শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের বিগ বাজেট বাংলা ছবি ‘গোলন্দাজ’ আসতে চলেছে এবছরই। লকডাউন শুরুর আগেই বেশিরভাগ অংশের শুটিং শেষ করেছিলেন দেব। তবে অতিমারির জেরে পরবর্তী কাজ থমকে ছিল। প্রায় আট মাস কাজ বন্ধ থাকার পর আবার বছরের শেষ থেকে দ্বিতীয় পর্বের শুটিং শুরু হয়। সতর্কতা মেনেই ছবির কাজ এখন প্রায় শেষের মুখে। আগামী দুমাসের মধ্যেই বিপুল সমারোহে প্রেক্ষাগৃহে রিলিজ হবে গোলন্দাজ।
শ্রীকান্ত মেহেতা ও মহেন্দ্র সোনি প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রটিতে ভারতীয় ফুটবলের জনক নগেন্দ্রনাথ সর্বাধিকারীর জীবনকাহিনী বর্ণিত হয়েছে। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন দেব।
2020 সালের গোড়ার দিকে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ভূমিকায় দেবের চেহারা প্রকাশ হতেই দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়েছিল । পরনে সাদা পাঞ্জাবি, গায়ে জড়ানো শাল। পেতে আঁচড়ানো চুল ও গোঁফের পারিপাট্যে উনিশ শতকের ছোঁয়া। ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতের রাজধানী তখন কলকাতা। নবজাগরণের আলোকে উদ্ভাসিত বাঙালির আত্মপ্রকাশ তখন সর্বভারতীয় গৌরব হিসেবে গণ্য হতো। শুধুমাত্র বাঙালির কৃতিত্বই একটা বৃহৎ সময় জুড়ে ভারতবর্ষকে এগিয়ে নিয়ে গেছে তা মানুষ আজ ভুলতে বসেছে। ভারতীয় গৌরবের ইতিহাসের সঙ্গে বাঙালির কৃতিত্বের যোগ খুঁজতে মানুষকে আজ বেগ পেতে হয়। এই সময়ে দাঁড়িয়ে গোলন্দাজ ছবিটি ভারতীয় ফুটবলের সূচনায় বাংলার একটি গৌরবময় অধ্যায়কে মনে করিয়ে দেয়।
ভারতীয় ফুটবলের জনক নগেন্দ্রপ্রসাদের সর্বাধিকারীর জীবন ফুটিয়ে তোলা গোটা টিমের কাছেই একটা চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছেন দেব। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও সকাল-বিকেল পায়ে ফুটবল নিয়ে মাঠে ঘাম ঝরিয়েছেন তিনি। দক্ষতা বাড়াতে ভাইচুং ভুটিয়ার কাছ থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। গায়ের রঙে সাদৃশ্য আনার জন্য ‘ট্যানড’ হয়েছেন। চরিত্রের প্রয়োজনে কুস্তিও শিখেছেন দেব। আর হ্যাঁ, খালি পায়েও ফুটবল খেলা প্র্যাকটিস করেছেন দেব।
সময়টা উনিশ শতকের গোড়ার দিক । ময়দানে ইংরেজ ফৌজ দের ফুটবল খেলা দেখে আকৃষ্ট হয়েছিল ১0 বছরের নগেন্দ্র। সে ছিল জমিদার বাড়ির ছেলে ।দেবের মেক-আপেও সেই জমিদারী বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। রেফারেন্স হিসেবে ধ্রুবর কাছে যদিও নগেন্দ্রপ্রসাদের কম বয়সের একটা ছবি রয়েছে, তবে পিরিয়ডিক ড্রামায় সেরকম চেহারা-লুক জীবন্ত করে তোলা চারটিখানি কথা নয়! শরীরী ভাষা আয়ত্ত করার জন্য অবশ্য দেবকে বেশ কয়েকটা ওয়ার্কশপও করতে হয়েছে। কোনওদিন ফুটবল খেলেননি, অথচ ভারতীয় ফুটবলের জনকের ভূমিকায় অভিনয় করবেন। এতকিছু একসঙ্গে কীভাবে সামাল দিলেন দেব? তিনি জানিয়েছেন রিল আর রিয়েলিটি এখন তাঁর কাছে এক। অর্থাৎ, ক্যামেরার বাইরেও নগেন্দ্রর জীবনই অতিবাহিত করছেন যেন। এমন একজন যুগ নির্দেশকারী ব্যক্তিত্বের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে যা কিছু করা যায় সবটুকুই দেব করছেন বলেই সূত্রের খবর।
একে বাংলার ফুটবলের ইতিহাস তায় অভিনয় করছেন দেব, গোলন্দাজের প্রতি দর্শকদের একটা আলাদা আগ্রহ তো থাকবেই । দেবের শেয়ার করা ছবি থেকেই জানা যায় গত বছরের শেষ থেকে ময়দানে আবার ফিরেছে গোলন্দাজ টিম । প্রথমে দেবের পায়ে চোট তারপরে সারতে না সারতেই করোনা, সবমিলিয়ে গত বছর বেশ কয়েক মাস বন্ধ রাখতে হয়েছিল গোলন্দাজ এর কাজ। এরপর আবার মাঠে নেমে জোর কদমে চলছে ফুটবল খেলা ।ক্রীড়া সাংবাদিক দুলাল দে-র সঙ্গে জুটি বেঁধে এই ছবির চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়।
গোলন্দাজে ইশা সাহাকে দেখা যাবে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর স্ত্রী কমলিনীর ভূমিক়ায়।শোভাবাজারের রানি কমলিনী ছিলেন নগেন্দ্রপ্রসাদের সবচেয়ে বড় ভরসা। দেবের অনস্ক্রিন বাবা, সূর্য কুমার সর্বাধিকারীর ভূমিকায় থাকবেন শ্রীকান্ত আচার্য। অন্যদিকে ইন্দ্রাশিস আচার্যর দেখা মিলবে জিতেন্দ্রর চরিত্রে। নগেন্দ্র প্রসাদের ভাই তথা বন্ধু বিনোদের চরিত্রে অভিনয় করছেন জন ভট্টাচার্য। এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ভার্গবের চরিত্রে দেখা যাবে অনির্বান ভট্টাচার্যকে।
২০১৭-র ডিসেম্বরে মুক্তি পেয়েছিল প্রযোজক সংস্থা এসভিএফের ব্যানারে দেবের অভিনীত ‘আমাজন অভিযান’। তিন বছরেরও বেশি সময় পর আবার একবার এসভিএফের ছবিতে দেব। গোলন্দাজ ছাড়াও দেবের হাতে রয়েছে প্রথম বাংলাদেশি প্রোজেক্ট ‘কম্যান্ডো’ এবং নিজের প্রযোজনা সংস্থার ‘কিসমিস’। টনিকের শ্যুটিং আগেই শেষ করেছেন দেব, তবে কবে মুক্তি পাবে এই ছবি তা স্পষ্ট নয়। করোনাকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়েছে প্রযোজক দেবের হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী মুক্তির তারিখও। আপাতত অপেক্ষায় উন্মুখ ফুটবলপ্রেমী দেবের ভক্তরা, কবে মুক্তি পাবে গোলন্দাজ?