শুধু মাত্র মনের জোর আর নিজের উপর বিশ্বাস, এইটুকুই সম্বল ছিল রাজস্থানের সোনালের। বাকি পথটুকু নিজে থেকেই তৈরি হয়ে গেছে তাঁর সামনে। চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে সোনাল শর্মা, যে গোটা দেশে তাঁকে নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। তাঁর এই কঠিন জীবন সংগ্রামের কাহিনী নিঃসন্দেহে দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজস্থানের উদয়পুরের একজন সামান্য দুধ বিক্রেতার মেয়ে সোনাল শর্মা। সংসারে নিত্য অভাব লেগেই থাকে। তাঁর গরীব বাবা কোনোদিন মেয়ের পড়াশোনার জন্য টিউশনির ব্যবস্থা করতে পারেন নি। কিন্তু অভাব সোনালকে কখনো হাল ছাড়তে শেখায় নি। আর তাই আজ সে হতে চলেছে রাজস্থানের আদালতের বিচারক। জীবনে সফল হওয়ার অদম্য ইচ্ছের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে সমস্ত দারিদ্র্য।
সূত্রের খবরে জানা গেছে, রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিসের (RJS) পরীক্ষা পাশ করেছেন সোনাল শর্মা।শুধু তাই নয়, সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএ (BA) , এলএলবি (LLB) এবং এলএলএমের (LLM) আইনি পরীক্ষা গুলিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি।সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী সোনাল শর্মাকে শীঘ্রই রাজস্থানের একটি সেশন আদালতে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ করা হবে।
দুধ বিক্রেতার মেয়ে সোনালের পড়াশোনার তাগিদ ছিল চোখে পড়ার মতো। কঠিন আইনি পরীক্ষার জন্য যে সমস্ত দামী বই দরকার হত, তা জোগাড় করার সামর্থ্য ছিল না তাঁর। তাই সে পড়াশোনা করার জন্য বেছে নিয়েছিল অন্য রাস্তা। রোজ কলেজ শুরু হওয়ার আগেই সাইকেল চালিয়ে সে পৌঁছে যেত কলেজের লাইব্রেরিতে। কলেজের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সেখানে বসেই পড়াশোনা করতো।
পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও কখনো গাফিলতি করে নি সোনাল শর্মা। রোজ সন্ধেবেলা গোয়ালের গোরুদের দেখাশোনা করার ভার থাকত তাঁর উপর। অগত্যা গোয়ালে গোরুদের মাঝে বসেই চলত পড়াশোনা। মেয়ের পড়াশোনা চালানোর জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লোনও নিয়েছিলেন সোনাল শর্মার বাবা মা। তাঁর কথায়, “বেশিরভাগ সময়েই আমার চটিতে গোবর লেগে থাকতো। কলেজে আমি নিজের পরিচয় দিতে লজ্জা পেতাম। কিন্তু এখন আমি আমার মা বাবাকে নিয়ে গর্বিত।” মেয়ের সাফল্যে গর্বিত তাঁর বাবা মাও। উদয়পুরের বাড়িতে এখন যেন বাঁধ ভাঙা খুশির জোয়ার। সোনাল শর্মার মতো মেয়েই আজকের ভারতে অনেক বেশি করে কাম্য।