কতায়, জীবনধারণের ছোট বড়ো নানা ক্ষেত্রই আইন ও বে-আইনের গল্প বুনে চলে। দেশের রাজনীতির উথাল পাথাল দশা ভাবায় প্রাপ্তবয়স্ক সমস্ত সুনাগরিককেই।
রাজনীতি নাকি পাঁক কিন্তু সেই পাঁকে নেমে দেশের হিতে কাজ করার ডুব মারতে ক’জন নামি বলুন তো? আপনি, আমি ব্যস্ত ভারী ভারী পদে থাকা, ক্ষমতার শীর্ষে থাকা মানুষদের খুঁত ধরতে।সেই শীর্ষে থাকা মানুষদের মধ্যে লিঙ্গগুণে যদি সে হয় মহিলা তবে তো সকলের ললাটেই বেশ পুরু ভাঁজ পড়ে যায়।
গৃহলক্ষীকে নিজের গৃহে আবদ্ধ রাখার চেষ্টা শুধু একটা দেশে নয় তা সমগ্র বিশ্ব জুড়ে। সারা বিশ্বের শীর্ষ আসনে অধিষ্ঠিত মহিলাদের গল্পই চলুন আজ একটু নেড়ে চেড়ে দেখি।যে কোনও দেশের শীর্ষ আসন বলতে বোঝায় রাষ্ট্রপতি বা চ্যান্সেলার। কিন্তু মহিলা হয়ে শীর্ষ আসনে অধিষ্ঠিত হওয়াই কি শেষ কথা?
একেবারেই না। কর্তৃত্বের সাথে, নিজের কাজের যথাযোগ্যতা দিয়ে সেই আসনকে সম্মানিত করাও আনুসাঙ্গিক। কাজের মধ্যে দিয়ে নিজেকে অন্যদের জন্য আদর্শের স্থানে নিয়ে গেছেন বিশ্বের যে তাবড় ১০ মহিলা প্রধানমন্ত্রী তারা হলেন-
১. অ্যাঞ্জেলা মারকেল
পুরো নাম অ্যাঞ্জেলা ডরোথি মারকেল (Angela Dorothea Merkel)। জার্মান দেশের এই মহিলা রাজনীতিবিদ ‘চ্যান্সেলার অফ জার্মানি’ পদ আলো করে রয়েছেন ২০০৫ সাল থেকে। লিডার অফ দ্য অপোজিশনে ছিলেন ২০০২ থেকে ২০০৫। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই মহিলা নেত্রী লিডার অফ দ্য ক্রিশ্চান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নকে আলোকিত করেছেন। তিনিই হলেন ডেমোক্রেটিক দল থেকে হওয়া প্রথম মহিলা চ্যান্সেলার।
শুধুমাত্র ওই দেশের নয় সমগ্র ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের “ডি ফ্যাক্টো” লিডার হিসেবে অভিহিত করা হয় অ্যাঞ্জেলা মারকেলকে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মহিলা হিসেবেও তাঁর নামই উঠে আসে। সিরিয়ার পরিযায়ী (মাইগ্রেন্ট) অধিবাসীদের জন্য জার্মানের দরজা আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়ার কারণে ২০১৭ সালে টাইমস এর “পারসেন অফ দ্য ইয়ার” উপাধি পান অ্যাঞ্জেলা মারকেল।
২. আন সান সু চি
মায়ানমারের নিবাসী এই মহিলা রাজনীতিবিদ তাঁর কেরিয়ারের পুরো সময়টাই ব্যয় করেছেন দেশের মানুষের হিতের জন্য। ১৯৯১ সালে তাঁর লেখা “ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার (‘Freedom from Fear’ https://en.wikipedia.org/wiki/Freedom_from_Fear_(Aung_San_Suu_Kyi))” বইয়ের জন্য তিনি “নোবেল শান্তি” পুরষ্কারে সম্মানিত হন। একাধারে তিনি বার্মী রাজনীতিবিদ, ডিপ্লোম্যাট ও লেখিকা। আন সান সু চি (Aung San Suu Kyi) মায়ানমারের প্রথম মহিলা স্টেট কাউন্সিলার অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী।
ন্যাশানাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি দলকে তিনি বহু বছর নেতৃত্বও দিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির দ্বারা সু চি ভীষণভাবে প্রভাবিত। রাজনীতিতে যোগ দিয়েই তিনি মায়ানমারে ১৯৮৮ সালে ন্যাশানাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি দলের প্রতিষ্ঠা করেন এবং রাষ্ট্র বিরোধী কাজের অভিযোগে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। প্রায় ১৫ বছরের ডিটেনশনের পর মিলিটারি শাসন সরিয়ে মায়ানমারে ডেমোক্রেসি আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে সু চি-কে পুনরায় কাউন্সিলার হিসেবে দেখা যায়। সম্পূর্ন সামরিক জুন্টা শাসন থেকে আংশিক গণতান্ত্রিক শাসনে পরিবর্তিত করতে ও মহিলা কাউন্সিলার হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন সু চি।
৩.মিশেল ব্যাচলেট
মিশেল ব্যাচলেট (Verónica Michelle Bachelet Jeria) ছিলেন চিলির রাষ্ট্রপতি এবং বর্তমান মানবাধিকার হাই কমিশন। তিনিই চিলির প্রথম মহিলা “কমান্ডার ইন চিফ”। তাঁর রাজনীতিতে আসা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে ধরা যায় কারণ তাঁর রাজনীতিতে আসার পরেই তাঁকে ও তাঁর বাবাকে অগাস্তো পিনোচেতের (Augusto Pinochet) ডিক্টোরিয়াল শাসনকালে অত্যাচার ও নির্বাসন দেওয়া হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে আসল অর্থে স্বাধীন সূর্য দেখেন মিশেল ব্যাচলেট ও চিলিবাসী। ২০০৮ সালে গ্লোবাল ইকোনমি নিয়ে তাঁর কাজ বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়। তিনি শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ হিসেবেই নয়, মহিলা ‘পেডিয়াট্রিশিয়ান’ হিসেবেও বেশ উল্লেখ্য।
৪.এলেন জনসন সারলিফ
এলেন জনসন সারলিফ (Ellen Johnson Sirleaf) হলেন আফ্রিকা মহাদেশের লাইবেরিয়ার ২৪তম ও প্রথম নির্বাচিত মহিলা রাষ্ট্রপতি। ১৯৭২ সালে তিনি তাঁর রাজনীতির জীবনে পা রাখেন। শুরুতেই তাঁর বার্তা ছিল তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, তারপর ট্রেসারি বিভাগ হয়ে তিনি মহিলা অর্থমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেন। ৩০ বছর তাঁকে রাজনীতি থেকে ব্যান করা হয়।২০০৬ সালে তিনি আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয় লাভ করেন এবং ২০১১ সালের পুনর্নির্বাচনেও তিনিই আবার ফিরে আসেন রাষ্ট্রপতি হয়ে। তাঁর রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোট সময়সীমা ছিল ২০০৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত। ২০১১ সালে এলেন জনসন সারলিফ ‘নোবেল শান্তি’ পুরস্কার পান। পুরষ্কারটি মহিলাদের সুরক্ষা, অধিকার ও সংগ্রামের জন্য তিনি, লেমাহ গোয়ি (Leymah Gbowee) ও তাওয়াক্কুল কারমানের (Tawakkul Karman) সাথে যৌথভাবে পান।
৫.হেলে থরনিং স্মিদ
ডেনমার্কের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের লিডার হলেন হেলে থরনিং স্মিদ (Helle Thorning-Schmidt)। তাঁর সময়কালে ইমিগ্রেশন আইন নিয়ে তিনি যথেষ্ট কাজ করেছেন। রাষ্ট্রপতি পদ হারানোর পরেও তিনি মানুষের হিতের জন্য কাজ চালিয়ে যান। দেশের উন্নতির উদ্দেশ্যে ও শিশু অধিকার, সুরক্ষার জন্য বে-সরকারি সংগঠনের মুখ্য আধিকারিক রূপে দায়িত্বভার নেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণসভার একটি অনুষ্ঠানে হেলে থরনিং স্মিদ, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের একটি সেলফি বেশ কিছু সময় ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার শীর্ষে ছিল।
৬.পার্ক জেন-হে
পার্ক জেন-হে (Park Geun-hye) দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি। ফরবেস (http://www.forbes.com/profile/park-geun-hye/) এর সবথেকে ক্ষমতাশালী মহিলাদের তালিকায় ১১তম স্থান অধিকার করেছেন পার্ক জেন-হে। তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বকালে সর্বাপেক্ষা উল্লেখ্য কাজ ছিল কানাডার সাথে বিনা শুল্কের ব্যাবসা কারবার শুরু করা। যা শুধুমাত্র কানাডা আর দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে নয় কানাডা ও এশীয় দেশগুলির মধ্যেও এটি ছিল প্রথম বাণিজ্যিক সম্পর্ক।
৭.জাই আই-জুয়েন
তাইওয়ানের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাই আই-জুয়েন (Tsai Ing-Wen) ২০১৬ সালে শপথ নেন। শুধু মহিলা হিসেবেই নয় রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিপুল ভোটে ( প্রায় দ্বিগুণ) হারিয়ে জয়লাভ করেন। তাঁর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় তিনি অরাজনৈতিক, অত্যন্ত গরিব একটি পরিবার থেকে এসেছেন। প্রো-এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর মহিলা জাই আই-জুয়েন। বিশ্বের ক্ষমতাশালী মহিলাদের তালিকায় ফরবেস (http://www.forbes.com/profile/park-geun-hye/) মতে তাঁর স্থান ১৭।
৮.ডালিয়া গ্রাইবসকেট
তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে “আয়রন লেডি”। ২০০৯ সালে লিউথানিয়ার প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ডালিয়া গ্রাইবসকেট (Dalia Grybauskaitė)। প্রথম দ্বি- নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তিনিই আসেন ২০১৪ সালে। ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারের বিরুদ্ধে তিনি রোধকের কাজ করেন। রাশিয়া প্রতিবেশী দেশ হলেও তিনি দমে যান নি। তাঁর এই অনমনীয়, সংসক্ত ব্যাক্তিত্বের জন্য তিনি তাঁর বেড়ে ওঠাকেই ধন্যবাদ জানান।
৯.শেখ হাসিনা ওয়াজেদ
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হলেন শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। ১৯৬০ সালের পর হাসিনা রাজনীতিতে আসেন।২০০৯ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। মানবাধিকার, গণতন্ত্রের সাপেক্ষে ও মিলিটারি শাসনের হিংস্রতার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা ওয়াজেদের কাজ নজর কেড়েছে সমগ্র বিশ্বের। পাশাপাশি দেশের অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর প্রতিক্রিয়া সমালোচিতও হয়েছে।
১০.ইন্দিরা গান্ধী
ভারতবর্ষের তৃতীয় ও প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হলেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনি ছিলেন তাঁর বাবা জহরলাল নেহেরুর পরে সবথেকে বেশি সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসনে থাকা ব্যাক্তি (১৯৬৬-৭৭ ও ১৯৮০-৮৪)। শুধুমাত্র দেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ তথা স্বরাষ্ট্রের হিতের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। ১৯৯৯ সালে বি.বি.সি এর অনলাইন পোল থেকে ইন্দিরা গান্ধীকে “উইম্যান অফ দ্য মিলেনিয়াম” নামে আখ্যা দেওয়া হয়।
এই দশজন হল অসংখ্য তারার মাঝে গুটিকয়েক। সারা পৃথিবী জুড়ে এমন অনেক মহিলা আছে যারা নিজেদের ক্ষমতায় পদচিহ্ন রেখেছেন। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই রয়েছে আরও কত তাবড় তাবড় মহিলা, যেমনঃ এরনা সলবার্গ, আমিনা গারিব-ফাকিম, বিটা সাইদলো, সারা কুগুগেমালদিলা, ক্রিশ্চিয়ানা ফারনান্ডেজ দে ক্রিচনার, থেরেসা মে প্রভৃতি। এরকম আরও খবরের জন্য পড়তে থাকুন বাংলা খবর।